চৈতালী মুখার্জি

চৈতালী মুখার্জি

চৈতালী মুখার্জির তিনটি কবিতা

প্রকাশিত : এপ্রিল ২২, ২০২১

পৃথিবী সুন্দর

জন্ম নিয়েছ মনুষ্যরূপে, কর্ম করিবে তাই
পৃথিবীর এই আলো বাতাস করিছো তুমি ভক্ষণ।
চুকাইবে না ঋণ তার? তুমি যে ঋণী এই পৃথিবীর কাছে,
অঙ্গীকার বদ্ধ তুমি, অবশিষ্ট জীবন করিয়াছ যাপন,
পৃথিবীর অনুগ্রহ দু’হাতে নিয়েছো তুলে।
তোমার কী নেই বিবেক, বুদ্ধি, আত্ম-সম্মানের গ্লানি?
যে জীবনের শেষটুকু দিয়ে করেছে তোমায় দান
মৃত্যুর আবেশ গায়ে মেখেও তুমি চিরকালই থেকে যাবে ওর কাছে দাবিদার।
তোমার দায়, এই পৃথিবী তোমার, তোমার পূর্ব পুরুষের, তোমার ভবিষ্যত প্রজন্মের
তাই তাদের বাসযোগ্য করে তোলা তোমার দায়িত্ব।
পেয়েছো জীবন একবারের জন্য, মনুষ্য জীবন আসে না ঘুরেফিরে
তোমার কর্তব্য, তোমার দায়িত্ব, সকলি তোমার
দোষস্খলন করার একটি মাত্র উপায়,
তোমার পৃথিবী, তোমার মা, তাই সকলের তরে ভালোবাসা বিলিয়ে
সৌভাগ্যবানের মতো করে যাও জীবনযাপন।

পৃথিবী তোমায় করিবে আশীর্বাদ
ধনধান্যে ভরিয়ে দেবে তোমার বসুন্ধরা
মুক্ত বাতাস লুটিয়ে পড়বে তোমার পায়ে...
কেননা, তুমি তার সন্তান
নিজের দায়িত্ব সে মায়ের মতো পালন করেছে
এবার তোমার পালা, তুমি কি তোমার দায়িত্ব পালন করবে না?
জীবন একবারের জন্য, ফিরে আসে না আর।

গোধূলি

গোধূলি বেলায় তাকে দেখেছিলাম,
মনের অজান্তেই তাকে ভালো বেসেছিলাম,
দিইনি বুঝতে আজও মনের কথা তাকে,
দূর থেকে তাকে ভালোবেসে যেতে চেয়েছিলাম।
হালকা হলুদ পাঞ্জাবিতে পরন্ত সূর্যের আলো,
মুখখানি তার জ্বলজ্বল করে উঠেছিল হিয়ার মাঝে।
চেয়েছিল সেও আমার দিকে, একটু আড়াল চোখে
তার চোখের চাওনি আজও আমার চঞ্চল চিত্তের কারণ।

মাঠের গরুর বাড়ি ফেরার তাগিদে ক্ষুরের মধ্যে উড়ন্ত ধূলিকণা
এক অপরূপ দৃশ্য এঁকে যায় মনে।
পাখিদের বাসায় ফেরার ঝাঁক, নিঝুম সন্ধ্যার আড়ালে।
আমার মনে তোমাকে দেখার অনুভূতি এক অনন্য কাতরতা

নতুনকে পেয়ে চিরহরিৎ যেমন ভুলে যাই ঝড়াপাতাকে
তেমনি তোমাকে দেখে জীবনের সব দুঃখ ক্লান্তি মুছে গিয়েছিল আমার
চোখের পলকে এক রঙিন স্বপ্ন ভিড় করেছিল সামনে।
বারবার আরশির কাছে দাঁড়িয়ে জানতে চেয়েছিলাম,
মনকে বোঝার মতো ক্ষমতা আমার নেই,
তাই আরশিই শ্রেয় আমার কাছে।
সে বলে না কথা, দেই না কোনো প্রতিশ্রুতি।

দুঃখ সুখের বাঁধন হবে নিজের
মনের মতো ওকে যদি পাই তবে বাঁধতে পারি ছোট্ট নীড় পাখির কলোরবে
চলতি পথে গোধূলি বেলায়, উড়িয়ে ধূলিকণা
দুজনে দেখব পরন্ত সূর্যের আলো আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে দিগন্তে
তুমি শক্ত করে ধরবে আমার হাত।
বলবে তুমি ভয় পেয়ো না, আমি আছি
দুঃখ সুখের ভেলায় চড়ে করতে হবে পার।
দূরের পানে রাখাল বাঁশি শুনতে যাব মোরা,
যাত্রী হবো গোধূলির আলোয়,
দেখব প্রকৃতির খেলা।

মুখোশবাদ

মুখের ওপর মুখোশ পরে
করছে সবাই অভিনয়।
আনন্দে মাতার ছলে তারা
গ্রহণ করছে অশ্রুর আশ্রয়।
ব্যথার উপর ব্যথা চেপে হচ্ছে পাহাড় টিলাই
বলতে পারো কে আছে সুখে? এই মিথ্যা হাসির খেলাই।
তিলে তিলে হচ্ছি ক্ষয়, ভালো থাকার ছলে।
মুখোশ পরে কাটছে দিন, ভণ্ড পথিক দলে।
অভিনয়ে বিভেদ নেই, নেইকো ছোট বড়।
শিখাতে হয় না  মিথ্যা আমি, ভনিতাই আলোড়ন গড়।
দিনে দিনে বাড়ছে শুধু অভিযোগের চিরকুট।
দায়ভার ঝেড়ে ফেলে, পড়ছে সুখের কৃত্রিম মুকুট।
বাস্তবায়িত হচ্ছে শুধু ব্যস্ত এই জীবন।
জ্বলেপুড়ে হচ্ছে ছাই, বিভূতি মাখছে মন।
শৌখিনতার মুখোশ এঁটে নিচ্ছে যারা ছুটি।
কেউ পড়ছে না বই আর, লেখে না কেউ চিঠি।
ক্লান্ত আঙুল দিনের শেষে, নিচ্ছে পক্ষ কার?
সারা দিন অনর্গল বকেও, কমছে না মনের ভার।
আমিও আজ মুখোশ পরে মিশছি তাদের দলে।
এই জগতে একটু স্বার্থপর নাহলে কি চলে?
জ্বলছে মশাল দিচ্ছে ডাক, কৃষক মানুষ সবাই থাক।
দেশে ও দশের কান মলে, মুখোশধারী সবাই দলে।
আমিও শেষে লিখছি নাম, মুখোশবাদের গাইছি গান।