করোনা ভাইরাস: সঙ্কটের ভয়াবহতা ও উত্তরণ
শেষ পর্ব
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : এপ্রিল ১৬, ২০২০
চিকিৎসকরা লড়ছেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিরোধে। সামান্য কিছু দোষত্রুটি বাদ দিলে চিকিৎসকরা সাহসী ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু চিকিৎসকের যথাযথভাবে কাজ করবার সুযোগ কম। চিকিৎসকরা এখন পর্যন্ত সঠিক সুরক্ষা পাচ্ছেন না। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত একটা ল্যাজেগোবরে অবস্থা চলছে। নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রতিদিন আতঙ্কের নানা কারণ বাড়ছে। মাহফুজ আনাম তার এক লেখাতে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের চেয়ে বড় বিপদ আমাদের মহারথীদের অযোগ্যতা যা বহুদিন ধরে বিপজজ্জনক হয়ে আছে। তিনি দেখিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস সম্পর্কে চমৎকার দিকনির্দেশনা দিলেও, এই অযোগ্য মানুষদের জন্য তা কিছুতেই আগাচ্ছে না। বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গাফেলতি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায় দায়িত্বহীনতায় বহু অঘটন ঘটে যাবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে বসে আছে। সত্যিকার অর্থে এসবের জন্য কে দায়ী, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। সেরকম অনুসন্ধানের সুযোগ এই মূহূর্তে কম। কিন্তু যিনি যে আসনে বসে রয়েছেন, কর্তব্য অবহেলার দায় তাকে নিতেই হবে। যদি দায় শুধু এর ওর ঘাড়ে চাপানো হয় তাহলে কাজই আগাবে না। যিনি দায় নেবেন না, তিনি কর্তাব্যক্তি সেজে চেয়ারে বসে থাকবেন কেন, দায়িত্বশীল পদ ছেড়ে দেবেন।
যা আজকের প্রধান সঙ্কট তা ঘটেছে পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা না নেয়ার কারণে। করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে বিরাট অর্থনৈতিক বিপর্যয়। প্রস্তুতি না থাকার কারণে বহু ধরনের অঘটন ঘটছে। মানুষ প্রতিদিন টনকে টন দুধ ফেলে দিচ্ছে। দুধ কেনার গ্রাহক নেই, মিষ্টির দোকান সব বন্ধ। রাজধানীতে যে দুধ পাঠানো হতো সেটা আর পাঠানোর সুযোগ নেই। প্রচুর খাবার কেনার লোক নেই, মাছ মাংস পচন ধরেছে, তা ফেলে দিতে হচ্ছে। কিন্তু প্রথম থেকে যদি একটা পরিকল্পনা থাকতো, তাহলে এরকম ঘটতো না। বাংলাদেশে যেখানে খাবারের অভাব, মানুষের পুষ্টির অভাব; সেখানে আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া থাকলে এসব খাবারের সরবরাহ চালু রাখা যেতো ভিন্নভাবে। পূর্ব প্রস্ততি থাকলে বিভিন্ন খাবারের অনেকটা স্থানীয়ভাবে দরিদ্র মানুষকে দেয়া যেতো। খাবার নেই কিন্তু টনকে টন খাবার ফেলে দিতে হচ্ছে। যারা এসব খাবারের ক্ষুদ্র উৎপাদক তারা কপর্দকহীন হয়ে পড়ছে। পূর্বে প্রস্তুতি থাকলে খাবারের এসব চেইন বজায় রাখা যেত আগে থেকে পরিকল্পনা করে। কী কী বন্ধ করতে হবে, আর কী কী বন্ধ করলে বিপদ হবে আগে থেকে জানা থাকলে এমনটা হতো না। রাস্তায় নামা মানেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নয়, সংক্রামিত হতে হলে