‘ছোটদের পদার্থবিজ্ঞান’ থেকে একটুকরো
তাহের সরফরাজপ্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি ও কথাসাহিত্যিক আবু তাহের সরফরাজের শিশুশিক্ষার বই ‘ছোটদের পদার্থবিজ্ঞান’। বইটি মূলত ছোটদের উপযোগী পদার্থবিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠ। স্কুল-পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। বইটি প্রকাশ করেছে বিদ্যাপ্রকাশ। দাম রাখা হয়েছে ৩৩৫ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। বইমেলার প্রথম দিন থেকেই বইটি পাওয়া যাচ্ছে বিদ্যাপ্রকাশের ৫৭-৫৮-৫৯-৬০ নম্বর স্টলে। বইটি থেকে ‘অণু-পরমাণু’ অংশটি তুলে দেয়া হলো:
অণু
যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাকে অণু বলে। দুই বা তারচেয়ে বেশি মৌলিক পদার্থের পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে যৌগিক পদার্থের অণু তৈরি হয়। অণু ভাঙলে একই বা আলাদা মৌলিক পদার্থের পরমাণু পাওয়া যায়। পদার্থের ধর্ম ঠিকঠাক রেখে অণু স্বাধীনভাবে অবস্থান করে, তবে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না। রাসায়নিক বিক্রিয়া এমনই এক কারবার, যেখানে একটি বা তারচেয়ে বেশি পদার্থ নিজের ধর্ম বদলে আরেক কোনো পদার্থে নিজেকে বদলে ফ্যালে। এ কর্মটি অণুর একার কাজ নয়। তাই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়ার আগে অণুকে ভেঙে পরমাণুতে ভাগ করে নিতে হয়। অণু দুই রকম: মৌলিক অণু আর যৌগিক অণু।
মৌলিক অণু: একই মৌলিক পদার্থের দুই বা তারচেয়ে বেশি পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে যে অণু তৈরি করে, তাকে মৌলিক অণু বলে।
যৌগিক অণু: আলাদা আলাদা মৌলিক পদার্থের দুই বা তারচেয়ে বেশি পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে যে অণু তৈরি করে, তাকে যৌগিক অণু বলে।
পরমাণু
কোনো মৌলিক পদার্থকে ভাঙতে ভাঙতে যদি এমন সূক্ষ্ম কণা পাওয়া যায়, আরও ভাঙতে গেলে যার অস্তিত্বই আর থাকে না, তাকে ওই পদার্থের পরমাণু বলে। কথাটা এভাবেও বলা যায়, মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাই পরমাণু। প্রতিটি মৌলিক পদার্থ তার নিজস্ব পরমাণু দিয়ে তৈরি। পরমাণু ওই পদার্থের ধর্ম মেনে চলে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। যেটা অণুর পক্ষে সম্ভব নয়। অণু যেরকম স্বাধীনভাবে অবস্থান করে, পরমাণু আবার সেটা পারে না। পরমাণু একটা আরেকটার সঙ্গে মিলিত হয়ে অণু তৈরি করে। তবে কয়েকটি মৌলিক পদার্থের পরমাণু মুক্ত অবস্থায় থাকে। যেমন: হিলিয়াম, নিয়ন ও আর্গন। মৌলিক পদার্থের বেলায় শুধুমাত্র ওই পদার্থের দুই বা তারচেয়ে বেশি পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে অণু তৈরি করে। হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন মৌলিক পদার্থ। এদের একটি অণু তৈরি হয় দুটি পরমাণু মিলে। যেমন: দুটি অক্সিজেন পরমাণু মিলিত হয়ে একটি অক্সিজেন অণু তৈরি করে। আবার, ফসফরাস ও সালফারের একটি অণু তৈরি হয় ওই মৌলিক পদার্থের অনেকগুলো পরমাণু মিলে। যৌগিক পদার্থের বেলায় ভিন্ন ধরনের দুই বা তারচেয়ে বেশি মৌলিক পদার্থের পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে অণু তৈরি করে। যেমন: একটি অক্সিজেন পরমাণু ও দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি করে পানির একটি অণু। সব অণুর মধ্যেই পরমাণুগুলো বিশেষ একটি আকর্ষণে একে অন্যের সঙ্গে মিলিত অবস্থায় থাকে।
