গোপন সত্যি

পর্ব ৪

আবু তাহের সরফরাজ

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮

মনিরাকে রান্নাঘরেই পাওয়া গেল। কোমরে আঁচল পেঁচিয়ে এঁটো প্লেট ধুচ্ছিল। মুখ ফিরিয়ে জিগেশ করল, কি ব্যাপার, কিছু বলবে?
চায়ের পানি কি গরম আছে?
কেন?
এক ভদ্রলোক এসেছেন।
কে?
একটু সময় ভেবে নিয়ে তারপর বললাম, ভদ্রলোকের নাম সৈয়দ আহমেদ বদরুল আলম। বাড়ি ঝিনাইদহ। দুলাভাইয়ের বন্ধু মানুষ। ঢাকায় এসেছিলেন একটা কাজে, বেড়াতে এলেন আর কী!
পানি গরম নেই, করতে হবে।
মিষ্টি আছে ফ্রিজে?
আছে।
মিষ্টি দিও চায়ের সঙ্গে।
যাও তুমি, পানি ফুটলে দিয়ে আসব।
ফের বিপাকে পড়লাম। বানিয়ে বানিয়ে আর কত বলা যায়! অবশ্য বউয়ের কাছে বানিয়ে বললে নাকি তা মিথ্যে বলা হয় না। সত্যের কাছাকাছি দিয়ে যায়। বউয়ের কাছে যে যত বেশি মিথ্যে বলতে পারবে, স্বামী হিসেবে সে তত বেশি সাকসেস। আমার কথা নয়, মখলেসের কথা। ভারি ইন্টেলিজেন্ট কথাবার্তা তার। এ মুহূর্তে আমি সাকসেস স্বামী হতে চেষ্টা করলাম।
তোমার দরকার নেই। আমিই নিয়ে যায়।
কেন, আমি গেলে সমস্যা কি?
সমস্যা কিছু না। আমি আসলে বলেছি, তুমি অসুস্থ।
মিথ্যে বলতে গেলে কেন?
তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে চাচ্ছিলেন।
পরিচয় করিয়ে দিলেই পারতে।
তা পারতাম, কিন্তু তুমি তো ঘুমোচ্ছিলে দেখে এলাম।
তাই চট করে মিথ্যে বলে ফেললে? তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল মনিরার ঠোঁটে।
বিপাক আরেকটা জড়িয়ে ফেলল আমাকে। কথা না বলে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনিরা বলল, ঠিকাছে দাঁড়াও। তুমিই নিয়ে যাও।
কাপ ধুতে থাকে মনিরা। চায়ের পানি ফুটছে। কোমরে আঁচল পেঁচানো থাকায় তার মসৃণ তলপেট বেরিয়ে পড়েছে। সুন্দর ফর্সা ত্বকে আমার চোখ আটকে গেল। উপত্যকার মতো ওই সমতল ভূমি থেকে চোখ সরাতে পারলাম না আমি। উঠে গিয়ে একটা হাত রাখলাম সেখানটায়। ভীষণ ইচ্ছে হলো, অলৌলিক ওই ভূমিতে ঠোঁট ছোঁয়াই, আদর করি। কী সুন্দর নিভাঁজ! আমার ইচ্ছে পূরণ হয় না। এক লাফে সরে যায় মনিরা।
এই প্লিজ, অসভ্যতা করো না।
দু’পা সরে এসে বললাম, তবে সভ্যতা করি?
সভ্যতা করি মানে?
মানে আবার কি! দূর থেকে চেয়ে দ্যাখা। গায়ে হাত দিলে অসভ্যতা হয় যখন।
হেসে ফেলল মনিরা। বাপরে, কথার কী মার!
রেফ্রিজারেটর থেকে মিষ্টি বের করে কাপে চা ঢেলে ট্রে সাজিয়ে মনিরা বলল, ন্যাও, ভদ্রলোক কতক্ষণ বসে আছেন একা।
বদরুল আলম সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রীতিমতো ঝিমোচ্ছেন। ঠোঁট দুটো সামান্য ফাঁক হয়ে আছে। ঘুমোচ্ছেন, না জেগে আছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। মাথাটা একদিকে কাৎ হয়ে আছে। পা ছড়ানো।  হাত দুটো কোলের ওপর জড়ো করা।
আমি ডাক দিলাম, ভাই, চা নিন।
চমকে উঠে চোখ মেললেন তিনি। সোজা হয়ে বসে একটু ম্লান হাসার চেষ্টা করলেন। আমি টিপয়টার ওপর ট্রে নামিয়ে রাখলাম। বললাম, চা নিন।
আপনি?
ডদনে দু’কাপের বেশি খাই না আমি। সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে শোবার আগদিয়ে।
ও আচ্ছা, গুড হ্যাবিট।
ছোট ছোট টুকরো করে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে মিষ্টি দুটো খেলেন তিনি, অনেকটা বাচ্চাদের মতো। মিষ্টির টুকরো মুখে লেগে থাকলেও মোছার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। এক নিশ্বাসে পানির গেলাস শেষ করে চায়ের কাপ তুলে নিলেন। ছোট ছোট চুমুকে তিনি চা খেতে লাগলেন।
তার চা খাওয়া শেষ হলে বললাম, বদরুল সাহেব, এবার আপনার আশ্চর্য গল্পটা বলুন, শুনি।

চলবে