গাজী কামরুল হাসানের গল্প ‘ক্যাকটাসের কাঁটা’
পর্ব ৫
প্রকাশিত : অক্টোবর ১৮, ২০২১
মা... মা...
হ্যাঁ। সব ঠিক হয়ে যাবে। আগে তুই গাটা ভালো করে মুছে জামা পালটে ফেল। ঠাণ্ডা লাগবে।
আচ্ছা মা।
রুম থেকে বার হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। কয়েক মিনিট কী যেন ভেবে চুলা জ্বালিয়ে পাতিলে খানিকটা দুধ গরম দিয়ে সুমনকে কল করলেন।
সুমন, তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।
কেন মা? কি হয়েছে?
কতক্ষণ লাগবে আসতে?
ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পারব। কেন? কি হয়েছে?
আগে আয় দেখি।
লতিফা বেগম চুলা বন্ধ করে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে এসে বসলেন। বড় জাকে কল করতে ফোনটা তুলে আবার রেখে দিলেন। নিজের মনকে বোঝাতে শুরু করলেন। তাড়াহুড়া করা একেবারেই চলবে না। অনেক কিছু ভাবার আছে এখন। অনেক ভেবে নিজের ওষুধের বাক্স থেকে কড়া করে দুইটা ঘুমের ওষুধ বার করে গরম দুধে মিশিয়ে দিয়ে গ্লাসটা হাতে নিয়ে শাহানার রুমে গেলেন।
গরম দুধটুকু খেয়ে নে।
শাহানা তার কথা যেন শুনতে পেল না। মুখে কোন শব্দ নেই। দূরে কোথায় যেন তাকিয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। অনেকটা জোর করে ওকে দুধটুকু খাওয়ালেন। তারপর বিছানায় শুইয়ে লেপ মুড়ে দিলেন। ঘরের বাতিটা নিভিয়ে বিছানার পাশের চেয়ারে বসলেন। মিনিট দশেকের মধ্যে শাহানা ঘুমিয়ে পড়ল।
আবার যখন আদর পেতে ইচ্ছা করবে, আমার কাছে চলে আসবা... চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে যায় শাহানা। ধরফর করে বিছানায় বসে পড়ল। ভয়ের একটা হিমশীতল স্রোত মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যায়। কাঁপতে শুরু করে। সে কোথায়? কোথায় আটকে রেখেছে তাকে? বিছানা ছেড়ে উঠে আস্তে করে দরজার কাছে গিয়ে কান পাতল।
ওষুধ দুইটা এনেছিস?
স্বরটা আগে কোথায় যেন শুনেছে সে। কিন্তু মনে করতে পারছে না কেন?
হ্যাঁ খালা।
ভাইয়া আছে। একটু আশ্বস্ত হয় সে। ও, খালা কথা বলছিল। এখন চিনতে পেরেছে। কিন্তু খালাতো ঢাকায় থাকে। কিন্তু খালারাতো ঢাকায় থাকে। তবে কি ঢাকায় নিয়ে এসেছে তাকে। কিন্তু...
উঠলে প্রথমে এটা খাওয়াবি। তারপর ঘণ্টা দুয়েক পর এই ওষুধটা। গতরাতের ঘটনা। বারো-তের ঘণ্টার বেশি হয় নাই। আল্লায় দিলে আর সমস্যা হবে না। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে বমিটমি করে দিলে আরেকটা খাওয়ান লাগবে কিন্তু।
কিসের ওষুধরে?
মফস্বলে থেকে একবারে গেঁয়ো হয়ে আছো দেখছি। প্রথমটা বমির। আর পরেরটা জান বাঁচানোর। প্রেগনেন্ট-ট্রেগনেন্ট হয়ে গেলে কি হবে চিন্তা করেছ? আর কিছু টেস্টও তাড়াতাড়ি করে নিতে হবে... কোথায় গিয়ে কি না কি বাঁধিয়ে নিয়ে এসেছে কে জানে?... সুমন ভাল করেছিস, মাইক্রো ভাড়া করে রাতের মধ্যে আমার এখানে চলে এসে। তোদের খালুও ট্রেনিংএর জন্য এখন জাপানে। সাজিদ সিলেটে। দাদাবাড়িতে বেড়াতে। ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল শুরু হওয়ার আগে টিকিটাও দেখা যাবে না। পুরো ফ্লাটে আমি একা। ভাবছিলাম তোমাদের ওখানে কয়েক দিন বেড়িয়ে তারপর সিলেট যাব।
কি করার আছে বল। ওখানে থাকলে কারও সামনে মুখ দেখানোর উপায় থাকত। ফেরেশতার মত মানুষটার নামে কি বলা শুরু করেছে। লজ্জায় মাথা কাঁটা গেছে আমার! চিন্তা করে দেখ, জানাজানি হয়ে গেলে কি হত!
আমার আর জয়ার ভবিষ্যতের কথাও যদি একবার মাত্র ভাবত। কোন মুখে গিয়ে এখন চাচার ব্যবসায় বসব?
কাউকে বলে কোন লাভ হবে না। কেউ বিশ্বাস করবে না।
মাথা ঘুরতে থাকে শাহানার। কোনরকমে দুলতে দুলতে বিছানায় বসে পড়ে। গা গুলিয়ে বমি আসছে। কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না! আম্মা...আব্বা...ভাইয়া...খালা... কেউ না? চলবে