‘জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে ২৪ এর গণবিপ্লব’

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৫, ২০২৪

২৪ এর গণবিপ্লব জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর নগপাড়া এলাকার কমিউনিটি সেন্টারে গাজীপুর জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত দলের রোকন সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “রাজনীতিতে বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছর ইতিহাসে রাজনীতিবিদরা এ স্লোগান প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রজন্ম আর এ ব্যর্থতা দেখতে প্রস্তুত নয়।”

তিনি আরও বলেন, “তারা চায়, রাজনীতিবিদদের সফল হতেই হবে। জাতির সঙ্গে দেওয়া সমস্ত কমিটমেন্ট অবশ্যই তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য আমাদের বার্তা পরিষ্কার। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে ২৪ এর গণবিপ্লব।”

জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, “এই গণবিপ্লবের চেতনাকে পাশ কাটিয়ে আমাদের দল ও কোন দল যেন ভিন্ন পথে হাঁটার চিন্তা না করে। যারাই হাঁটবেন তাদেরকেই স্বৈরাচারের রাস্তা ধরতে হবে। আমি আমার দলকে সতর্ক করছি এবং সকল রাজনৈতিক দলকেও সতর্ক করছি।”

তিনি আরও বলেন, “জনগণের চেতনার বিপক্ষে আমরা যেন কেউ না দাঁড়াই। আমাদেরকে অবশ্যই জনগণের পক্ষে শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবি যদি থাকে সে দাবিকে পাশ কাটানোর চেষ্টা বা দুঃসাহস আমরা যেন কেউ না দেখাই। কিন্তু হ্যাঁ, যদি জনগণের মধ্য থেকে কোনো একটি বিশেষ মহল জাতিকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য, প্রতারণা করার জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসে সেই ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য।”

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা আমাদের যুবকদের হাতে কাগজ নামীয় কতগুলো সার্টিফিকেট তুলে দিতে চাই না। বরং তাদের যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে এ দুনিয়ার সঙ্গে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে যোগ্য এবং একটি মজবুত ভিত্তির ওপর, উন্নয়নের ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো দেশ হিসেবে দেখতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “যুবকদেরকে আমাদের সম্মান করতে হবে, ভালবাসতে হবে। তাদেরকে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের চাবি তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। আমরা তারুণ্যনির্ভর সমাজ দেখতে চাই। কোনো দেশ তরুণ সমাজকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে আগাতে পারে না।”

জামায়াত আমির বলেন, “জাতি ধর্ম দল মত নির্বিশেষে বাংলাদেশ আমাদের সবার। প্রিয় দেশ শান্তিতে থাকবে, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকবে, মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে, প্রতিটি নাগরিক মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বস্তিবোধ করবে। আমরা চাই দেশে প্রবাসে যারাই আছেন, তারা গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে যেন নিজের পরিচয় সানন্দে প্রকাশ করতে পারেন।”

তিনি আরও বলেন, “জামায়াতে ইসলামী এমন একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে। যে সমাজে সীমাহীন বৈষম্য থাকবে না এবং মানুষের অধিকারের প্রতি কেউ হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস দেখাবে না। যারা দেশ পরিচালনা করবে, তারা হবে নিরেট জনগণের খাদেম। যেদিন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তারা গ্রহণ করবেন, তার আগের দিন পর্যন্ত তার যে সম্পদ ছিল, দেশ পরিচালনা করে তার কার্যকাল সমাপ্ত করার পর, তিনি যখন হিসাব মিলাতে বসবেন, তখন তিনি তার সম্পদের পরিমাণ দায়িত্ব নেওয়ার আগে যা ছিল, তার চেয়ে কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সততার কষ্টিপাথরে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন।”

শফিকুর রহমান বলেন, “আর যদি সকলেই মৎস্য ব্যবসায়ী হয়ে বলে যে আমার মাছের খামার আছে, আমি এমপি হওয়ার আগে আমার দশ টাকা ছিল এখন তিনশো টাকা হয়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে সে একটা ডাকাত। আমরা ডাকাতমুক্ত সমাজ গড়তে চাই। এটি শুধু রাজনীতিবিদদের জন্য প্রযোজ্য নয়, রাষ্ট্রের যে যেখান থেকে সেবা দিবেন, তাদের সকলের জন্য একই কথা প্রযোজ্য।”

তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি জুলাই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে, আমাদের কলিজার টুকরা এই ছেলেমেয়েদের প্রধান দাবি ছিল, উই ওয়ান্ট জাস্টিস-আমরা সুবিচার চাই। সুবিচার যে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে ডাকাত ও চোরের কোনো জায়গা নেই। সেখানে সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচারের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে ঘুষের রমরমা বাণিজ্য চলবে না।”

জামায়াত আমির বলেন, “আগের সরকারের মন্ত্রীরা, এমনকি অর্থমন্ত্রী একসময় বলতো, ঘুষকে এখন ঘুষ বলা ঠিক হবে না, এটাকে স্পিড মানি বলতে হবে। তারা ঘুষকে এভাবে জাতীয়করণ করেছিলেন ঘোষণা দিয়ে। আরেকমন্ত্রী বলতেন, আমার মন্ত্রনালয়ে ঘুষ খাবেন কিন্ত একটু কম করে নিয়েন। আমরা এমন বিচিত্র সংসদ ও সরকার পেয়েছিলাম, সেই সংসদ ও সরকার জনগণের জন্য ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “সেখানে ব্যক্তি বন্দনায় নেচে গেয়ে জনগণের টাকা নষ্ট করা হতো। এক ব্যক্তির ইশারায় সবকিছু উঠতো ও বসতো। ইতিহাসে এমন দুর্ধর্ষ শাসক যারা ছিল, স্বৈরশাসক যারা ছিল, তারা বলতো আমি হচ্ছি সবচেয়ে বড় রব। তারা আল্লাহকে ভয় করে না, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষের পায়ে ধরে, হাত জোর করে মানুষের কাছে ক্ষমা চায়, কান্নাকাটি করে, চোখের পানি ফেলে, আর যখন ক্ষমতায় যায়, তখন দেশের আপামর মানুষের চোখের পানি ঝরানোর ব্যবস্থা করে। ১৫ বছর জাতি বেদনার সঙ্গে সেটাই লক্ষ্য করেছে।”

জেলা জামায়াতের আমীর ড. জাহাঙ্গির আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই রোকন সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. সফি উদ্দিন, জেলা নায়েবে আমির আব্দুল হাকিম ও মাওলানা সেফাউল হক, জেলা সহকারী সেক্রেটারি আনিসুর রহমান বিশ্বাস, মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নায়েবে আমির খায়রুল হাসান, সেক্রেটারি আবু সাইদ ফারুক, জেলা প্রচার সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।