গঞ্জিকাবিভ্রাট

নাহিদুল ইসলাম

প্রকাশিত : মে ০৮, ২০১৯

শহরে কারফিউ জারি হয়েছে। আর আমার এখানে জারি হয়েছে বিপদ। কারণ আমার গাঁজার স্টক শেষ হয়ে গিয়েছে। গাঁজা না হলে আমার ঘুম আসে না। তার চেয়ে বড় কথা, ঘুমানোর আগে আধো জাগরণে যেসব ভাবনাচিন্তা আসে, তার জন্যই আমার গাঁজা প্রয়োজন। গতরাতে জেগে ছিলাম সারারাত। ঘুম ভাঙল সন্ধ্যায়। ঘুম ভাঙলেই আমার ফেসবুক দেখা লাগে। লগ ইন করে দেখি, ১৪৪ ধারা জারি হয়ে যাবে কিছুক্ষণ পরেই। এবং প্যাকেট খুলে দেখি, গাঁজাও শেষ হয়ে গিয়েছে।
 
এমতাবস্থায় ফোন দিলাম আমার গঞ্জিকাসঙ্গীকে। শালা ফোন ধরল না। ঘুমাচ্ছে। আমরা দিনে ঘুমাই, রাতে জেগে থাকি। আমাদের অন্ধকার ভাল লাগে। কিন্তু ১৪৪ ধারা ভাল লাগে না। নিরুপায় হয়ে ফোন দিলাম বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে, চরম দুর্দিনেও যার কাছে গাঁজা থাকে। সে জানাল, গাঁজা আছে, তবে দিয়ে যেতে পারবে না, গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। অগত্যা আমাকে বের হতে হলো। শুনেছি তিনজন একসাথে থাকলে নাকি পুলিশ গুলি করে। আমি সম্পূর্ণ একা। আমার বুকের মধ্যে একটি মাত্র হৃদয়।

রাস্তা থমথমে। মানুষজন হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফিরছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বিপদের সম্ভাবনাও বাড়ে। একটি রিকশা ডাক দিলাম। গন্তব্যের ভাড়া ১৫ টাকা। সে চাইল ৩০। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। এখন জরুরি সময়, তাই ভাড়া বেশি। আমারও জরুরি সময়, তাই কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে উঠে পড়লাম। অন্য সময় হলে ব্যাটা রিকশাওয়ালাকে একটা ঘুষি মেরে ওর নাক ফাটিয়ে রক্ত বের করে দিতাম।

সব রাগ গিয়ে পতিত হল ১৪৪ ধারার হর্তাকর্তাদের উপর। কিন্তু পুলিশ আমার চাইতে বেশি শক্তিশালী। ওদের কাছে অস্ত্র আছে, আর আমার আছে শুধুমাত্র একটি হৃদয়। কিন্তু রিকশা অন্য পথে যাচ্ছে কেন?

বলতেই রিকশাওয়ালা জানাল, এটা শর্টকাট পথ। আমি বুঝলাম না, ভাড়া নিল ডাবল, আবার শর্টকাট চোদানোর কি দরকার! রিকশাওয়ালা বলল, মামা, সাধে কি আর ভাড়া বেশি কইছি? শর্টকাট রুডের পুলিশরে ঘুষ দিতে হয়, হের উপরে কারফুর আর বেশি দেরি নাই।

পুলিশের কথা শুনে আমি ভয় পেলাম। কিন্তু এখন আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। সামনেই পুলিশ দেখা যাচ্ছে। রিকশা কাছে আসতেই হাত উঁচু করে থামতে বলল। অভ্যস্ত রিকশাওয়ালা নিখুঁত পারদর্শিতায় গতি কমিয়ে ওর হাতে টাকা গুঁজে দিল। আমরা বের হয়ে আসলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কত নিল? সে জানাল, ৫ টাকা। 

 

বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০০ টাকা দিয়ে দুইটা পুঁটলি নিলাম। শালার দেশে সবকিছুর সাথে সাথে গাঁজার দামও আকাশচুম্বী। দুই পুঁটলি আগে নিতাম ৫০ টাকা দিয়ে। আচ্ছা, মুদ্রাস্ফীতির হার কত?

