নাসিরুদ্দিন আলবানি
জগলুল আসাদের গদ্য ‘ইসলামে সুন্নাহর মর্যাদা’
প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৮, ২০২০
নাসিরুদ্দিন আলবানির ‘ইসলামে সুন্নাহর মর্যাদা’ নামে একটি বই আছে। খুব মৌলিক কিছু বিষয় এখানে তিনি তুলে ধরেছেন হাদিসের গুরুত্ব সম্পর্কে। আমরা অনেকেই কোরআন ও হাদিসের সম্পর্ক বিষয়ে তেমন স্পষ্ট নই। আসলে কোরআন সত্যায়নকারী হাদিসের, হাদিসও সত্যায়নকারী ও ব্যাখাকারী কোরআনের। কোনও জিনিস কোরআনে নেই, তাই মানবো না— এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, কোরআনের প্রকাশ্য ওয়াহী ছাড়াও নবিজী অপ্রকাশ্য ওয়াহী পেতেন, যাকে বলে ওয়াহীয়ে খফি যা হাদিস বা সুন্নাহ নামে পরিচিত।
নবিকে আল্লাহ বিশেষভাবে দান করেছেন ‘হিকমাহ’, যা-ও অনূদিত হয় সুন্নাহ নামে। সুরা আল হাশরের ৫৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো। আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর উপর আরোপ করা হয়েছে মানুষকে হালাল ও হারাম বিষয়ে জানাবার এখতিয়ার।
সূরা আন-নহলের ৪৪ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমার প্রতি কুরাআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে।’ অর্থাৎ, কোরআনের অনেক বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয় হাদিস। কোরাআনের অনেক ‘আম’ (general) বয়ানকে ‘খাস’ (particular/specific) করে হাদিস। অনেক সাধারণ আদেশকে শর্তযুক্ত করেন নবিজীর (সা.) কওল। কুরআনে যাকিছু অস্পষ্ট আছে, তাকে স্পষ্ট করে হাদিস বা সুন্নাহ।
সূরা নিসাতে কসর নামাজের অনুমতি এসেছে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বা আশংকা থাকার শর্তে। নবিজী নিরাপদ সফরেও কসর নামাজকে মুসলিমের জন্যে আল্লাহর উপঢৌকন হিশেবে বর্ণনা করেছেন (মুসলিম শরীফ)। সূরা আল মায়িদার ৩ নং আয়াতে হারাম করা হয়েছে মৃতজন্তু, প্রবাহিত রক্ত ও শুকর খাওয়াকে। নবিজী (সা.) এই তালিকায় ব্যতিক্রম করেন মৃত মাছকে। তাছাড়া, নবিজী (সা.) হারাম করেন গৃহপালিত ঘোড়া, নখরযুক্ত চতুস্পদ প্রাণী ও সেইসব পাখি যারা পা দিয়ে ধরে ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়ে খাবার খায়, তাদেরকে, অথচ কোরআনে এগুলোর উল্লেখ নেই।
কোরআনে উল্লেখিত আছে, চুরির শাস্তি। কিন্তু কতটুকু চুরি করলে সেই শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে ইত্যাকার বিষয় আছে হাদিসে। ‘আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন তাদের ওপর, যারা ভ্রু উপড়ায়, যারা উপড়িয়ে দেয় ও উল্কি অংকন করে।’ এই হাদিস শুনে একজন মহিলা সাহাবি (রা.) নবিকে (সা.) জিজ্ঞেস করেন, কই, কোরআনে তো এমন অভিসম্পাতের কথা পাইনি! নবিজী বললেন, তুমি ভালো করে পড়লে অবশ্যই পেতে। তুমি কি কোরআনের এই আয়াত পাঠ করোনি, ‘রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ করো। আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।”
তাই, কোরআনে কোনও সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা থাকলেও হাদিসের ভাষ্যও খুঁজতে হয়, আয়াতের পূর্ণাঙ্গ তাৎপর্য অনুধাবনের জন্যে। আবার, হাদিসের সর্বাধিক অনুধাবনকারী ছিলেন সাহাবা আজমাঈন ও নববী যুগের কাছাকাছি থাকা সম্মানিত পূর্ববর্তীগণ।
আলবানির এই ছোট্ট বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী পাঠক বইটি পাঠ করে জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করবেন, এই আশা রাখি। এ লেখায় আমি শুধু বইটির একটু নির্যাস তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।
লেখক: কলামিস্ট ও শিক্ষক