করোনা ভাইরাস বহনকারীর সংস্পর্শে আসতে হবে। যদি পূর্ব থেকে পরিকল্পনা নেয়া হতো, তাহলে কী করা যেতে পারতো? যাদের সেভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই তারা ঘরে থাকবে। যাদের প্রয়োজন রয়েছে, যারা কাজ না করলে রাষ্ট্র একেবারে অচল হয়ে যাবে তারা সুরক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে। যদি বিরাট সংখ্যক মানুষ গৃহবন্দি থাকে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাবে, তখন অন্যদের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পরিকল্পিতভাবে পথ চলা কঠিন কিছু ছিল না। সেরকম পরিকল্পনা নিতে না পারার জন্য, উৎপাদিত বহু পণ্য আর কাজে আসছে না। যদি প্রথম থেকে ভয়াবহতা মাথায় থাকতো, সবকিছু গুছিয়ে আরো সুন্দরভাবে করা যেত।
পূর্ব প্রস্তুতি নিলে বহুকিছু যেমন এড়ানো যেত না ঠিক বহু সঙ্কটই এড়ানো যেত। করোনা ভাইরাসের ব্যাপারটা ভূমিকম্পের মতো ছিল না যে, প্রস্তুতি নেয়া বা সঙ্কটকে মোকাবেলা করার সুযোগ ছিল না। যদি পূর্ব প্রস্তুতি থাকতো বহুকিছুই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে জনগণকে সচেতন করা যেত। ডা. ইকবাল আরসালান বলেছেন, যা আমরা শুরু করেছি সেটা অনেক দেরিতে শুরু করেছি। যদি ঠিক সময়ে শুরু করা যেত, তাহলে বহুকিছুর সমাধান সম্ভব ছিল। তিনি মনে করেন, সমন্বয়হীনতা ছিল আর একটি সঙ্কট। প্রথম থেকে বলা হয়েছিল, সব ঠিক আছে, সবকিছু হয়ে যাবে। তিনি মনে করেন, এইরকম কথা বলে মানুষকে সচেতন করা সম্ভব ছিল না। তিনি যুক্তিসঙ্গত কথা বলেছেন। তিনি বারবার বললেন, বহু দেরিতে সব কিছু আরম্ভ করা হয়েছে এবং করোনার বর্তমান ভয়াবহতার মধ্যেও দায়িত্বশীলরা জাতীয় কমিটির দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী কাজগুলি ঠিকমতো করছে না।
কার্যকর যে হচ্ছে না, সেটা বোঝা যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন লিখিতভাবে, সেখানে প্রায় সবগুলি বিষয়কে আলোচনায় রাখা হয়েছে। যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা সেটা। কিন্তু তারপরেও নানারকম অভিযোগ আসছে। দূরে বসে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হচ্ছে না, কাদের গাফেলতির কারণে সেগুলি পালিত হচ্ছে না। এরই মধ্যে নানারকম সময়ে বলা হচ্ছে, করোনার অষুধ আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু সারা পৃথিবী যখন বলছে করোনার চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট অষুধ নেই, তখন বাংলাদেশ কী করে অষুধ আবিষ্কার হয়েছে সে কথা বলছে। জাপান থেকে আবিষ্কৃত যে অষুধকে জাপান নিজে করোনার অষুধ বলছে না, বাংলাদেশের অষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেগুলিকে কীভাবে করোনা অষুধ হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে? বাংলাদেশের সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী এখনো করোনার ভয়াবহতাকে আমলে নিচ্ছে না, নিজেদের সুযোগ সুবিধাকে বড় করে দেখছে। খুব স্বাভাবিক, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কী করে করোনার ভয়াবহতা হৃদঙ্গম করবে?