ফেরার পথে আর শর্টকাট চোদানোর দরকার নেই। পুলিশ দেখলেই আমার ভয় করে। আমার এক হাঙ্কিপাঙ্কি বন্ধু আছে। মেশিন নিয়ে ঘোরে ক্যাম্পাসে। কারো চলাফেরা পছন্দ না হলে তাকে মেশিন দেখায়, র‌্যাগ দেয়। অবশ্য ওকে আমার অতটা ভয় লাগে না।

কারফিউ জারি হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। আমি রিকশায় ফিরছি। আবারও সামনে পুলিশ। গাঁজার পুটলিটা মানিব্যাগে রেখেছি। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। পুলিশ রিকশা থামাল। আমাকে নামতে বলল। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

এত রাতে কোথায় গেছিলেন? জানেন না কারফিউ?

আমি চোখেমুখে একটা বিরক্তির ভাব আনার চেষ্টা করলাম। বললাম, টিউশনি থেকে ফিরছি।
-মোবাইল, মানিব্যাগ বের করে হাত উঁচু করে দাঁড়ান, চেক করব।
আমার ধড়ে পানি ফিরে এলো।

 

রুমে ফিরে গাঁজা রেডি করতে বসে গেলাম। কি একটা সন্ধ্যা গেল মাইরি! কাল ক্লাস টেস্ট আছে। কিছুই পড়তে পারিনি। আমার গঞ্জিকাসঙ্গী দোস্ত এসে হাজির। খানকির পোলারে আজ গাঁজার ভাগ দেব না। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গাঁজা কিনে আনার সময় কি কেউ আমার সাথে গিয়েছিল? 

 

আমরা ছাদে গেলাম। খোরে খোরে মাসতুতো ভাই। দম ধরে আমরা নিমাই টানলাম। আহ! পৃথিবী সুন্দর। আমার কোনো দুঃখ নেই।

 

তবে দেশের কপালে সুখ নেই। গাঁজা খেলেই মাত্র আমরা এটা বুঝতে পারি। দেশটাকে এরা, ক্ষমতালোভী রাজনীতিকেরা, ইচ্ছামত ধর্ষণ করেছে। গাঁজা খেলে আমরা দুজন দার্শনিক হয়ে উঠি। অসুস্থ রাজনীতির পেছনের উদ্দেশ্যগুলো পরিষ্কার হয়। সবই গরিব মানুষের টাকা মেরে খাওয়ার ধান্দা। পুরো শহরসুদ্ধ মানুষকে আমার গাঁজা খাওয়াতে ইচ্ছে করে।

আমার এমন লাগছে কেন? ধীরে ধীরে সব ভাবনা অত্যন্ত সুক্ষ্ম হয়ে যাচ্ছে। মাথাটা একদিকে টেনে ধরে আছে, নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পাতালের দিকে। আকাশ আজ অনেক সুন্দর। তারাগুলো কি উজ্জ্বল! আমি অঞ্জন দত্তের একটা গান ধরলাম- আমি বৃষ্টি দেখেছি...

আমার গঞ্জিকাসঙ্গী একটা আস্ত বাঞ্চোত। গাঁজা খেলেই ঝিম মেরে বসে থাকে। ওর ঘুম পায়। নেশা করে যদি ঘুমাসই তাহলে কি দরকার মাথা নষ্ট করার? পৃথিবী জেগে থাকে সবসময়। পৃথিবী কি গাঁজা খায় রেগুলার?  

হঠাৎ ও হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। মহা মুশকিল। গানটা গাওয়া উচিত হয়নি। ওর হয়ত প্রাক্তন প্রেমিকার কথা মনে পড়েছে, যে প্রেমিকা ওকে ছ্যাঁকা দিয়ে ওরই এক বন্ধুর সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।

 

আমি আর একটা স্টিক ধরিয়ে ওর হাতে দিলাম। ওর কান্না থেমে গেল। মানুষের অনেক আবিষ্কারের মধ্যে স্টিক অন্যতম। কার মাথায় প্রথম এসেছিল এই বুদ্ধি?

