জাসমিনা খাতুন

জাসমিনা খাতুন

জাসমিনা খাতুনের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫

কোথায় সেই মেয়েটি

রাত নেমেছে শহরের বুকে, নিস্তব্ধ ঘুমন্ত রাস্তার ফাঁকে—
লাল, নীল, সাদা হেলমেটে ঢাকা শ্রমের দৃশ্য,
মাঝখানে সে— এক যুবক, ট্র্যাকে ঝুঁকে,
তারার মতো জ্বলছে তার চোখে দায়িত্বের দীপ্তি।
প্রতিটি তারের সংযোগে সতর্কতার স্পর্শ,
প্রতিটি নির্দেশনায় প্রতিশ্রুতির ছোঁয়া—
পরদিন সকালে শহর যেন হাসে নির্বিঘ্নে,
তারই ঘামে ভিজে থাকা নিঃশব্দ প্রার্থনায়।

তবু কোথাও এক অদৃশ্য রেখায় আঁকা থাকে প্রেম,
মেট্রো রেলের হালকা আলো জ্বলে রাতে,
আর সে চোখ তুলে একবার ভাবে—
কোথায় সেই মেয়েটি, যার অপেক্ষা অদৃশ্য ছায়ার মতো লেগে থাকে হৃদয়ে?

হে জ্যোতির্ময়

আলোর খোঁজে—
একটু আলোর মুখ দেখব বলে,
শুধু তোমার শ্বাসের উষ্ণতায় ভাসব বলে,
শ্বাসরুদ্ধ এই অনুভূতিতে ভালোবাসার মৃদু আলো খুঁজি—
তুমি কি জানো, মর্ত্যলোকের গর্ভের অন্ধকারে তুমিই সেই জ্যোতি?

হৃদপিণ্ডের প্রথম কাঁপনে লেগে যায় তোমার স্পর্শের ঢেউ,
পুষ্টির লড়াই নয় শুধু, তোমার দিকে পৌঁছানোর আকুলতা—
তুমি কষ্ট পেলে, আমি যেন নিঃশব্দে ফেটে পড়ি,
তোমার দুঃখে আমার ক্ষুদ্র হৃদয় ছেয়ে যায় চাপা শোকে।

আমার প্রতিটি নড়াচড়া, প্রতিটি ঘোরাফেরা,
তোমাকে ছুঁতে চাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা—
কিন্তু এ দেওয়াল, এ সীমা, এ বন্ধন!
শ্বাস নিতে গিয়ে কখনও গলা বুঁজে আসে, আলো-অন্ধকারের অস্পষ্ট ইশারায়
তোমার মুখচ্ছবি কেবল কল্পনায় জ্বলে ওঠে।

এই স্বার্থপর মৃত্যুলোকের গর্ভে কষ্টে আছি,
তবুও তোমার প্রেমের টানে
অতল গহ্বর থেকে দড়ি বেয়ে উঠছি ধীরে ধীরে—
হে জ্যোতির্ময়, হে প্রিয়, সত্যিই কি তুমি আছো ওপারে?

তবে বলো—
আমার এই দড়িতে সুতোর বদলে এত কাঁটা কেন?
ভালোবাসা কি কেবলই যন্ত্রণার আবরণে ঢাকা?
তবুও জানো, প্রিয়,
কাঁটার আঘাত সয়ে এগিয়ে যাই তোমার আলোয় মিশতে,
আমার ক্ষুদ্র প্রাণ আজ প্রেমের আকাশে উড়তে চাই,
তোমার বুকে আশ্রয় খুঁজে পেতে চাই—
কারণ তুমি— তুমি এক অমোঘ ডাক,
যার জন্য আমি জন্মের আগেই প্রেমে হেরে যাই। আর এই প্রেমের কারণে আবার ফিরে-ফিরে আসি জন্মে।

সেই মেয়ে যে গলিপথ জানে

হৃদয়ের গোপন গলি চেনা মেয়ে, শোনো— ভালোবাসা নিছক প্রাপ্তি নয়!
আমি ভেঙে ফেলি, আমি নতুন করে গড়ে তুলি, এবং আবার ভেঙে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হই; যে ভালোবাসা আমাকে শূন্য করেছে, আমি এখন শুধু অবহেলা পছন্দ করি।
অনুভবের রেখা এঁকেছিলে যখন মানচিত্রের পাতায়, মনের পাতায় ভরেছিলে ‘আমার’ নামের অসংখ্য শপথ,
তবে কি তোমার কাছে ভালোবাসা ছিল আত্মভোগের সিঁড়ি?

