কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ‘আমাদের সনডে-সভা’

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৯, ২০২০

কথাসাহিত্যিক কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৪৯ সালের ২৯ নভেম্বর শেষরাতে ৮৭ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন। ১৮৬৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রোববার উত্তর ২৪ পরগণার দক্ষিণেশ্বরে তার জন্ম। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে তার রচিত ‘আমাদের সনডে-সভা’ গল্পটি পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

আমাদের আড্ডা ছিল বিডন-স্কয়ারে সতীপতিদের বৈঠকখানায়। আমরা সাতজন ছিলুম তার আনুষ্ঠানিক সভ্য বা দাসখৎ-লেখা সভ্য কেউ কেরানী, কেউ মাস্টার, কেউ গররাজি, কেউ সাহিত্যিক, কেউ স্বরাজী, কেউ ঘর-জামাই, কেউ বেকার। তাই রবিবারে রবিবারেই আমাদের ফুলবেঞ্চ বোসত সভ্য-সংখ্যা বাড়াবার নিয়ম ছিল না।

দৈবের ওপর কারুর দাপট চলে না। সেটাও ছিল রবিবার, নরেন তখনো এসে পৌঁছয়নি। নরেনের রংটা ছিল একটু ময়লা—ঠিক কালো নয় কিন্তু এই অল্প অপরাধেই সে “কালাচাঁদ” নাম পেয়েছিল।

বেলা সাতটা হয় দেখে বীরেন বলে উঠল “কালাচাঁদ কোথায়?” বীরেনের সুরটা ছিল স্বভাবতই চড়া। প্রশ্নটা তার মুখ থেকে যেই বেরুনো, সঙ্গে সঙ্গেই “এই যে বাবাজি” বলেই, দীর্ঘ ছন্দের, নিকষকৃষ্ণ এক প্রৌঢ় মূর্তি, একদম পাপোস পেরিয়ে ঘরের মধ্যে হাজিরা রাত্রিকাল হলে, হয় আঁতকে উঠতুম, না হয় কাঠ মেরে যেতুম—দুটোর একটা হ’তই। তবু সকলে থতমত খেয়ে গেলুম।

বীরেন বললে—“কই আপনাকে ত’ আমরা ডাকি নি।”

আগন্তুক বেশ সপ্রতিভ ভাবে বললেন—‘সঙ্কোচের কোন কারণ নেই, তোমরা ত’ আর ভুল কর নি আর তা হলেই বা হয়েছে কি—আমি এটর্নিও নই, ডাক্তারও নই যে ফি” চার্জ করবা তবে ডাকটা কানে গেল বলেই এলুম। না এলেও ত’ অভদ্রতা হ’ত। হ’ত না বাবাজি!”

মাস্টার বললেন—“আমরা একজনকে ‘কালাচাঁদ’ বলি, তাঁরই খোঁজ করছিলুম।”

আগন্তুক বললেন—“ওঃ আপনারা বলেন! দাবীটে খুব জবর বটে। তা আপনারা সবই বলতে পারেনা আমি কিন্তু আজ ছ’মাস কলকেতায় বাসা নিয়েছি, চোখ বুজেও চলি না, কই এ পর্যন্ত আমার মত জন্ম-কালাচাঁদ ত’ নজরে পড়ে নি বাবাজি। এ ঘরটিই বড় রাস্তার ওপরেই, এখন থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত রাস্তার দিকে চেয়ে থেকে যদি আমার চেয়েও বড়িয়া কালাচাঁদ দেখতে পান, আমি একটান গুড়ুক পর্যন্ত না টেনেই, পেছু হটে বেরিয়ে যাব।”

আমাদের কালাচাঁদ (নরেন) তখন এসে গেছে। ব্যাঘাত ভাবটা কেটে গিয়ে সকলেই তখন আগন্তুকের কথা উপভোগ করছিলুম—বিশেষ করে তাঁর সাংঘাতিক প্রতিজ্ঞাটা।

নরেন অপাঙ্গে হাসি টেনে বললেন—“আপনার নাম তাহলে কালাচাঁদ?”

