কাজী নজরুল ইসলামের পাঁচটি ইসলামি গান

পুনর্মুদ্রণ

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৪, ২০২০

এক.
ওরে ও মদিনা বলতে পারিস কোন সে পথে তোর
খেলত ধূলামাটি নিয়ে মা ফাতেমা মোর।

হাসান-হোসেন খেলত কোথায় কোন সে খেজুর বনে
পাথরকুচি কাঁকর লয়ে দুম্বা শিশুর সনে
সেই মুখকে চাঁদ ভেবে রে উড়িত চকোর।।

মা আয়েশা মোর নবিজির পা ধোয়াতেন যথা
দেখিয়ে দে সে বেহেশত আমায় রাখ রে আমার কথা
তোর, প্রথম কোথায় আজান-ধ্বনি ভাঙলো ঘুমের ঘোর।।

কোন পাহাড়ের ঝর্ণাতীরে মেষ চরাতেন নবি
কোন পথ দিয়ে যেতেন হেরায় আমার আল-আরাবি
তুই, কাঁদিস কোথায় বুকে ধরে সেই নবিজির গোর।।

দুই.
দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলাদেশের কুটির হতে।
বেহুঁশ হয়ে চলেছি যে কেঁদে কেঁদে কা’বার পথে।

হায় গো খোদা, কেন মোরে
পাঠাইলে হায় কাঙ্গাল করে
যেতে নারি প্রিয় নবির মাজার শরিফ জিয়ারতে।।

স্বপ্নে শুনি নিতুই রাতে যেন কাবার মিনার থেকে
কাঁদছে বেলাল ঘুমন্ত সব মুসলিমেরে ডেকে ডেকে।
ইয়া এলাহি, বল সে কবে
আমার স্বপন সফল হবে,
গরিব বলে হবো কি নিরাশ মদিনা দেখার নিয়ামতে।।

তিন.
সাহারাতে ফুটল রে ফুল রঙিন গুলে লালা
সেই ফুলেরই খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ালা।

সে ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি চাঁদ-সুরুয, গ্রহ-তারায়
ঝুঁকে পড়ে চুমে সে ফুল নীল গগন নিরালা।।

সেই ফুলেরই রওশনিতে আরশ কুর্শী রওশন,
সেই ফুলেরই রং লেগে আজ ত্রিভুবন উজালা।।

সেই ফুলেরই গুলিস্তানে আসে লাখো পাখি,
সে ফুলেরে ধরতে বুকে দোলে রে ডালপালা।।

চাহে সে ফুন জীন ও ইনসান হুরপরী ফেরেশতায়
ফকির দরবেশ বাদশাহ চাহে করতে গলে মালা।।

চেনে রসিক ভোমরা বুলবুল সেই ফুলের ঠিকানা
কেউ বলে হযরত মোহাম্মদ কেউ বা কামলিওয়ালা।।

চার.
নিখিল ঘুমে অচেতন সহসা শুনিনু আজান
শুনি সে তকবিরের ধ্বনি আকুল হলো মনপ্রাণ
বাহিরে হেরিনু আসি বেহেশতি রৌশনীতে
ছেয়েছে জমিন ও আসমান
আনন্দে গাহিয়া ফেরে ফেরেশ্‌তা হুর গেলেমান
এলো কে, কে এলো ভুলোকে! দুনিয়া দুলিয়া উঠিল পুলকে।

তাপিরর বন্ধু, পাপীর ত্রাতা, ভয়-ভীত পীড়িতের শরণ-দাতা
মূকের ভাষা নিরাশার আশা, ব্যথার শান্তি, সান্ত্বনা শোকে
এলো কে ভোরের আলোকে।।

দরুদ পড়ো সবে: সাল্লে আলা মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা
কেহ বলে, এলো মোর কামলিওয়ালা,  খোদার হাবিব কেহ কয় নিরালা
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা
কেহ বলে, আহমদ নাম মধু ঢালা মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা
মজনুঁরও চেয়ে হলো দিওয়ানা সবে, নাচে গায় নামের নেশায় ঝোঁকে।।

পাঁচ.
হেরা হতে হেলেদুলে
নূরানি তনু ও কে আসে, হায়!
সারা দুনিয়ার হেরেমের পর্দা
খুলে খুলে যায়
সে যে আমার কামলিওয়ালা
কামলিওয়ালা।

তার ভাবে বিভোল রাঙ্গা পায়ের তলে
পর্বত জংগল টলমল টলে
খোরমা খেজুর বাদাম জাফরানি ফুল
ঝরে ঝরে যায়
সে যে আমার কামলিওয়ালা
কামলিওয়ালা।।

আসমানে মেঘ চলে ছায়া দিতে
পাহাড়ের অঁসু গলে ঝর্ণার পানিতে
বিজলী চায় মালা হতে
পূর্ণিমা চাঁদ তাঁর মুকুট হতে চায়।
সে যে আমার কামলিওয়ালা
কামলিওয়ালা।।