জাহিদ জগৎ
জাহিদ জগতের ৪ কবিতা
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
নটির পোলা
এই যে পাথরের চাঁই পিঠে
তোমার ওজনের সামনে হাঁটু গেড়ে
ধুতুরা আর মাকাল ফুল হয়ে তাকিয়ে আছি—
তোমার কি মনে হয়!
রাস্তাহীন? নাকি সুরের আশায় তোমার মতো ঢোল বাদক
আর সামান্য কর্নেটে আমার হৃদয় বাধা আছে?
তুমি সামান্য, ছোটলোক। যে আমার ঘাড়ে তুলে দিয়েছে সারে গামা পা
আমি জানি তোমার জিহবা কেটে নেওয়ার পর
আর আমার কণ্ঠ থেকে খুলে নেওয়া মতিহার
সমগ্রই পদজানু হয়ে অপেক্ষা করবে—
এই তো এলো ভাদ্র-আশ্বিন, কে কিভাবে বাসা বাঁধবে? বলো, কোথায়?
তুমি জানো না, যারা কণ্ঠে আহ উহ করে
জীবনের রাস্তা মাপে, তারা সবাই নটির পুলা, সামান্য ইতর
তাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হতে পারে পুরাদহ
জীবনের রাস্তায় যারা শাস্ত্রীয়
তারা খুব বড়জোর নিজের হাঁটু দেখতে পারে। বুকে তাদের অস্ত্বিত্ব শূন্য
এমনকি বিটোফেন, মোজার্ট, আলাউদ্দিন, আজগর আলী
তোমার কি মনে হয় না, জাকির হোসেন কিংবা হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া
এত গরিব অসহায় যে, একই পথে ঘুরে ঘুরে তোমার আমার স্রেফ অতীত বর্ণনা করে গেছে নিজের কাছে?
আমরা ওইসব ফাত্রামি ছেড়ে, আমাদের নেবুতলায় মাদুর পেতে বসে ছিলাম
যেখানে তোমার হাত আর আমার কপাল
পরস্পরের ছায়াকে আড়াল করে পুড়িয়েছিলাম আমাদের বুক
সেইখানে, ইস্রাফিল আর কত জোড়েই বা ফুঁতকার করতে পারে বলো!
ডরাইও না সোনা— শুধু হাতটা ধরো।
ভোরের পাখি
ক্ষম হে প্রাণনাথ
অনিত্য পাপীর
এ দ্বীন নিত্য তুমি
সারথি তিমির
অন্ধ পামর রচি
চিহ্ন চরাচর
বৃথা হুংকার করি
আপনারি ডর
ডুরি ছিঁড়ি মরি পথে
ঘুরি ডানে বায়
পরাণের গহিনে যারে
আপনি ধরা যায়
ধরি নাই তবু তারে
ভোরের শিশির
আপনার আঁধারে যে
রয়েছে স্থির
আলোর গিলাফে তারে
রাখিয়া ঢাকি
বৃথা আজান ফুৎকারে
ভোরের পাখি...
কলির ধর্ম
ইচ্ছা যখন ইচ্ছাগুলো
বিরুদ্ধতায় বন্দি হলো
ফ্যাসিবাদের ফুল ফুটিলো
রানীমার কথায়
কলির ধর্ম উদয় হলো সোনার বাংলায়
রানীর কথায় ফোটে কলি
মধু খায় সরকারি অলি
ভোটের নামে শ্রীমাতা
হনুমান নাচায়
কলির ধর্ম উদয় হলো সোনার বাংলায়
লোভি কামী রাজাকারে
দিনে রাইতে জিকির করে
জনগণের রক্ত দেব
রানীমা তোর পায়
কলির ধর্ম উদয় হলো সোনার বাংলায়
এইতো জাহান্নাম
প্রেম ও কলঙ্ক
দুয়ারে বসা মেম্বার আর তোমার মলিন আকাঙ্ক্ষা
কারোনাকালের মতো—
চাওয়া নেই তবু— মরণ
তোমার আমার দিকে একই ধনুকে বসে
একে অপরকে গালি দিচ্ছে— শূয়োরের বাচ্চা
মাঝখানে প্রচুর কেওয়াজ
তোমাকে ছেড়ে যাব আজকে রাতে—
তোমার মেহেদি, চোখের জল সমস্তই
শেওরাপাড়ার রাস্তা পার হবার মতো
যার আগে আর পরে নেই—
তার হয়ে এই শহরের ফুটপাতে কেন কাঁদো মা?
তুমি জানো না, আমি জন্মেছিলাম একুশের বইমেলায়—
দুই হাজার চব্বিশ সালে— একদল কুত্তার বাচ্চার সাথে
আর শূয়োর ছানা, যারা
নিজেদের বৈধ্যতা নিয়ে কু কু স্বরে কর গুণে মরে যাচ্ছিল নিজেদের গলার কাছে
আর একদল, যারা মুখ হারিয়ে ফেলেছিল পাউডারে,
ভাষা হারিয়েছিল মহুয়া মেকআপে আর আমি তোমার
বিস্মিত যন্ত্রণা হয়ে বারবার কেড়ে নিচ্ছিলাম ঘুম!
এখন শিমুলের দিন। অথচ আমাদের মাদার, দমের মাদার
যে ফুল ফোটায়
লাল, রক্তাভ— প্রাণ উসকে পড়ে
যেখানে চোখ রাখলে ভূমধ্যসাগর হয়ে ওঠে নতজানু
সেইখানে আমাদের মা আর আব্বা অপেক্ষা করছে
যেন আমি আর একবার জন্ম নিই—
মা অথবা তোমার কোলে
যাকে আমি ভালোবাসি...