আগন্তুক সহজ ভাবেই বললেন—“জলকে জল বলে, সূর্যকে সূর্য বলে, রাতকে রাত বলে কারুকে বোঝাতে হয় না। হুঁকোকে যদি কেউ বাঁশ-গাছ ভাবেন, সে অপরাধ বোধ হুঁকোর নয়। বাবা আমার নামকরণে তাঁর নির্ভীকতার তথা সত্যপ্রিয়তার পূর্ণ পরিচয় রেখে গেছেন, তাই কেউ আমার নাম জিজ্ঞাসা করলে আমি অবাক হই।”

আমি বললুম—“মশাই আমাদের অপরাধ হয়েছে মাপ করবেন, আপনি দয়া করে বসুন। আপনি আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ, আপনাকে “কালাচাঁদ” বলে ডাকতে পারব না, অনুমতি হয় ত’ “কালাচাঁদ খুড়ো” বলবো।”

আগন্তুক বললেন—”বাবাজি’ বলে তার সূচনা তো পূর্বেই করে দিয়েছি।” তারপর তিনি ঠনঠনের চটি জোড়াটি খুলে আসরে আসন নিলেন। আমি তাওয়াদার আভাঙ্গা একটি কলকে গঙ্গড়ায় বসিয়ে নলটি তাঁকে এগিয়ে দিলুম। তারপর চা, পরেই পান, তার পরেই গুড়ুকের ঘন রিপিটিসন (ঢাল সাজ)।

এই ভাবেই স্বপাদ্য মাদুলীর মত বা দৈববাণীর মত আমরা তাঁকে লাভ করি। সেই পর্যন্ত তাঁকে পেলে আমাদের আড্ডা নিবে থাকতো অমন সর্বজ্ঞ সভ্য আমাদের মধ্যে কেউ ছিল না। যদিও তাঁর কাছ থেকে গুড়ুকের আওয়াজ ছাড়া অন্য আওয়াজ কমই পেতুম, কিন্তু যা দু’ একটি পেতুম তা দুর্লভ

আমাদের আড্ডা-অধিকারী সতীপতি আর ঘর-জামাই বিলাসবন্ধু, এই সদস্যদ্বয় ছিলেন ডাঁসা সাহিত্যিক অর্থাৎ উভয়েই তিনটি করে ছোট গল্প লেখা শেষ করেছিলেন। বলাই বাহুল্য—সেই গল্পগুলি নিয়ে তিপ্পান্নখানা মাসিকের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। শেষে “সাহিত্য-শাল্মলী” পত্রিকার সৌভাগ্যবান সম্পাদককে সতীপতি বলেন—“দেখবেন কেউ যেন ওর ওপর কলম চালিয়ে, মাটি করে না দেয়।” তাতে সম্পাদক বলেন—“আমরা পূর্বে পূর্বে অনেক চেষ্টা করে দেখেছি—সোনা মাটি হয় না, তা ছাড়া আমাদের সে সময় থাকলে তো! পুজো এসে গেল, নিজের উপন্যাস তিনখানা না বার করতে পারলে, এক বছর এখন গুদোম ভাড়া গোনো আর উয়ের পেট পোরাও উঃ, তেরো দিনের মধ্যে সতেরো চ্যাপটার টেনে দিতে হবে।”

জামাই বললেন—“কিন্তু বানানগুলো”।–

তাকে আর এগুতে না দিয়েই সম্পাদক শুরু করে দিলেন—“সে দুর্ভাবনা কিছুমাত্র রাখবেন,—আমরা ভদ্রলোকের মান রাখতে জানি ঐ জন্যেই বেহার থেকে কম্পোজিটার আনিয়েছি, যেমনটি দেখবে সেইটি হুবহু বসিয়ে যাবো সাধ্য কি যে লেখকদের বানানে হাত পড়ে। সে। বেয়াদবির জড় মেরে রেখেছি মশাই, তা-নাতো ভদ্র-সন্তানেরা লিখবেন কেন?”

