বুয়েট ক্যাম্পাস (ফাইল ছবি)
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ না থাকলে ঝামেলা বাড়বে
মঈনুল ইসলাম তুহিনপ্রকাশিত : অক্টোবর ১২, ২০১৯
কোথাও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেই ছাত্রলীগও নাই হইয়া যায়— আমার অনেক ভাই-বন্ধুর এহেন ঈমান আমারে আপ্লুত করছে। আপ্লুত মন নিয়া কিছু বলা যাউক।
ছাত্রলীগ কোনও হাওয়াই জিনিশ না। কিছু মানুষ নিয়াই ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে মেধাবীরা কি ছাত্রলীগ করে না? করে তো। এই যে ঢাবিতে দেখেন, আমাদের ডাকসুর শয়ন ভাই বা অর্নি আপু, কী তুখোড় মেধাবী, ছাত্রলীগ করে। তা কেন করে? কারণ ভবিষ্যত, ক্যারিয়ার। এই দেশে মেধার ভিত্তিতে তো চাকরি নাই এখন আর। লিয়াজো লাগে, আপনি সরকার লাইনের লোক কিনা, তা যাচাই বাছাই করার ব্যাপার থাকে। ফলে ক্যাম্পাসগুলায় ছাত্রলীগই ভবিষ্যতে ভালো ক্যারিয়ারকামী ছাত্র ও সরকারের মাঝে লিয়াজোর কাম করে।
এর নানা ধাপ আছে— এক্টিভ ছাত্রলীগ করা, সুশীলটাইপের ছাত্রলীগ করা, টিএসসিতে কালচারাল ছাত্রলীগ করা, ছাত্রলীগবিরোধী কিছু কখনোই না করা ইত্যাদি। রাজনীতি নাই কইরা দিলেই কি ছাত্রলীগ রাতারাতি নাই হইয়া যাবে? আইনের প্রতি এমন অখণ্ড ঈমান দেইখা আমি একটু আপ্লুত। তবে আপ্লুত হইতে হইতে বলা দরকার যে, সন্ত্রাসী সংগঠন যদি কন, তার রাজনীতি করতে আইন লাগে না। সরকারী কর্মচারী, যারা কাগজে `রাজনীতি করব না` মর্মে সই দিয়া চাকরিতে ঢোকে, তারা রাজনীতি করে না?
যেসব প্রতিষ্ঠান এই দেশে সায়ত্তশাসিত (হিহি), ওইগুলার অবস্থা কী? দুইটা ক্যাম্পাসের উদাহরণ দিই। খুবিতে বা কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নাই। কিন্তু ছাত্রলীগ? দুর্নীতি? নিয়োগবাণিজ্য? ভর্তিবাণিজ্য? নির্যাতন? আছে না নাই, খোঁজ নিতে পারেন। প্রায়ই ওইসব ক্যাম্পাসে ঘটা অনেক অপরাধের সাথে ছাত্রলীগের নাম দেখি। খুবিতে পড়া আমার অনেক বন্ধুর ছাত্রলীগার ফ্রেন্ড আছে। আমার নিজের বোনেরও আছে। এই ছাত্রলীগার ফ্রেন্ডগুলা আসলো কইত্থিকা? আবার, ছাত্রলীগের লোকজনের সাথে এই যে বন্ধুত্ব রাখা, সম্পর্ক বা খাতির পাতানো— এর জরুরতও তো আছেই পুরা দেশে।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ না থাকলে বরং আপনার ঝামেলা বাড়বে। আপনার যদি ছাত্রলীগে বন্ধু না থাকে, ভাই না থাকে, আপনের ভবিষ্যৎ কী? পদে পদে এই অভাব অনুভব করবেন আপনে। লাইফের কোনও সেটিংই দেখবেন, ঠিকঠাক চলতেছে না। ফলে ছাত্রলীগ নাই হবে না, হয় না। সিস্টেমের প্রয়োজনে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনেই ছাত্রলীগ থাইকা যাবে। রাজনীতিহীন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ থাকার ব্যাপারে লিগাল কোনও ইস্যুও নাই। কারণ লিগালিটি বা আইন মাইনা তো আর কেউ ছাত্রলীগ করে না। রাজনীতি নাই মানে আসলে ছাত্রলীগ নাই না, ছাত্রদল নাই না, ছাত্র শিবির নাই না, ইশা, কোটা বা স্বতন্ত্র নাই না, দুর্নীতি নাই না, সরকারের নীতির সমালোচনা করলে নানাবিধ ভয়ের নাই হওয়া না, লবিং নাই না, সহমত ভাই বা বড়ভাই নাই না।
সিস্টেমের কারণেই এই নাই হওয়া সম্ভব না। রাজনীতির লগে লিয়াজো ছাড়া বর্তমান জব মার্কেটে আপনি সুবিধা করতে পারবেন না তো। ভবিষ্যতে প্রভাবশালী মানুষ হইতে চাইলেও, হোক সাংবাদিক বা ইঞ্জিনিয়ার, আপনার ছাত্রলীগের লগে খাতির রাখা লাগবে।
তো রাজনীতি নাই মানে আসলে রাজনীতি নাই না, এর মানে হইল, রাজনীতি আন্ডারগ্রাউন্ড। এই আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে সবচাইতে বেশি গ্রাউন্ড পাবে ছাত্রলীগ, তারপর ইসলামপন্থী দলগুলা। রাজনীতি না থাকলে আপনের ক্যারিয়ারও আসলে নাই, আর রাজনীতি থাকার জন্য কোন লিগাল আইনেরও দরকার নাই। ছাত্রলীগের যে রাজনীতি, তা ইলিগ্যালিই তো থাকতে পারে সব জায়গায়। তাইলে রাজনীতি নাই মানে কী? এর মানে হইল, বুয়েটের প্রতি দেশের মধ্যবিত্তের আস্থা ফিরায়ে আনা, যে বাপেরা পোলাদের রাজনীতি করতে না কইরা দেয় বাসা থিকা, ওদের আশ্বস্ত করা। এবং ওরা আশ্বস্ত হইবেনও। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলার প্রতি মধ্যবিত্তের আস্থা ধইরা রাখা খুবই দরকারি জিনিশ, সরকারের জন্যেও। ফলে রাজনীতি নাই। রাজনীতি নাই মানে, এইটুকুই, আর কিছু না।