কাজী শাহেদ

কাজী শাহেদ

কাজী শাহেদের পাঁচটি কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২১, ২০২১

নারী

বন্ধু হে, সমুদ্রের ধারক তোমার দুটি চোখে আমি কখনো জল দেখিনি!
আমি শত সহস্র বছর নীল জোছনার খোঁজ করেছি তোমার চোখে
কিন্তু হে অপ্রকাশিতা
তুমি কখনোই মেলে ধরোনি তোমায়
কখনোই চাওনি ওই চোখে
আবেগহীন রূঢ় বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছো বারবার
হয়েছো বাস্তববাদী
তুমি হিমালয় চিরে বইয়ে দিয়েছো স্রোতস্বিনী
কবিতার আবেদনে সুখ খোঁজোনি তুমি
শিউলি ফুলের মালা খোঁজোনি তুমি
খুঁজেছো তার হারিয়ে যাবার প্রাপ্তি!
তুমি বারবার বাস্তববাদী

অথচ তোমার হৃদয়েও বাজে শত প্রকাশের আকুতি
অবিরাম বদলের স্মৃতি
প্রায়ই ভাবো, স্রোতস্বিনীর রাগে গা ভাসিয়ে দিবে
শিউলির গন্ধে মেতে উঠবে জোনাকির খেয়ালে জোৎস্না উৎসবে।
কিন্তু সব চাওয়া ভুলে
বাস্তবতার চোখে চেয়ে
থেকে যাও প্রকাশের আড়ালে

বিলাপ

একটা বুনো মেঘ পানকৌড়ির চোখ
অভেদ্য জীবনে
সরলতম শোক

দিঘির দুই পাড় ভরা যৌবন
নিঃশব্দ মেঠোপথে
কিশোরীর মন

বহুদূরে জারুলের বন একলা আকাশ
ছায়া জলে জলকেলি
পতিহীনার নিগূঢ় নিশ্বাস

কুয়াশায় মাখামাখি বেহুলার ঘর
ভূজঙ্গ বিলাপে
কেঁপে ওঠে মহীধর

দিনশেষে

দিনশেষে পাখিটি থাকে না কারোর
নীল তাকে ভালোবেসে একে দেয় নীল টিপ
মেঘ তাকে ভালোবেসে দেয় মখমলে রঙিন আদর

তবুও সে থেকে যায় নিজের
থেকে যায় নিজের ভেতর।

নদীতীরে কিশোরীর মুখ তাকে ব্যাকুল করেনি
কাশফুলে এঁকে দ্যায় জোনাকির দর্প
একলা আবেগ

ফিনিক্সের ডানায় চেপে হয়েছিল প্রতিমা সূর্যের
তবু তারে সমুদ্র টানে
শূন্যতা খোঁজে শঙ্খচিলের চোখে

তবুও সে থেকে যায় নিজের
থেকে যায় নিজের ভেতর।

বেহায়া বলদ

একটা শিক্ষিত মূর্খ পৃথিবী গিলে খাবার নেশায় মহাকাশ হতে চায়!
নির্লজ্জতাকে সে শিল্প ভেবে খুঁজে ফেরে নিজেকে ভিঞ্চির ক্যনভাসের শেষাংশে!
আহারে বেহায়া বলদ!

চোখে তার খোলা তরবারির দৃশ্য
বীভৎস
মুখে তার লালাঝরা ঘ্রাণ
চামড়ার ভাঁজ খুলে বেরিয়ে পড়ে পুরাতন শ্বাসযন্ত্র
তবুও সে নতুনের মতো জ্ঞানে আর বিজ্ঞানে মহাকাশ হতে চায়!
ধর্মধ্বজী খল সে তবুও ভালোবাসি বলে সত্যের খোঁয়াড়ে!
আহারে বেহায়া
আহারে বেহায়া বদল।

আপোফিস

একটা ডানাকাটা রাজহাঁসের ক্রন্দন শুনে থমকে যাই
ভালোবেসে কাছে যাই
ভালোবাসি।
তখনি বুঝে ফেলি, এত ডানাকাটা নয়!
সে ডানা লুকিয়ে নিজেকে লুকাচ্ছে!
ভেতরে তার কোনো ভীতি নেই!
সে শয়তানি করছে
সে আপোফিস হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে রত
সবই শৃঙ্খলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার তাগিদে!
তাকে ভণ্ড বলা যেতে পারে
তুমি চাইলে অন্ধকারও বলতে পারো।

প্রথম সুর্যোদয়ে আমাদের পূর্বপ্রজন্মের উচ্ছ্বাসে সে রক্ত চেয়েছিল
তাকে রক্ত দিয়ে পূর্বপ্রজন্ম আজকের উচ্ছ্বাস এনে দেয়
এনে দেয় রক্তিম সূর্য
আর তাইতো চারপাশে সীমারেখাহীন আলোকিত বৃত্ত।

তারপর
সে মিশে যায়, লুকায়, তাল মেলায়!
আর আজকে ডানা কাটা রাজহাঁসের ভান করে আবারো অন্ধকার করে দিতে চায়
উচ্ছ্বাসহীন সূর্যহীন পৃথিবী বানাতে চায়।

তাই সাবধান
পূর্বপ্রজন্মের মতো করে চিনে নাও আপোফিসকে