যদি এখনো সামনের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বাঁচতে চাই, কৃষির দিকে নজর দিতে হবে। গ্রামের লোকসংখ্যা কম, সেখানে দূরত্ব বাঁচিয়ে কাজ করা সম্ভব। ফলে কৃষিকর্মে যুক্ত মানুষদের সহযোগিতা দিয়ে যেতে হবে। কিছু কিছু প্রয়োজনীয় উৎপাদন চালু রাখতে হবে। হাঁস-মুরগি গবাদি পশু পালন বা চাষ যেন বন্ধ না হয়ে তার জন্য সকল অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দিয়ে সেখানে টাকা ঢালতে হবে, বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রি উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। সকলকে উৎসাহ জোগাতে হবে নিজের বাড়ির সঙ্গে চাষযোগ্য জমিতে কিছু একটা চাষ করার জন্য। যারা এই উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখার সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদেরকে সচেতন করতে হবে নিজেদের সুরক্ষা সম্পর্কে। যতটা সম্ভব বয়স্কদের বাদ দিয়ে কমবয়স্কদের যুক্ত রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ, বিদুৎ, পানি, গ্যাস, প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ সচল রাখতে যারা কাজ করছে তাদের কথা আলাদাভাবে ভাবতে হবে। পুলিশসহ সবকিছু সচল রাখতে যারা সংশ্লিষ্ট সকলে যেন সংক্রমণের শিকার না হয়, যেন সুরক্ষা পায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। মানুষজন গৃহবন্দি থাকছে যতদিন, তাদের সুরক্ষা লাভের সুযোগ বাড়ছে।
করোনার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার পর যদি সকল রকম বিপর্যয় থেকে প্রাথমিকভাবে বাঁচতে চাই, কৃষিই আমাদের বাঁচাবে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর যখন কিছু ছিল না, প্রথম সুরক্ষা দিয়েছিল কৃষি অর্থনীতি। যুদ্ধের সময় কৃষিকাজ বন্ধ ছিল না। সারা পৃথিবীর অর্থনীতির মূল হচ্ছে কৃষি বা খাদ্য। মানব সভ্যতার প্রথম অর্থনীতি কৃষি বা চাষাবাদ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে যা করতে হবে, চাষাবাদ চালু রাখা আর খাদ্য সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া। চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা ভালো। বাংলাদেশে আগে যেমন কৃষকরা বীজ উৎপাদন করতো, এখন আর তা নয়। বীজ কিনে চাষাবাদ করা হয়। বীজ যদি ঠিকমতো না পাওয়া যায়, বিপদ আরো বাড়বে। ফলে কৃষকরা আগের মতো করে বীজ তৈরি করবার পদক্ষেপ নেবে কিনা তা নিয়ে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। নিশ্চয় এ ব্যাপারে টেলিভিশনের বিরাট ভূমিকা রাখবার সুযোগ রয়েছে। টেলিভিশন এ মুহূর্তে একটা বড় অস্ত্র যদি সেটাকে সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়।
চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা করোনা ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। ফলে গ্রামগুলিকে যতটা সম্ভব এই আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সংকট এড়াবার পথ যখন নেই, খুব ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচকের মতো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সকলে মিলে আতঙ্ক না ছড়িয়ে বাস্তবতা মেনে নিয়ে আগাতে হবে। সকল বিপদে উদ্ধারের একটা না একটা পথ থাকবেই। পথটা খুঁজতে হবে, সেজন্য সবচেয়ে বেশি দরকার গুজবে কান না দেয়া আর সমন্বিতভাবে এবং পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়া। সকলে আমরা একটা ভয়াবহ যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যার বিরুদ্ধে লড়াই সে আমাদের কোনো সচেতন শত্রু নয়। নিজে কিছু না বুঝেই আমাদের আক্রমণ করে বসছে। কথাটা তো ঠিক আমাদের নিজেদের অসতর্কতার জন্য সে বিরাট হয়ে উঠেছে। যদি পাশ্চাত্য আগে সচেতন হতো, তাহলে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া এইরকম দেশগুলি বিপদে পড়তো না। যদি তারা বিপজ্জনক পরিস্থিতির শিকার না হতো আমরা অনেক বেশি নিরাপদ থাকতে পারতাম। কিন্তু যা ঘটে গেছে তা ফেরানো যাবে না। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকেই কাজ আরম্ভ করতে হবে। প্রধান কাজটাই হচ্ছে, রাষ্ট্রের সকল সামর্থ্য, সকল সম্পদ এই লড়াইয়ে নিয়োজিত করা।