সম্পাদককে প্রস্থানোদ্যত দেখে সতীপতি ব্যগ্রভাবে বলে উঠলো—“দেখুন, এক জায়গায় আছে—“তখন রৌদ্রে পৃথিবী প্লাবিত হচ্ছে, দিগদিগন্ত ভাসছে কি হাসছে’—”

সম্পাদক তাড়াতাড়ি বললেন—“একদম নতুন স্টাইল, নতুন আইডিয়া, ভাষার উন্নতির সঙ্গে ভাব প্রকাশ কেমন সহজ হয়ে আসছে, অন্ধেরও লক্ষ্য এড়ায় না! এই তো চাই, verily in the neighbourhood of Art (একদম আর্টের পাড়ায় পৌঁছে গেছে) ও আর দেখতে হবে না”— বলতে বলতে দ্রুত প্রস্থান করলেন।

সম্পাদকের এই অভিমত, এমন কি বাইরের যে কোন অভিমত, আমাদের আড্ডার নিয়মানুসারে সভার সভ্যদের Confirmation-এর (পাক্কা করণের) অপেক্ষা রাখে।

সতীপতির ইঙ্গিতে ঘর-জামাই বিলাসবন্ধু তাই নিম্নলিখিত প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করলেন —“আপনারা সরাসরি সরেজমিনে আমাদের লেখা সম্বন্ধে সম্পাদকের উক্তি শ্রবণ করলেন এখন আপনাদের অনুমোদন প্রার্থনীয়। তদ্ভিন্ন সতীপতি তথা আমি জানতে ইচ্ছা করি, এখন আমরা উপন্যাস আরম্ভ করতে পারি কি না। এইখানে আমাদের একটি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাচ্ছি। পরস্পরের অজ্ঞাতে এবং গোপনে আমি ৪৩ পৃষ্ঠা আর সতীপতি ২৭ পৃষ্ঠা এগিয়েও পড়েছি ও পড়েছে। অবশ্য তার মধ্যে আমার প্রায় দেড় লাইন pen through করা (কাটা) আছে আর সতীপতি উক্ত ২৭ পৃষ্ঠায়, অনুমান আরো আধ লাইন বাড়াতে পারে।