আমি যেন মরুভূমির বালির মতো— একবার তুমি দাগ কেটেছিলে, আসলেই, তবু ম্লান হয়ে যাইনি, বুঝেছ?
আজ তোমার নামের পাশে লাল দাগ মারছি; যে পথে তুমি হেঁটেছ একদিন, আমি বসে থাকতাম অবিরাম অপেক্ষাতে,
সেই দরজা এখন বন্ধ থাকে— আর কড়া নাড়ে! এই ক্লোজার মধ্যে আমি সম্পূর্ণ।

ভালোবাসা মানে শূন্য হাত প্রসারিত করা নয়; ভালোবাসা মানে বুকের ভিতর আগুন জ্বালানো,
একটি আগুন যা আলো দেখাবে, তোমার মতো মিথ্যা কাজে জ্বলবে না।
তুমি কি ভেবেছিলে আমি ভেঙে যাব? হ্যাঁ, আমি ভেঙে ফেলছি,
তবে এবার টুকরো টুকরো কাঁটার মতো আপনার মনকে বিদ্ধ করবে।

ভালোবাসা চোখের জলে ডুবে যাওয়ার নাম নয়; প্রতিবাদ— নিজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা!
ও প্রিয়, সাবেক প্রেম, তুমি সুখে থাকো,
আর আমি? ভাঙার আনন্দে গড়বো নতুন এক ‘আমি’—
যেখানে তোমাকে হারানোর বেদনা. সেখানে আমার মুক্তির বিজয়ের গান গাইবে!

প্রেম ফুটবে আবার নতুন সুরের ঢেউয়ে,
একবার নয়, যতবার ভাঙবো, ততবারই জেগে উঠবো নতুন এক ভোরে।

প্রতিবার নতুন নতুন স্বপ্নে মোড়ানো,
ধ্বংসস্তূপের মাঝে খুঁজে পাবো সৃষ্টির নিস্পর্শী আলো।

আমার চোখে ভালোবাসা মানে বেঈমানকে থামিয়ে রাখা নয়—
ভালোবাসা মানে নিজের মাঝে হাজার বসন্তকে জাগিয়ে তোলা!

তুমি কি ভেবেছিলে এটাই শেষ? আমি শুধু নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করেছি!
আমি নিজেকে প্রতিজ্ঞা করেছি—
যে আমাকে নিখুঁতভাবে ভালোবাসবে, আমি তাকে নিখুঁতভাবে ধরে রাখবো—
কিন্তু তুমি কি কখনো জানো কিভাবে ধরে রাখতে হয়?

অভিমান ভেঙে যাবে, ভালোবাসার আসল স্বাদ তুমি খুঁজে পাবে না।
যখন তুমি আমার পবিত্র ভালোবাসাকে উৎসর্গ করেছ,
লেখা হলো নতুন এক ইতিহাস—
ছলনাময়ীর ভালোবাসার শিকারি তুমি।

তুমি বলতে পারো— ভালোবাসায় কোনো অভিযোগের স্থান নেই,
কিন্তু আমি বলি—আমি প্রথমে নিজেকে ভালোবাসি!
যে আমার আত্মসম্মান রক্ষা করতে পারে না,
তারা কিভাবে আমার ভালবাসার যোগ্য?

এবং আমি ভালোবাসা ছাড়া বন্ধুত্ব প্রত্যাখ্যান করি।
সেদিন তুমি ভালবাসার নিমন্ত্রণে হাত বাড়িয়েছিলে,
আমি বন্ধু হতে চেয়েছিলাম; তুমি প্রেমিক চেয়েছিলে।
এখন তুমি বন্ধুত্ব খুঁজছ?
মুক্ত আকাশের নিচে মুক্ত হতে চাই।