কাজী নাসির মামুন
কাজী নাসির মামুনের রাষ্ট্রনৈতিক সনেটগুচ্ছ
প্রকাশিত : জানুয়ারি ১২, ২০২৫
এক.
প্রতিটি সকাল যেন প্রসাধন। আমি মুঠো ভরে
দিয়েছি তোমায়। তবু সারারাত জেগে-থাকা পাখি
ডানায় লুকিয়ে রেখে পৃথিবীর সব মাখামাখি
উদভ্রান্ত অপচয় রুখে দিতে চাই। থরে থরে
সাজানো পাতায় প্লুত বেদনারা একা একা ঝরে।
পত্রল রাষ্ট্রের নীতিহীনতাই আমি লিখে রাখি।
সাজঘরে বসে বসে তুমি দেখো তুমুল বৈশাখী
ঝড়ের বাতাস। আমি মুক্তিকামী। দূরে গেছি সরে।
সিঁথির সঙ্গীত শুনে দূরগামী চুলের আশায়
চিরুনি থাকে না বসে। তার কাজ শোভন শৃঙ্খলা।
যতটা আঁচড় দিলে সমাজের প্রত্ন ছলাকলা
মনের আয়ত্তে আসে, চিরুনির মৌন ভূমিকায়
আমিও বিপ্লবী নাম- ততটাই লাঙলের ফলা।
তোমার পুঁজির প্রেম! অহেতুক এত কথা বলা।
দুই.
কথার সবুজ বনে লুকিয়েছে তোমার বয়স।
তেঁতুল গাছের ভূত শিশুরাই শোনে অবিরাম
বিগলিত রূপকথা তুমিও কি কথার বাদাম?
কুটকুট হৃদয়ের অন্ধ লাঠি? শাসনের কষ
হঠাৎ লেলিয়ে ভাবো, মনভাঙা প্রণয়ের রস
মূলত পুলিশ! ভয়ে টপটপ পাতার প্রণাম।
আমিও বোঁটার মতো ছিঁড়ে গিয়ে ঠুকেছি সালাম।
অমূল্য প্রেমের নামে গাধারাই স্নেহপরবশ।
গাধার মনের জলে তোমাকেই ঘোলা করে রাখি;
ড্রেসিং টেবিলে তবু বহুমুখি জলো নিপীড়ন
আয়নায় ভাসে; ক্ষুব্ধ বলিরেখা থাকে না গোপন।
তুমি তো শ্রাবণসুখে সামাজিক শেকলের পাখি;
সংগ্রামের সিঁড়ি ভেঙে আমাকেই করেছো শোষণ;
যেন আমি কোল্ড ক্রিম, শরীরের মত্ত প্রসাধন।
তিন.
প্রসাধন ফেলে রেখে ঘুমিয়েছে তোমার কলম
বিদীর্ণ অক্ষরে জমা আমাদের যতটা আলাপ
পণ্যের বিবিধ রঙে তারও বেশি অনবদ্য পাপ
দেশে দেশে জমা হয় রোজ। কত অনুপম
প্রেমের সদায় ব্যাগে ভরে রেখে তোমার শরম
পরাজয় ছুঁয়ে আছে। তাই এত লেখালেখি চাপ
সইবে না। প্রেমের চিঠির মতো মগ্ন খর তাপ
কলমে জমিয়ে রেখে নীরবতা সততায় কম।
সঙ্কটের মহাকাল গুঁজে দিয়ে তোমার খোঁপায়
বিদিত সময় যেন ঘোষখোর, চুলে আবাসিক।
সুগন্ধি পয়সা মহাজোটে, তুমি আমলা তান্ত্রিক;
ঝনঝন বিক্ষোভের ভবঘুরে শব্দ শোনা যায়।
দুধমাখা হৃদয়ের কত ভাত ছড়িয়ে অধিক
মিছিল ঘনিয়ে আসে রাজপথে মনোজাগতিক।