এই সত্যবাদিতার জন্যে সাধুবাদান্তে আমরা সকলেই কালাচাঁদ খুড়োর দিকে চাইলুম। খুড়ো গড়্গড়ার ভূলুণ্ঠিত নলটি তুলে নিয়ে ছোট্টো একটি টান দিয়ে বললেন—“আগেকার কথা ছেড়ে দাও, তখন গল্প থাকতো ঠাকুমার আর দিদিমার মুখে, অধুনা নাতী নাতনীরা লায়েক হয়ে সে ভার হাতে নিয়েছে সুতরাং এখনকার হিসেবে যাঁর হাত থেকে তিন তিনটি গল্প বেরিয়ে ছাপার অক্ষরে ছড়িয়ে পড়েছে, তাঁর উপন্যাস আরম্ভ করবার আমি ত’ কোন বাধাই দেখি না। সকল সভ্য দেশেই “তিনের পর আর কথাটি চলে —এমন কি “ওয়ান, টু, থ্রি, (one, two, three) বলার পর fire (বন্দুক দাগা) পর্যন্ত বেপরোয়া চলো তিনের হাতুড়ি (hammer) পড়লে তালুক তড়াক করে তলিয়ে যায়,—বাধাবিঘ্ন মানে না তিন দিন পরে মা দুর্গাকেও জলসই করা চলে। পার্লিয়ামেন্টে third reading (তৃতীয় পাঠ) শেষ করে, কি না করা চলে! তিনটি শেষ করে এখন তোমরাও “ওঁ মেরে গেছ,—সৃজন, পালন, লয় সবই করতে পার, উপন্যাস, নবন্যাস, রমন্যাস, সর্বনাশ যেবা ইচ্ছা হয়! তবে গল্পের পর উপন্যাসই সাহিত্যসঙ্গত সোপান! কারণ গেঞ্জি আর গল্প টানলেই বাড়ে,—গল্পকে টেনে বাড়ালেই উপন্যাস,—এ ত’ পড়েই রয়েছে। বুঝলে না! ধরো, তুমি এই বলে একটি ছোট গল্প শেষ করেছ—“লতিকা সেই গভীর নিশীথ অন্ধকারে, লোক নয়নের অলক্ষ্যে—ধীরে ধীরে গঙ্গা বক্ষে ডুবিল! দেখিল কেবল তারকা—ডাকিল কেবল ঝিঝি বেশ, এতে কোন ভদ্রলোকের আপত্তি থাকতে পারে না কিন্তু বাবাজি, লতিকা কি আর ভাসতে পারে না? হাওড়ার বৃদ্ধবহুদর্শী পোলটিতে দাঁড়ালে দেখতে পাবে লোহা ভাসছে, বাহাদুরী-কাঠ ভাসছে, আর এক মোণ সাত সের ওজনের ক্ষীণাঙ্গী লতিকার ভেসে ওঠাটাই কি বড় কথা। এবং যেই লতিকার ভাসা, mind, মনে রেখো–এমনি উপন্যাসের আরম্ভ। তারপর স্রোত আছে, ঢেউ আছে, গঙ্গার দু’ধারি বাবুদের (মালঞ্চ নাই বললুম বাগান আছে,বজরা আছে তারপর পতিতা নিস্তারিণীর প্রাতঃস্নান আছে, যেখানে সুবিধে টেনে তোল না, কেউ বাধা দেবে না। এই সংস্রবে নিস্তারিণীর হৃদয়ের গোপন ও সুপ্ত দেবীভাব হঠাৎ দপ করে পবিত্র হোম-শিখার মত কিরণ ছাড়তে কতক্ষণ বাবাজি? দেখবে কেমন সময়োচিত সুরে বলে! নামও পাবে, দামও পাবো আমি অভয় দিচ্ছি লেগে যাও বাবাজি।”

সতীপতি তড়াক করে মাস্টারকে ডিঙিয়ে এসেই খুড়োর পায়ের ধুলো নিয়ে বললে—“মার দিয়া,—এই তো খুঁজছিলুম। এমন field (ক্ষেত্র) আর নেই—সোনা ফলবো পতিতাদের দুঃখে একটা গোপন ব্যথা—সহরের ভাবী-ভরসাদের প্রাণে গুমোট মেরে আছে,—এ আমি নিজেই জানি। উঃ, তাকে একবার vent (পথ) দিতে পারলে, আমি জোর করে বলতে –cent percent ফোয়ারা ছুটবে। পারবে ত’ বিলাস?”

ঘরজামাই বিলাসবন্ধুর চোখে মুখে হর্ষোচ্ছ্বাস ঠেল-মেরে এসেছিল, সে কথা কইতে পারলে, তার মুখ থেকে মাত্র বেরুলো—“কোন বীর হিয়া’

সতীপতি উত্তেজিত স্বরে বললে, “Enough! বস, আর বলতে হবে না। Research চাই, খেলো কাজ করা হবে না। আজ থেকে সন্ধ্যের বৈঠকে আমাদের আর আশা করবেন না। এই অমল অশ্রু-অঞ্জলি পূজার পূর্বেই দিতে হবে। খুড়োকে শত ধন্যবাদ for the timely hint (ইঙ্গিতের জন্য)।”

খুড়ো। তোমাদের উপন্যাস-এমপারার বলেছেন—“রজনী ধীরে।” তিনি অনায়াসেই বলতে পারতেন—“রজনী ছুটে” বা “রজনী তেড়ো” কিন্তু তা তিনি বলেননি, অতএব—“বাবাজি ধীরে!”

বিলাসবন্ধু। কিন্তু পশুদের প্রলোভনে পড়ে যারা “নিমেষের ভুলে’ বিপথে নীত হয়েছে, যাঁদের feeling (হৃদয়) আছে, তাদের জন্যে তাঁরা কি রয়ে-বোসে কাঁদবেন?