 

কাল পরীক্ষা। আমরা রুমে ফিরে এলাম। দোস্ত চলে গেল। আমি এখন সম্পূর্ন একা। আমি কি করব এখন? পড়তে পারি অথবা কবিতা লিখতে পারি অথবা ফেসবুকিং করতে পারি। ফেসবুক এক আজব জিনিস। মোনাজাতের মতো করে ধরে থাকে সবাই সবসময় এই নীল বেদনার আলো। প্রযুক্তি প্রজন্মকে থামিয়ে দিয়েছে। অথচ ১৪৪ ধারা বহাল তবিয়্যতে নামে বেনামে চলতে থাকে!

পরীক্ষার পড়া সকালে পড়লেই চলবে। একবার দেখলেই লিখতে পারব। অযথা এখন সময় নষ্ট করার মানে হয় না। আমি মোবাইলটা তুলে নিলাম। আমার জীবনে কোন নারী নেই। হাতের খাঁজের ভাঁজে রমণীয় আঙুল নেই কোন। গরম জামার নীচে চেপে থাকা নরম ফুলের জোড়া নেই। অবশ্য পর্নসাইট আছে। আমার এমেচার দেখতে ভাল লাগে।

 

একবার মাস্টারবেইট করে আমার সমস্ত শরীর এলিয়ে গেল। নারী! নারী! নারী! আমি তোমার কাছে পরাজিত নারী। অথচ এখন মনে হচ্ছে তুমিও খুব অচল।

সকালে পরিক্ষা দিতে গিয়ে দেখি পরিক্ষা বাতিল হয়ে গিয়েছে। একজন শিক্ষক মারা গিয়েছেন। ১৪৪ ধারা সবকিছু ঠেকিয়ে দিচ্ছে, মৃত্যুকে ঠেকাতে পারেনি। সকাল ১১টায় মৃত শিক্ষকের নামে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা বসে আছি। সভা শুরু হল ১২টায়। এদেশে কোন অনুষ্ঠানই সময়মত শুরু হয় না। অথচ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সবাই ঐ মৃত শিক্ষকের সময়ানুবর্তিতার কথা বললেন!

 

আমার প্রচণ্ড রাগ ধরে গেল। প্রতারকে ছেয়ে গেছে দেশ। যেকারণে একজন শিক্ষকের প্রশংসা করা হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে সেই শিক্ষা এরা কেউই পায়নি। ছাত্রদের ভেতর থেকেও কথা বলার জন্য আহ্বান এল। আমি সোজা চলে গেলাম লেকটার্নে। বললাম, একজন সময় সচেতন শিক্ষকের মৃত্যুর শোকসভা নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে শুরু হয়েছে আজ। এই হচ্ছে আমাদের সম্মান জানানোর নমুনা! কাজেই বোঝা যাচ্ছে, শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তার সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা এখানে সফলতার মুখ দেখেনি। এই ব্যর্থতার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখবোধ করছি এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

হলসুদ্ধ ছাত্ররা আমার কথা শুনে বেঞ্চে চাপড় দিয়ে হুল্লা শুরু করল। এটা যে একটা শোকসভা সেটা কি সবাই ভুলে গেল? নাকি সবাই আমার মত গাঁজা খেয়ে আছে? শিক্ষকদের মুখে কালো ছায়া দেখে আমি বেরিয়ে এলাম। আমার নেশা লেগেছে। গাঁজা খেতে হবে। এই নষ্ট নগরীতে সুস্থ থাকার উপায় নেই গাঁজা ছাড়া।

 

রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। পেছন থেকে আমার নাম ধরে একটা নারীকণ্ঠের ডাক শোনা গেল। তাকাতে হল। সুন্দরী একজন মেয়ে এগিয়ে আসছে। কাছে এসে বলল, কেমন আছেন?

 

সুন্দরী মেয়ে দেখলেই আমার ওদের উলঙ্গ করে দেখতে ইচ্ছে করে। এই মেয়েটা খুবই সুন্দরী। আমার মতো গাঁজাখোর কেমন আছে তা দিয়ে ওর কি দরকার? আমি বললাম, ভাল আছি। আপনি কে?

