গণহত্যা একটা রাজনীতি, এটাই পুঁজিবাদী মিডিয়া

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে মার্কিন সেনা অ্যারন বুশনেল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইজরায়েলি দূতাবাসের সামনে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। আগুনে পুড়তে পুড়তে অ্যারন চিৎকার করে বলছিলেন, ফ্রি প্যালেস্টাইন! ফ্রি প্যালেস্টাইন!

ফিলিস্তিনে আড়াই মাসেরও বেশি সময়ে ইজরায়েলি বাহিনী যে নৃসংশ হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে তাতে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু। প্রতিদিন শত শত শিশুর রক্তাক্ত মুখ, আর্তচিৎকারে বিশ্ববাসীর বুক বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের সে চিৎকার ক্ষমতাধর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না। এমন কি খোদ মার্কিনমুলুকেও লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে চিৎকার করে বলছে, এ যুদ্ধ বন্ধ করো। এরপরও আমেরিকাসহ মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো সে চিৎকার শুনতে পাচ্ছে না। তারা ইজরায়েলকে গণহত্যার রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে।

খবর পাওয়া যাচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে শুধু মারণাস্ত্র ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। ত্বক পুড়িয়ে দেয় এমন দাহ্য রাসায়নিক ‘হোয়াইট ফসফরাস’ও ব্যবহারও করছে ইজরায়েল। এটি এমন এক নারকীয় পরিস্থিতি যার পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণও পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না। অ্যারন নিজের গায়ে আগুন লাগাতে লাগাতে বলছিলেন, ইজরায়েল ও মিত্রদেশগুলোর হাতে ফিলিস্তিনিরা যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে, সে তুলনায় তার এ আত্মাহুতি কিছুই না। তিনি ফিলিস্তিনে চলা গণহত্যা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তাকে বলতে শোনা যায়, একজন মার্কিন সৈনিক হিসেবে এই গণহত্যায় তিনি আর নিজেকে জড়াতে চাইছেন না। প্রতিবাদের চরম ভাষা হিসেবে তাই এ পথ বেছে নিয়েছেন।

অ্যারনের পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। তার পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে পৃথিবী এতটা বিহ্বল যে কান্নাও ভুলে গেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিডিয়াগুলো লিখছে, অ্যারন মানসিকভাবে অসুস্থ, পাগল। তাই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা বলতে চাইছে, যারা নিরীহ মানুষের ওপর ঠাণ্ডা মাথায় মারণাস্ত্র প্রয়োগ করে, যারা গণহত্যায় অংশ নেয়, গণহত্যাকে মদদ দেয়, রসদ যোগায় তারাই সুস্থ। কোনো কোনো গণমাধ্যম তো লিখছে, সরকারি বাহিনীর সদস্য হয়ে রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়া অ্যারনের উচিত হয়নি।

হ্যাঁ, ওরা বলতে চাইছে, গণহত্যা একটা রাজনীতি। পৃথিবীর সুস্থ মানুষেরা এ রাজনীতির নিয়ন্তা। আর সমস্ত অসুস্থ মানুষ এ রাজনীতির বিরুদ্ধে, গণহত্যার বিরুদ্ধে। গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আত্মাহুতিদানকে রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা বিবেচনায় নিয়ে অ্যারনের ছাইভস্মকেও ওরা কাঠগড়ায় তুলছে। এটাই পুঁজিবাদী মিডিয়া। বাজার ও মুনাফার সংবিধান রক্ষাই তাদের প্রধান কাজ। গণতন্ত্র, মানবতা ও মানবাধিকার এইগুলো জাস্ট ভেক।

কিন্তু অ্যারন, পশ্চিমা ভেকের বিপরীতে একটা জ্বলন্ত পোস্টার। যেখান থেকে ধ্বনিত হচ্ছে, ফ্রি প্যালেস্টাইন! ফ্রি প্যালেস্টাইন! অ্যারনকে মানসিকভাবে অসুস্থ আখ্যা দিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া নিজেদের যে চরম দুর্গন্ধযুক্ত জোব্বা উন্মুক্ত করলো তা দেখে বিষ্ঠারও লজ্জা পাওয়ার জোগাড়। বিষ্ঠার গন্ধ এদের জোব্বার গন্ধের চেয়ে উত্তম।

লেখক: কবি