পরমাণুর মাঝের অংশ বা কেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রীণ বলে। পরমাণুর তিনটি ক্ষুদ্রতম কণা রয়েছে। এগুলো হলো: ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারদিকে কক্ষপথে ঘোরে এবং ঋণাত্মক চার্জ বহন করে। ঘোরার এই পথটা বৃত্তাকার। কাগজের ওপর মুরগির ডিম বসিয়ে তার চারদিকে পেনসিল দিয়ে দাগ টানলে যে রকম গোল আকার হয়, সে রকমও হতে পারে। ইলেকট্রন ও নিউক্লিয়াসের মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। প্রোটন ও নিউট্রন নিউক্লিয়াসের ভেতরে অবস্থান করে। প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যা প্রায় সমান। তবে কোনো কোনো মৌলিক পদার্থের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটনের চেয়ে নিউট্রনের সংখ্যা সামান্য বেশি থাকে। প্রোটন ধনাত্মক চার্জ বহন করে, আর নিউট্রন চার্জ নিরপেক্ষ। মানে, নিউট্রনে কোনো চার্জ নেই। প্রোটন ও ইলেকট্রনের সংখ্যাও পরমাণুতে সমান। ইলেকট্রন ঋণাত্মক আর প্রোটন ধনাত্মক চার্জ বহন করে বলে পরস্পরকে ছেড়ে এরা বেরিয়ে যেতে পারে না। এদের মধ্যে একটা টান থাকে। এ টানকে বলে, বৈদ্যুতিক টান। বিদ্যুতের নিয়ম অনুযায়ী, ধনাত্মক চার্জ ও ঋণাত্মক চার্জ সমান হলে দুটোতে কাটাকাটি হয়ে গিয়ে বিদ্যুতের পরিমাণ শূন্য হয়ে যায়। যেমন ৭-৭=০। সুতরাং, পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন সংখ্যা সমান থাকায় ঋণাত্মক ও ধনাত্মক বিদ্যুতে কাটাকাটি হয়ে গিয়ে ফলাফল হয় শূন্য। মানে, স্বাভাবিক অবস্থায় পরমাণু থাকে চার্জ নিরপেক্ষ। কিন্তু পরমাণু থেকে যদি কোনো ইলেকট্রন সরিয়ে নেয়া হয়, তাহলে পরমাণুতে ঋণাত্মক চার্জ কমে যাবে। তখন পরমাণুটি হয়ে যাবে ধনাত্মক চার্জযুক্ত। আবার বাইরে থেকে যদি কোনো ইলেকট্রন পরমাণুতে জমা করা হয়, তাহলে পরমাণুটি হয়ে যাবে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। প্রতিটি ইলেকট্রনে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ থাকে, প্রতিটি প্রোটনেও একই পরিমাণ বিদ্যুৎ থাকে। একটি ইলেকট্রন বা প্রোটনে কী পরিমাণ বৈদ্যুতিক চার্জ থাকে, সে হিসাব বের করতে ইলেকট্রন বা প্রোটনের চার্জকেই একক, মানে ১ ধরা হয়। প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক, তাই প্রোটনের বৈদ্যুতিক চার্জ +১। ইলেকট্রনের চার্জ ঋণাত্মক, তাই ইলেকট্রনের বৈদ্যুডুশ চার্জ —১। স্বাভাবিক অবস্থায় পরমাণুতে যতগুলো ইলেকট্রন থাকার কথা, তারচেয়ে বেশি বা কম থাকলে সেই পরমাণুকে বলা হয় আয়ন। ইলেকট্রন বেশি থাকলে সেই পরমাণুকে ঋণাত্মক আয়ন বলে। আর, ইলেকট্রন কম থাকলে সেই পরমাণুকে ধনাত্মক আয়ন বলে।
প্রতিটি মৌলিক পদার্থের আলাদা আলাদা পরমাণু রয়েছে। যেমন: অক্সিজেনের পরমাণু হাইড্রোজেনের পরমাণু থেকে আলাদা। একটি মৌলিক পদার্থের পরমাণু থেকে আরেকটি মৌলিক পদার্থের পরমাণুর মধ্যে আকার, ওজন ও ধর্মে পার্থক্য থাকে। এর কারণ, পরমাণুতে প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা এক একটি পদার্থের এক এক রকম। একটি মৌলিক পদার্থের সকল পরমাণু একই রকম, কিন্তু অন্যান্য মৌলিক পদার্থের পরমাণু থেকে ভিন্ন। পৃথিবীতে অসংখ্য জিনিস আমরা দেখি। কিন্তু একটা জিনিস আরেকটা জিনিসের মতো দেখতে নয়। প্রতিটাই আলাদা। এর কারণ, এক একটা জিনিস এক এক রকম পরমাণু দিয়ে তৈরি।