ক্যামেলিয়া মুস্তফা
ক্যামেলিয়া মুস্তফা ও আমার গ্রামের বাড়ি ইটাউরি
স্বাধীন খসরুপ্রকাশিত : জুলাই ১৭, ২০২৪
২০০৪ সাল, মার্চ মাস। আমি তখন কুলাউড়ায় আমার বাসায়। সিলেটের আমার এক বন্ধু আরজু আলী ফোন করে জানালো ক্যামেলিয়া আপা (ক্যামেলিয়া মুস্তফা) শ্রীমঙ্গলে আসছেন। সাথে সে আছে। আরও আছেন বাংলাদেশ বিমানে কর্মরত সৌখিন থিয়েটার কর্মী শাহরিয়ার রিন্টু এবং বিলেতের চলচ্চিত্রকার আমার বন্ধু রুহুল আমিন। শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ শেষে ক্যামিলিয়া আপা বড়লেখায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে যেতে চান। যেহেতু আমার গ্রামের বাড়ি বড়লেখা এবং ওই মুহূর্তে আমি কুলাউড়া আছি তাই ক্যামেলিয়া আপা আমাকে সঙ্গে চাচ্ছেন। আমি যুক্ত হলাম তাদের সঙ্গে।
ক্যামেলিয়া আপার ডাকে সাড়া দিয়ে যুক্ত হওয়ায় অনেক খুশি হলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। কুলাউড়ায় বাসায় আমন্ত্রণ জানালাম কিন্তু তিনি প্রথমে সরাসরি মাদবকুণ্ড যেতে চান জানালেন। তাই হলো। আমরা প্রথমে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত গেলাম। তারপর ক্যামেলিয়া আপা আমার গ্রামের বাড়ি দেখতে এবং যেতে চাইলেন। ওখান থেকে আমি নিয়ে গেলাম বড়লেখায় আমার গ্রামের বাড়ি ইটাউরিতে। ইটাউরিতে যখন পৌঁছালাম তখন আমার বাড়ির সামনে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে কোনো একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে, মাইকে শুনতে পেলাম।
তালাবদ্ধ আমার জন্ম ঘর খুলে ভেতরে ঢুকলাম। ক্যামেলিয়া আপা ঘুরে ঘুরে খুব আগ্রহ নিয়ে বাড়িটি দেখলেন। তারপর এক গ্লাস পানি চাইলেন আমার কাছে। বাড়ির ডীপ টিউবয়েলের পানি দিলাম, তিনি সময় নিয়ে তৃপ্তি সহকারে পান করলেন। গ্লাসের পানি শেষ করে আরেক গ্লাস পানি চাইলেন, পান করলেন। এরই মধ্যে স্থানীয় স্কুলে যে অনুষ্ঠান হচ্ছিল সবাই জেনে গেছে যে আমি বাড়িতে এসেছি ঢাকা এবং সিলেট থেকে মেহমান নিয়ে। ওরা চলে আসলো আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে। তখন জানতে পারলাম স্কুলে বৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংবর্ধনা আনন্দ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
তাদের আবদার, আমি যখন এসেছি বাড়িতে অনুষ্ঠানে আমাকে যেতেই হবে। সাথে নিয়ে গেলাম ক্যামেলিয়া আপা, আরজু আলি, শাহরিয়ার রিন্টু এবং রুহুল আমিনকে। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা প্রাক্তন স্থানীয় হাজী ইউনুস আলী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা সেলিম। মোস্তফা সেলিম সম্পর্কে আমার কাকা। সে একজন প্রকাশক ও নাগরী বিশেষজ্ঞ। ঢাকায় তার বসবাস, উৎস প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমিসহ আমার সাথের অতিথিরা সবাই খুবই আনন্দিত। আমাকে কিছু বলতে বলা হলো, আমি শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখলাম, বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানালাম।
সবশেষে ক্যামেলিয়া আপাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখতে অনুরোধ করা হলো। ক্যামেলিয়া আপা বক্তব্যের শুরুতেই আমাকে চমকে দিয়ে যে কথাটি বললেন তা হলো আমি স্বাধীনকে জোর করে সাথে নিয়ে তার জন্মস্থান গ্রামের বাড়িতে এসেছি। স্বাধীনের তালাবদ্ধ ঘরে ঢুকেই কি যেন একটা রহস্য ঘেরা অনুভূতি এবং শান্তি অনুভব করলাম। চেয়ে পূর্ণ দুই গ্লাস পানি তৃপ্তি সহকারে পান করলাম। স্বাধীনদের এই ঘর বা বাড়িটা দেখে কেন যেন আমার মনে হলো, এটা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর অপুর ঘর আর স্বাধীন হচ্ছে সেই অপু! সে আমার সাথে আছে। বললেন, এই অনুভূতি আমার কেন হলো তা বলতে পারবো না!
ক্যামিলিয়া আপা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন, অভিবাদন জানালেন। ধন্যবাদ জানালেন উদ্যোক্তাদের। ক্যামেলিয়া আপা মঙ্গলবার সকালে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থা থেকে থেকে চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেছেন! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ক্যামেলিয়া মুস্তফা বাংলাদেশের একজন জননন্দিত অভিনয় ও আবৃত্তি শিল্পী ছিলেন। অগ্রজ অভিনয়শিল্পী ও মাননীয় সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তফা তার ছোট বোন এবং বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দিন আবুল কালাম তার বাবা। ক্যামেলিয়া আপার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আপা যেখানে আছেন ভালো থাকুন, আত্মা শান্তিতে থাকুক।
লেখক: অভিনেতা