চয়ন খায়রুল হাবিব
চয়ন খায়রুল হাবিবের কবিতা ‘তিন নারীর পরাবাস্তবতা’
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
রানি এলিজাবেথের জানাজা দিবসে মা ও কন্যাকে স্মরণ
বৃটিশ রাজের চৌদ্দগ্রামে ঊনিশ শতকে জন্ম নেয়া
আম্মা জ্যোতির মৃত্যু-দিবস আছে, কোনো জন্মদিন নাই।
রাজ্যহারা ব্রিটেনের লন্ডনে বিশ শতকে জন্ম নেয়া
কন্যা এলিসের জন্মদিন আছে।
জ্যোতি ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির প্রজা।
গণতন্ত্র মেশানো নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে
এলিস ব্রিটিশ পাস্পোর্টধারী নাগরিক
এবং সাংবাদিক হলেও শব্দ ও অর্থের দাঙ্গা বাঁধানো
শ্রেণি-যাঁতাকলের জটাজুটে বন্দিনী।
নাট্যকার এলেন বেনেটের ভাষায়
রানি এলিজাবেথ ছিলেন আনকমন রিডার।
আম্মা জ্যোতি ও কন্যা এলিস
ভার্জিনিয়া উলফের ভাষায় কমন রিডার।
তিন পরাবাস্তবতায়
তিন নারী কি কল্পনায় এক সুতায় বাঁধা?
তা কি করে সম্ভব!
আমরা যদি না হই কৃষণ চন্দরের জাদুবাস্তব গাধা!
রাজ পরিবারের লোকজন এবং ব্রিটিশ পাস্পোর্টধারীগণ
যখন য্যামন খুশি
কমনওয়েলথের যে কোনো অংশে যেতে পারে, থাকতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড বাদে অপর কমনওয়েলথের লোকজন
কেবল পয়েন্ট সিস্টেমের ভরসায় অভিবাসী হতে পারে।
এবং এই অভিবাসনে তারা খুশি। কে হবে না?
নিজে বাঁচলে বাবার নাম, তার পর অন্য বাবাদের গায়েবানা।
চৌদ্দগ্রামের কিশোরী ১৩ বছরের জ্যোতিকে
খেলার মাঠ থেকে ডেকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল।
স্বামী হাবিবুল ছিল ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর বিমান সেনা।
বৃটিশের ঘটানো চল্লিশি মন্বন্তর থেকে জান বাঁচাতে
তখন দলে দলে লোক নাম লিখায়েছিল ব্রিটিশের পলটনে।
চৌদ্দগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে বোম্বে,
বোম্বে থেকে করাচি, করাচি থেকে চাকলালা বিমানঘাঁটি।
একের পর এক জাহাজে জ্যোতি ছিল মানুষের বেশে
যেরকম বরবটির বেলায় বিঁচি আর আমের বেলায় আঁটি।
ঝঞ্জায় পড়লে লাইফ বোটে উঠবে, যদি হও ভাগ্যবতী।
সময়খণ্ড হয়ে যায় টাইটানিক জাহাজ।
জ্যোতির রক্তকণিকায় আঁকা এলিস, মাতিসের কারুকাজ।
রানির কফিন দেখতে এলিস রাস্তাঘাটে লাইন দেয় নাই।
শোনা যায়, রাজতন্ত্রী সাদা, কালো, এশিয়ানেরা
নাকি দলবেঁধে ব্রেক্সিট-ভোটে
ইয়োরোপের সাথে ব্রিটেনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়।
যে বিবাহে শেঙ্গেন-শর্ত-মতে ইয়োরোপের সবাই
শিক্ষা, স্বাস্থ্যে, ভ্রমণে সমানাধিকার পায়।
চ্যানেলের ওপারে জ্যোতির ব্রিটিশ বংশকণিকা এলিস,
এপারে ফরাসি বিপ্লবের উত্তরাধিকার মাতিস-জ্যোতি।
ক্লাস ফোর পাশ জ্যোতি ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়াতো
রবীন্দ্রনাথ, জসিমউদ্দিনের লম্বা, লম্বা লুলাবাই শুনায়ে।
আর পছন্দ করতো গরম ভাত ও নরম শেফালি ফুল।
জ্যোতিকে খুশি করতেই কিনা জানি না,
হাবিবুল ঢাকার আজিমপুরের এক তলা বাসার বাগান ঘিরে
লাগায়েছিল অনেকগুলো পেয়ারা গাছ আর রক্তজবার ঝাড়।
এলিজাবেথের কবর হবে
বাবা, মা ও স্বামীর পাশে ওয়েস্টমিনিস্টার এবেতে।
জ্যোতির বাবা মৌলবি কুরবত আহমেদ
মা ফয়জুননেসা চৌধুরানির কবরের কোনো নিশানা নাই।
জ্যোতি ও হাবিবুলের কবর শ্বশুর সূফি পির জমির শাহর দরগার কোলে।
জীবন্ত কবরগুলো জাতীয়তা বদলায় রাজত্বের নাগরদোলায়।
চ্যানেলের এপারে ঘুম ভেঙে
ঊনিশে সেপ্টেম্বর ২০২২ শরতের রঙ্গে
এলিজাবেথের জানাজা দিবসের বিভঙ্গে
নাস্তা সারলাম রাতে পাকানো সবজি মেশানো মোটা চালের ভাতে।
রইস ফ্যাশনের বরকত বাড়াতে বলতে পারো মিক্সড ফ্রাইড রাইস।
সাথে ছিল দুধ দেয়া আর্ল গ্রে চা।
রানি ও তার অতিথিদের জন্য তুলে রাখলাম
পোয়া সকোলা, ক্রোয়াসো ও ব্রিওশ!
ইউটিউবে জানাজার লাইভ খোশ আমদেদে
সুয়োরানী, দুয়োরানীদের ঠাকুমা ঝুলিতে
যোগ হলো আরো কিছু ভ্রান্তিবিলাসী শ্লোক!
নটে গাছটার কিন্তু কখনোই মুড়াবাড় কথা ছিল না।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
ব্রিটানি, ফ্রান্স