 

সে তার নাম বলল। আপনার এক মিনিটের বক্তব্য শুনে খুবই ভাল লেগেছে।

আমি থেকে থেকে ওর বুকের দিকে তাকাচ্ছি। সাহিত্যের ভাষায় এজাতীয় বক্ষকে বলা হয় পীনোন্নত স্তন। আমার মাথায় গাঁজার খিদে ভনভন করে ঘুরতে লাগল। বললাম, ভাল লেগেছে ভাল কথা। বেশিক্ষণ কথা বলতে পারব না। আমি যাই।

মেয়েটাও আমার সাথে হাঁটা শুরু করল। বলল, বেশিক্ষণ কথা বললে কি হবে?

 

একে কি করে বোঝাই? এর পীনোন্নত স্তনজোড়া যদি আমি ছুঁয়ে দিতে চাই, তাহলে কি খুব কদর্য শোনাবে? আমার সেটাই বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেটা বললে এই সমাজ কিংবা ও নিজেই আমাকে চরিত্রহীন বখাটে বলে পেটানো শুরু করবে।

 

অবশ্য মেয়েটা পটবে বলেই আমার বিশ্বাস। বড়শিটা একটু রোমান্টিকভাবে খেলাতে হবে। বললাম, আপনি অত্যন্ত সুন্দরী। সেজন্য বেশিক্ষণ কথা বলা যাবে না। (স্টিকটা কি এখানেই ধরিয়ে দিব? সহ্য হচ্ছে না।)

মেয়েটা ঝলমল করে উঠল। সেটাই হওয়া উচিত। নিজের সৌন্দর্যের কথা শুনলে সব মেয়েই খুশি হয়, তা সে দেখতে যদি ভোদড়ের মতো হয়, তা-ও।

 

মেয়েটা পিছু ছাড়ছে না। বলল, বক্তব্যটা কি আপনি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন?

আমি বললাম, আপনার সাইজ কত?

ও দাঁড়িয়ে পড়ল, সরি? কি বললেন আপনি?

আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বললাম, কিছুই না, আমি আসি।

ও বলল, না, আপনি দাঁড়ান, আপনি কি বললেন?

আমি বললাম, সরি।

ও সজোরে আমার গালে একটা চড় কষে দিল। আমি বোকাচোদার মতো গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকালাম। রাস্তার মানুষজন দাঁড়িয়ে গেল। দুএকজন কাছে এগিয়ে এলো। ও বলল, কুত্তার বাচ্চা, মেয়ে মানুষ দেখলে মাথা ঠিক থাকে না? এই শুয়োরের বাচ্চাদের জন্য রাস্তাঘাটে চলা মুশকিল।

 

প্রচণ্ড একটা ঘুষির দাপটে আমি মুখ থুবড়ে রাস্তায় পড়ে গেলাম। আমার শরীরে কোন শক্তি নেই। গতরাতের মৈথুন আমাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। 

 

অদূরের বন্ধুবান্ধব আমাকে গণপিটুনির হাত থেকে রক্ষা করল। পুলিশ এসে আমাকে থানায় নিয়ে গেল। আমাকে ছাড়ানোর জন্য আমার দোস্তসহ সাঙ্গপাঙ্গরা এলো। কিন্তু থানা থেকে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হল, আমাকে চালান করা হবে। শিক্ষকের মেয়েকে টিজ করা কোন যেনতেন ব্যাপার নয়, কোর্টে জামিন ধরা ছাড়া উপায় নেই।

বিকালেই অনলাইন পোর্টালগুলোতে ফলাও করে আমার সুকীর্তির কথা প্রকাশিত হলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে বহিষ্কার করে দিল।

 

জেলের ভেতর কি গাঁজা পাওয়া যায়? না পাওয়া গেলে আমার কপালে খারাবি আছে। এমনকি আমি দুএকটা খুনও করে ফেলতে পারি। অবশ্য সেটার প্রয়োজন হলো না। গাঁজা পাওয়া গেল। দোস্ত আমাকে পাঁচশো টাকা দিয়ে গেল। জেলের ভেতর নানা রকম ক্যাডার বাস করে। তাদের সাথে লবিং করতে পারলে  তারা ওখানে আসমানের হুরও নামিয়ে আনতে পারে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পেলে জেলার খুশি হয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল সন্ত্রাসের সূতিকাগার। ছাত্রগুলো সব ক্যাডার। এদের জেলে পেলে সন্ত্রাসদমন কয়েকপ্রস্থ এগিয়ে যায়। কারারক্ষীরা আমাকে সাবধান করে দিল, যে ক’দিন আছি, আমি যেন ভাল হয়ে চলি।

