ঘষেটি বেগমের বাড়ি
হামিদ কায়সারপ্রকাশিত : এপ্রিল ১৭, ২০১৮
ঢাকার জিনজিরার নগরাতে ঘষেটি বেগম, সিরাজ-উদ দৌলার পত্নী লুৎফুন্নেসা আর মির মিরণকে যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল সেখানে তিনটি বাড়ির প্রাচীন নির্দর্শন দেখা যাবে। ধারণা করা হয়, তিনটি বাড়ির নিদর্শন আসলে একটি বাড়িরই অংশ ছিল। কালের পরিক্রমায় যা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনটি বাড়ির মাঝখানে প্রচুর ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তৈরি হয়ে এখন এটি বিচ্ছিন্ন তিনটি সত্তা।
পুরনো দুটি প্রাসাদ এখনো ততটা বেহাত হয়নি। তবে একটি ভবনকে চারদিক থেকে পিষে ফেলে এমন একটা অবস্থা করা হয়েছে, দেখলেই আপনার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইবে। শুধু কি তাই, সেই প্রায় আড়াইশো বছর পুরনো ভবনের ভেতরটাও দখল হয়ে গিয়েছে। বসানো হয়েছে গ্যাসের চুলা। বেশ জমিয়ে রান্নাবান্না করা হয় এখানে, বোঝা গেল। আমরা যখন সরু গলি দিয়ে এ প্রাচীন ভবনে ঢুকতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ এক বাঁজখাই গলা প্রবলভাবে বাঁধা দিয়ে উঠলো, অ্যাই এখন ঢুইকেন না, ঢুইকেন না, মাইয়ালোকে গোসল করে।
এ কথা শোনার পর কী আর সেখানে ঢোকা সম্ভব! কখন দেখা যাবে আংকেল? জানতে চাইলে নির্মোহ ভঙ্গিতে বললেন, এক দুই ঘণ্টা পর।
তো, এক দুই ঘণ্টা ভূতের বাড়িতে কাটিয়ে আমরা আবার সেখানে উপস্থিত হতেই আংকেলের সদয় সম্মতি মিললো। এবার বেশ মোলায়েম গলা। কথাশিল্পী মহিবুল আলম যেই না জিজ্ঞেস করলেন, আংকেল জায়গাটি কি আপনারই।
তিনি কইলেন, তাইলে কার জায়গা কন? আমি হইলাম ঘষেটি বেগমের নাতি।
আমরা ঘষেটি বেগমের নাতির দিকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকাতেই আংকেল বলে উঠল, আচ্ছা, আপনারা দেখেন। আমারে আবার একটু হাসপাতালে যেতে হবে।
এ পুরনো ভবনে তো তবু রান্না হয়, হয়তো সেই সুবাদে এ রুমটি এ বাড়ির ভদ্রমহিলার যত্ন পায় কিছুটা। কিন্তু তৃতীয় সেই প্রাচীন ভবনে গিয়ে তো আমাদের আক্কেল গুড়ুম। বিদ্যুৎ নেই। গরমের ভেতর তিন চার মহিলা-পুরুষ কর্মী কোনও এক হোটেলের জন্য যেন সিঙারা বানাচ্ছে। জানা গেল, হোটেলটার মুখরোচক খাবার তৈরির এটি একটি নিরাপদ আস্তানা।
লেখক: কথাসাহিত্যিক