চয়ন খায়রুল হাবিবের কবিতা ‘মারাডোনা: আঘনের রূপকথায়’
প্রকাশিত : নভেম্বর ২৬, ২০২০
দুলে বেড়াই সে ফুটবল দুনিয়াতে
যে ফুটবল মারাডোনাকে দোলায়
গোলবারে গোল গোল গোল সোরগোল ভেদ করে
একটা মানুষের ইতিহাস আমাদের সবার ইতিহাসের মাঠে
বাংলার ধানক্ষেত ধেয়ে এলো বুয়েনস আইরেসের বস্তিতে
আউশ গতিতে ছুটে এলো আঘন মাসের কোলাহল
আমন ফুলে ফেঁপে ভাত আর ভাত ফুলে হলো ফুটবল
ব্রিটানির সাগরপারে গল্পের ভেতর গল্পের কল নেড়ে
ছেলে মাতিসের সাথে ২০১৯ এর ভ্যান শহরে
দেখেছিলাম আসিফ কাপাডিয়ার মারাডোনা বায়োস্কোপ
বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন নাইন টেন টেলিস্কোপ
প্রাসাদে মহানরম পালঙ্কে মনে পড়ে গেল:
মাটি আর খড়ের কুঁড়েঘরে
কাঠের দরজাঅলা প্রথম বাড়ি
সবকিছু বিক্রি হতো ওখানে সুঁই সুতা থেকে শুরু করে
ভাজাভুজির বাসনকোসনসহ তামাকের প্যাকেট
ভাঙাচোরা রোয়াকে বসে দিনখাটা মজদুরেরা জটলা পাকিয়ে
মদ খেত আর চাপাবাজিতে আসর মাতাতো
ওই ভেল্কিবাজ চাপাবাজদের সবাই মারাডোনার চাচাচাচি মামামামি
এমনসব ফুটবল খেলার বয়ান ওরা দিত, যেগুলো কখনো ঘটে নাই
কিন্তু সে খেলাগুলো স্বপ্নে দেখতে মুখিয়ে থাকতো ওদের সবাই
বলার গুণে খেলাগুলো হয়ে উঠতো জীবন্ত সত্য
ছুটন্ত কামান গোলার মতো
ছুটে আসছে অথচ দেখা যাচ্ছে না
মোজায় ভরা বল খেলতে খেলতে
গল্পাচার্যদের বানোয়াট গুলতানি থেকে
পিচ্চি মারাডোনা শিখতো না শেখার ভান করে
শুনতো না শোনার ভান করে
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো রাস্তা ধরে চলে যাওয়া
কচ্ছপগতির সে-সময়কার টি-মডেলের ফোর্ড মোটরযান
নিস্পৃহ গদাই লস্করি যাদুঘরের প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী
এখনকার পরিবেশখোর ধাবমান সময়ের মোটরগাড়ি থেকে একেবারে ভিন্ন
যেহেতু ওই চাপাবাজদের কোনো টাকাকড়ি গাড়িবাড়ি ছিল না
যখন ওর হাতে আসলো কল্পনাতীত টাকা
তা দিয়ে কি করবে সে আর বুঝতে পারলো না
আশা ভালোবাসার দোলাচল পথ খুঁজে পায় রূপকথার জাবরে
সাগরমতো এক নদীর ধারে স্প্রিংয়ের চাবি আঁটা
পানের বাটা হাতে মনিমালা পায়ে পায়ে আগায়
ঢেউয়ের পর ঢেউ ঢেউ চাঁদমাখা মুক্তামালা বিবিয়ানা
তাজা বাতাসের বৈঠকখানায় চিরস্থায়ী এখন রাজকুমার মারাডোনা
আউশ গতিতে ছুটে এলো আঘন মাসের কোলাহল
আমন ফুলেফেঁপে ভাত আর ভাত ফুলে হলো ফুটবল
২৫ নভেম্বর ২০২০
ব্রিটানি, ফ্রান্স