জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : নভেম্বর ১৬, ২০২৪
ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। একটি হলো জাতীয় পরিষদ (উচ্চকক্ষ) এবং অপরটি হলো জাতীয় সংসদ (নিুকক্ষ)। ‘খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন এবং কেমন সংবিধান চাই’ শিরোনামে আয়োজিত আলোচনা সভায় আজ শনিবার সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধানের খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ হবে ৩০০ আসনে প্রচলিত ভোটের পদ্ধতিতে। আর জাতীয় পরিষদের সদস্যসংখ্যা হবে ২০০। জাতীয় পরিষদের সদস্যরা জাতীয় সদস্য নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচিত হবেন। এরূপ বণ্টনের ফলে যে রাজনৈতিক দল আনুপাতিক হারে যত আসন পাবে, এর ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
জাতীয় পরিষদে সংরক্ষিত নারী কোটায় থাকবে ২৫টি আসন। আনুপাতিক হারে দলগুলো সংরক্ষিত নারী আসন পাবে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ১০ জনকে মনোনয়ন দেবেন। তারা হবেন উপজাতি, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না। এখানে নারী-পুরুষ সবাইকে সরাসরি নির্বাচন করে আসতে হবে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ১০ ভাগ নারী সদস্য মনোনয়ন দিতে হবে। সরাসরি নির্বাচন করে তাদের জাতীয় সংসদে আসতে হবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটের অর্ধেক প্রয়োগ না হলে নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারে-এমন অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।
সকাল ১০টায় সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে ‘খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন এবং কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক ও ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি সালেহ উদ্দিন খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন।
১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞরা আলোচনায় অংশ নেবেন। বৃহস্পতিবার ল রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যকরী কমিটির সভায় ‘সংবিধানের খসড়া প্রস্তাবনা’ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
বাংলাদেশের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট একটি আইনসভা থাকবে। যার উচ্চকক্ষ ‘জাতীয় পরিষদ’ ও নিুকক্ষ ‘জাতীয় সংসদ’ নামে পরিচিত হবে। জাতীয় সংসদ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ও আইনপ্রণয়ন সভা। সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা আইনসভার ওপর ন্যস্ত হবে।
খসড়ায় বলা হয়, জাতীয় পরিষদ হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ও আইনপ্রণয়ন সভা, যা অর্থনৈতিক নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা নীতি, বৈদেশিক সম্পর্কের নীতি এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিকাশে পথরেখা প্রণয়ন করবে। জাতীয় বাজেট (অর্থবিল) ছাড়া জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া আইন চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে জাতীয় পরিষদ। জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের ছয় মাস আগে জাতীয় পরিষদে প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনার পর সরকার বাজেটের খসড়া প্রণয়ন করবে। জাতীয় পরিষদের মেয়াদ হবে চার বছর। জাতীয় সংসদ গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদ গঠন সম্পন্ন করতে হবে।
জাতীয় সংসদ: প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সংসদ’ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকবে। এ সংবিধানের বিধানাবলি জাতীয় পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের ওপর ন্যস্ত হবে। একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। সদস্যরা সংসদ-সদস্য বলে অভিহিত হবে। তারা রাজনৈতিক দলের বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হতে পারবেন।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারে-এমন অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করবে-এমন সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি ছাড়া কাউকে আটক রাখা যাবে না। তবে সন্দেহের উপযুক্ত ভিত্তি থাকতে হবে। আদালতে হাজিরের সময় প্রতিবেদনে উপযুক্ত কারণগুলো উল্লেখ করতে হবে। অহেতুক হয়রানি করা যাবে না।