জেলজীবন ভালই কাটল। ওস্তাদদের সেবা করে গাঁজার ব্যবস্থাও হল, শুধুমাত্র টয়লেট এর অভিজ্ঞতা ছাড়া। এগারোদিন পরে আমার জামিন মঞ্জুর হল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আমি দেনদরবার শুরু করলাম আমার বহিষ্কারাদেশ বাতিল করার জন্য।

 

আমার কোন রাজনীতি করার দরকার হল না। এখানে কিছু করার প্রয়োজন হয় না। শুধু কথায় সায় দিয়ে যাওয়াই আসল কথা। দুই মিনিটের বক্তৃতাবাজি করে শিক্ষকদের মুখোশ উন্মোচন করার ফল হিসেবেই আমার প্রতি এই অবিচার করা হয়েছে- এরকম একটা তত্ত্ব খুব সহজেই আবিষ্কার হয়ে গেল। সপ্তাহখানেক দৌড়াদৌড়ি করার পর আমি ক্লাস করার অনুমতি পেলাম।

এদিকে আমি ধুমিয়ে গাঁজা খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের অবস্থা ভাল না। যখন তখন কারফিউ জারি হয়ে যাচ্ছে। যাকে তাকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এত সমস্যা আমার সহ্য হয় না।

 

মাঝে মাঝে দূর থেকে মেয়েটিকে দেখি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। প্রাণ খুলে হাসে। ওর পীনোন্নত স্তন থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় জোছনা ঝরে পড়ে। আমি পর্ণ দেখি। চরম মূহুর্তে ওকে ভেবে মাস্টারবেইট করি। আমি হেটে চলি। হাজার বছর ধরে পথ হাটি পৃথিবীর পথে।

আমার ভেতর প্রতিশোধস্পৃহা জেগে ওঠে। ওকে দেখলেই আমার কষ্ট হয়, রাগ হয়, হিংসে হয়। ও প্রতিদিন ক্যাম্পাসে থাকে সন্ধ্যা অব্দি। একটা ছেলের সাথে ঘোরে। মাঝে মাঝে হাত ধরে। ছেলেটা আমার পায়েরও যোগ্য নয়। তবু সে প্রতিনিয়ত ওর হাতের ছোয়া পায়। হয়ত ওরা সবার অগোচরে কারো রুমে যায় ডেট করতে। ছেলেটার সামনে হয়ত ও উলঙ্গ হয়। ওর পীনোন্নত স্তনজোড়া ঝুলে থাকে ছেলেটার মুখের কাছে।

 

মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দেয়ার মত ব্যবস্থা আমার আছে। ওর চাপিয়ে দেয়া ঝামেলা থেকে উদ্ধার পেতে গিয়ে আমি খানিকটা ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছি। ক্ষমতা থাকলে মানুষকে শিক্ষা দেয়া যায়। একটা অরিজিনাল পাথরের ধারাল ক্ষুর আমি সাথে রাখি।

আজকাল শহরে খুন হচ্ছে খুব। এখানে সেখানে লাশ পড়ে যাচ্ছে। বন্দুকযুদ্ধ নামে একপ্রকার যুদ্ধ আবিষ্কার হয়েছে। ভাগ্যিস, সক্রেটিসের আমলে এই জিনিস আবিষ্কার হয়নি, নইলে ব্যাটার বিচার হত না। এই সুযোগে একটা লাশ ফেলে দিতে পারলে মানে মানে কাটিয়ে দেয়া যেত। কিন্ত মানুষ হত্যা মহাপাপ। আমি পাপ করতে চাই না।

 

প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমি ওদের ফলো করি। আমার হাত থাকে পকেটে। আমার পকেটে থাকে পাথরের ধারাল ক্ষুর।