খুড়ো। শোনোইনা বন্ধু, বয়স তো আর মাইনে নয় বাবাজি, ওটায় আমার লোভও ছিল না, কিন্তু বছর বছর সে আপনিই বেড়ে বসেছে। তাতে লাভ হয়েছে কেবল “খুড়ো” খেতাব।

তোমরাও খুড়ো বল, চা খাওয়াও, পান দাও, আর গঙ্গড়ার দখল ত’ দিয়েই রেখেছ। সুতরাং পাপ বাড়াতে আর ইচ্ছে নেই বাবাজি, তাই বলি—সব জিনিসের অভিজ্ঞতাটা ল্যাবরেটরিতে গিয়ে অর্জন করে লায়েক হতে হয় না। উর্বশীর রূপ বা পারস্য সম্রাটের অন্দরমহল কি আর দেখে এসে বর্ণনা করতে হয়। লেখকদের ও-সব বিষয়ে ছাড়পত্র আছে তাঁরা যা লিখবেন— পাঠক তা পড়তে বাধ্যা পতিতাপর্বেও সেই অধিকার কায়েম রেখে, এই আড্ডায় বসেই কল্পনার কেরামতি যত পার চালাও, তোফা হবো অধিকার ছেড়ে পা বাড়ালে,—কে ঘুরচে, কে ফিরচে বুঝতেই পারবে না বাবাজি।

বিলাসবন্ধু। অনুতপ্তা পতিতাদের সত্বর কোন উপায় না করলে সমাজ ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসবে না কি?

খুড়ো। সে দুর্ভাবনায় মগজ মাটি কোরোনা বাবাজি। জমা খরচ ঠিক রাখবার উপায় জবর জবর জোয়ানেরা ইতিমধ্যেই আরম্ভ করে দিয়েছেন। কাজ খালি থাকে কি বাবাজি, বেণী মরবার আগেই ফণি হরির-লুট মানো একদিক ভাঙ্গে অন্যদিক গড়ে, রামের টাকা বিধুর সিন্ধুকে ঢ়োকে,—তফাৎ এই। যেমন reclaim (পুনর্জন) কল্পে পতিতা ‘প্রোপেগেণ্ডার’ করুণ রস সহৃদয়দের বিবশ করছে, অন্যদিকে সদাশয়েরা অন্তঃপুরের ভদ্র মহিলাদের প্রাণে বীর-রসের আমদানীও করচেন, balance ঠিক থাকবে বাবাজি, ভেবনা। উভয়েরি উদ্দেশ্য সাধু সিদ্ধি সম্বন্ধে আমি অভয় দিচ্ছি,—পুজোর বাজারে হাজার কাপি কেটেই যাবো

এই সময় টং করে একটা বাজলো! খুড়ো চমকে বলে উঠলেন—“ইস তোমরা আজ করলে কি! বাড়ীতে ত’ উপন্যাস নয়—সে যে জ্যান্তো জিনিস!”

সতীপতি বললে—“তাতে কি হয়েছে!” খুড়ো কাছাটা ফিট করতে করতে বললেন—“এমন কিছু না, তবে আমারও সেই দুর্বোধভাষায় দুটো মোন্তোর-পড়া জিনিস কি না, তার ওপর চারদিকেই বীরবাতাস বইছে! শোবার ঘরের জানলার আবার একখানা কপাট ভাঙ্গা, কখন একটু ফস করে লেগে কি সর্বনাশ করে দেবে, তাই ভয় হয় বাবাজি!”

পরে চটি পায়ে দিতে দিতে বিলাসবন্ধুকে বললেন—“দেখো বাবা জামাই,—এখন ঘর ঘরকরনা সবই তোমাদের হাতে”—বলেই দুর্গা দুর্গা বলতে বলতে খদ্দরের চাদরখানা বগলে গুঁজে বেরিয়ে পড়লেন।

সেদিনকার সনডে-সভা ভঙ্গ হল।