জার্সির সাতকাহন

মৃদুল মাহবুব

প্রকাশিত : এপ্রিল ৩০, ২০১৯

একটা জার্সি মানে শুধু রঙ না। জার্সি মানে প্রথমত তাকে টেকনিক্যালি পার্ফমিং হতে হবে। যতটা পারা যায় জার্সিটা হালকা করতে হয়। পরে আরাম লাগা ও ফিটিংসের ব্যাপার আছে। ঘাম যাতে খুব দ্রুত বের হতে পারে দেহ থেকে তার ব্যবস্থা রাখা চাই। ওয়াশের পর রং বদলে গেলে বা ব্লিডিং হলে মুশকিল। খোলোয়াড়ের পোশাকে ঘামের গন্ধ থাকলে চলবে না। ইনারগুলোর ইলংগেশন ম্যাক্সিমাম হওয়া চাই। জার্সিতে শুধু পতাকার রঙ থাকা সব না। এটা প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং করার মতো বিষয়। দ্বিতীয়ত নান্দনিকও হওয়া চাই। তৃতীয়ত এর জিজাইন ও রং একই পক্ষের খেলোয়াড়দের মানসিক আস্থা অর্জনের সাইন হতে হয়। এবং শেষতক প্রতিপক্ষ দলের উপর মেন্টালি ও ফিজিক্যালি প্রেসার তৈরি করতে পারে এমনও হওয়া চাই। যে সমস্ত খেলায় প্লেয়ার প্রদর্শিত হলে প্রতিপক্ষের উপর চাপ বাড়ে তেমন খেলার জার্সি রং হাই ভিজিবল হতে হয়। যেমন ক্রিকেট, ফুটবল।

ঠিক এর উল্টো স্ট্রাটেজিও চলতে পারে দলের উপর নির্ভর করে। শক্তিশালী দলের জার্সি সাধারণত কটকটে হয়। অধিক দৃশ্যমানতার ভেতর দিয়ে প্রতিপক্ষকে দমন করার মানসিক গেম। আপনি পুলিশ না হয়ে পুলিশের পোশাক পরে রাস্তায় নামেন। দেখবেন প্রদর্শনের একটা আলাদা পাওয়ার আছে। সেনাদের মতো চুল ছাটলে, একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা ও দেহ কাঠামো থাকলে সেনার গুরুত্ব ও সন্মান পাবেন কোথাও কোথাও। ফলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি জন্য আয়োজকদের কাছ থেকে জার্সির ডিজাইন অ্যাপ্রুভাল নিতে হয় সব সময় বড় বড় খেলার ইভেন্টে। এমন কোন জার্সি তারা ছাড় দেয় না যা সাধারণত প্রতিপক্ষকে একটু পিছিয়ে দিতে পারে। জনমনে জঙ্গি ভাব আনতে পারে। তারপরও খেলার জার্সি ডিজাইনারা এসব সীমার ভেতর দিয়ে একটা যুদ্ধবস্ত্র তৈরি করতে চায় যাতে বিরোধী দলের একটু অসুবিধা হয়। খুব সফট একটা ব্যাপার। ফুটবলে বা রাগবির জার্সি দেখবেন যুদ্ধবস্ত্রের মতো, কুল, টেকনিক্যালি পার্ফেক্ট ও নান্দনিক। ডিজাইনা ও ইঞ্জিনিয়ারা এগুলো মাথায় নেয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের জার্নি নিয়ে অত মাথাব্যথা কারো নাই মনে হয়।

২০১১ সালে বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টিমের জার্সির ডিজাইনকে টেকনিক্যালি উৎপাদন করার সাত আটজনের টিমের একজন সদস্য ছিলাম আমি। আমাদের কাজ ছিলো ডিজাইনকে এমন ভাবে তৈরি করা যাতে তা ঠিক মতো পারফর্স করতে পারে খেলোয়াড়দের দেহে। ইমরান শিয়ানের ডিজাইন ও স্কেচ দেখে সমগ্র ক্রিকেট টিমের জার্সির তৈরির দায়িত্ব ছিলো আমাদের টিমের উপর। প্রত্যেক প্লেয়ারের আলাদা আলাদা মাপ নেয়া হয়। সকল ফেব্রিককে টেকনিক্যাল করে তোলা হয়। সিলভার ফিনিশ, ১০০% কুলম্যাক্স ছিলো মেইন জার্সি। ফলে, প্লেয়ারদের গায়ে ঘাম জমার সুযোগ কম, দুর্গন্ধও হবে না। মেইন জার্সি, প্র্যাকটিস জার্সি, ট্রাউজার, ইনার, পলো শার্ট, টি শার্ট, শর্টস সকলই এর ব্যবহারিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে ডিজাইনকে প্রোডাক্টে রূপ দেওয়া হয়।

২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি জার্সি উন্মোচন হয় ঢাকা ক্লাবে। সেই অনুষ্ঠানের ছবি এটা। আমার ডান পাশে জার্সির ডিজাইনার ইমরান শিয়ার দাঁড়ানো। এবারের জার্সিতে এই সমস্ত টেকনিক্যাল বিষয় আছে কিনা সেটা ভাবছিলাম। ভালো পারফর্মেন্সের জন্য টেকনিক্যাল জার্সি জরুরি। বিসিবি বলতে পারবে এবারের জার্সি কতটা টেকনিক্যাল।

জার্সির রং নিয়ে যে বিতর্ক জাতি তুলেছে তার খুব খারাপ প্রভাাব পড়তে পারে খেলোয়াড়দের মানসিকতার উপর। পোশাকটা ইউনিটির প্রতীক। তাকে প্রশ্ন আক্রান্ত করে তোলার ফলাফল থাকা স্বাভাবিক। কী কী প্রভাব পড়তে পারে তা সাইকোলজিস্টদের কাছে শুনতে পারেন। আমাকে বেশি জিজ্ঞেস করবেন না।

লেখক: কবি