ওরা আমার থেকে পঞ্চাশ ফুট দূরে। অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। আমাকে অতিক্রম করে একটা মটরসাইকেল এগিয়ে গেল। হেডলাইটের আলোয় ওর ভারী নিতম্ব দুলে দুলে চলছে। রফিক আজাদ সম্ভবত এরকম দেখেই বলেছিল- নিতম্বপ্রধান নারী। আজকাল সুন্দরী চেহারা, পীনোন্নত স্তন এবং নিতম্বপ্রধান নারীর এমন সমাবেশ চোখে পড়ে না। একটা থাকলে আর একটা থাকে না।

 

মটরসাইকেলটি ওদের সাথেই ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গেল। একজন নেমে ওদের থামাল। আমার বুঝতে কষ্ট হল না। ওরা ছিনতাইকারী। মুহূর্তের মধ্যে ওর সাথের ছেলেটি হাতাহাতি করতে উদ্যত হল। শালা পাগল নাকি? নায়ক সাজার জায়গা পায় না। মেয়েটা চিৎকার করে উঠল। ছেলেটা পেট চেপে ধরে রাস্তায় পড়ে গেল। আমার কাজটা কারা করে দিল?

আমি দৌড়ে গেলাম। ও আমাকে চিনতে পারেনি। রক্তের একটা স্রোত রাস্তা দিয়ে বেয়ে যাচ্ছে। ও অনুনয় করে বল, ভাই, ওকে হাসপাতালে নিতে হবে, সাহয্য করুন প্লীজ। একটা রিকশা থামিয়ে ছেলেটাকে পাঁজাকোলা করে তুললাম, ও আমার পাশে উঠে বসল। ওর বুক ঠেকে আছে আমার শরীরে। আমার শরীর গরম হয়ে উঠল। মেয়েটি কাঁদছে। ওকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে। এই রিকশা যেন অনন্তকাল এভাবেই চলতে থাকে।

আলো মুখে পড়তেই ও আমার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। নায়ককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হল। তেমন কিছু হয়নি হয়ত। শালার জ্ঞান আছে। কথা বলছে। ক্যাম্পাসের সম্মানিত প্রক্টর এসে হাজির হল। এসেই সবিস্তারে জেরা করতে শুরু করল। যেন হাসপাতালের সবাই ছিনতাইকারী। ওসব আমার বেশিক্ষণ সহ্য হবে না। আমি বেরিয়ে এলাম। একটা স্টিক আছে পকেটে।

আমাকে আবার পেছন থেকে ডাক দিল ও। আমি কি দাঁড়াব? আমার পকেটে অস্ত্র আছে। আমি দাঁড়ালাম। ও এসে বলল, আমাকে একটু বাসায় নামিয়ে দিন।

 

আমরা রিকশা নিলাম। নিরাপদ দূরত্বে বসে আছি আমরা। ওর মোমের মত নরম বাহু আমার গা-য়ে ধাক্কা দিচ্ছে রিকশার ঝাকুনিতে। আমি কি ওকে জড়িয়ে ধরে একটি শাশ্বত চুম্বন এঁকে দেব ওর গোলাপের মত ঠোঁটে?

আমরা কেউ কোন কথা বলছি না। নীরবতা এখানে সবাক। আমি স্টিকটা জ্বালিয়ে দিলাম। ওর বোঝার কথা নয়। রাস্তা ফাঁকা। ক্যাম্পাসের রাস্তায় বাতাসের সাথে উড়ে গেল আমার দুঃখ। আমি ক্ষুরটা বের করে ওকে দেখিয়ে নিজের আঙুলে একটা পোঁচ দিলাম। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ওর সাদা হয়ে যাওয়া মুখ দেখা গেল। আমি রক্তমাখা হাতে ওর স্তন চেপে ধরে অনন্ত মন্থনে ডুবে গিয়ে ওকে চুমু খেলাম। কোন বাধা এল না। ওদের বাসার মোড়ে রিকশা থেকে লাফিয়ে নেমে গেলাম।

আমি ক্যাম্পাসের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। আমার আঙুল অথেকে ঝরে পড়ছে রক্ত। এই পথের ধুলোয় মুছে যাবে তার দাগ।