লড়াইয়ের জায়গা প্রধানত তিনটা। যাতে রোগ না ছড়ায় তার জন্য যতবেশি মানুষকে গৃহবন্দি করে রাখা। যারা গৃহবন্দি থাকবে তাদের জন্য ন্যূনতম খাবার নিশ্চিত করা। না খেয়ে যেন কাউকে মরতে না হয়। মানুষ বেঁচে থাকলে আবার সম্পদ তৈরি করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে এরই মধ্যে যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। গরিবদের খাদ্য চুরি করলে তিনি ক্ষমা করবেন না, তাও বলেছেন। কিন্তু তারপরেও খাদ্য চুরি হয়ে গেছে, সাধারণ মানুষের কাছে ঠিকভাবে খাবার পৌঁছাচ্ছে না। মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রি ঠিক মতো পৌঁছাতে হলে বিভিন্ন সমাজকল্যাণ সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, বাম সংগঠনের তরুণ কর্মীদের কাজে লাগাতে হবে। এরই মধ্যে তারা অনেকে নিজ উদ্যোগে স্বল্প সামর্থ্য নিয়ে কাজ আরম্ভ করেছে। প্রথম ত্রাণ নিয়ে তারাই গেছে মানুষের কাছে। এর আগে প্রতিটি বড় বড় দুর্যোগে তাদের ইতিবাচক ভূমিকা প্রমাণিত। যখন সংশ্লিষ্টরা চুরি করেছে, তারা নিঃস্বার্থভাবে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ভাষণ মনে রাখলে দেখা যাবে, তিনি কাদের জন্য আগাতে পারেননি। তিনি যথেষ্ট ভদ্রভাষায় কাদেরকে বারবার চোর বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন, প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করার জন্য সঙ্গে থাকতে হবে সকল গণমাধ্যমগুলিকে। গণমাধ্যম এ সময়ে মানুষকে সাহস জোগাতে বিরাট শক্তি। বিশেষ করে দেশের গণমাধ্যমের প্রধান ব্যক্তিত্বরা পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করবেন।
নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল করতে হবে, বন্ধ থাকা বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলিকে সেজন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধে মেলাঘর হাসাপাতালের অভিজ্ঞতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ অনেকের রয়েছে। তিনি একাজে সহযোগিতা দিতে পারবেন। ডা. ইকবাল আরসালান সেক্ষেত্রে আরো একজন যোগ্য ব্যক্তি। চিকিৎসাসেবা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল মানুষকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আর তা প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করা আর একটা বড় কাজ। সেজন্য টেলিভিশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বোধগম্য ভাষায় করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বলা, সুরক্ষিত থাকার পথ দেখানো। সাধারণ মানুষরা বিজ্ঞানের কথা সহজভাবে বললে গ্রহণ করবে না, হতেই পারে না। কারণ তাদের জীবন সংগ্রাম বিজ্ঞানসম্মতভাবেই পরিচালিত হয়ে থাকে। নাহলে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তারা ফসল ফলাতে পারতেন না। ঋতুর নিয়ম মেনে তারা চাষ আবাদ করেন, পুরোহিতের কথা শুনে নয়। বিজ্ঞানের কথা সকলের আগে তারা গ্রহণ করবে যদি তাদেরকে সঠিকভাবে বোঝানো যায়।
যতদূর মনে হচ্ছে বাংলাদেশ একা এই বিপদ সামলে উঠতে পারবে না। কিন্তু ভিন্ন কোনো দেশের সাহায্য পাওয়া কঠিন এখন। কিন্তু তারপরেও মনে হয়, তিনটা দেশকে বাংলাদেশ হয়তো পাশে পাবে। তিনটা দেশ হলো চীন, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়া। জাপান নিজে বিপদে পড়লেও এখনো বেশ সুরক্ষিত। চীন চাইলে একাই বিরাট সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়া এরই মধ্যে বাংলাদেশের সহযোগিতা করার কথা বলেছে। বাংলাদেশকে তাদের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা আর পরামর্শ নিতে হবে। চীন আর দক্ষিণ কোরিয়া নিঃসন্দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সবচেয়ে ভালোভাবে নির্দেশনা রাখতে পারবে। কঠোরভাবে খেয়াল রাখতে হবে, বাংলাদেশের কিছু কর্তৃত্বকামী পদাধিকারীরা নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে যেন সেসব পরামর্শকে গুলিয়ে না দেয়। বাংলাদেশের কৃষি এবং সামগ্রিক অর্থনীতি সচল রাখার জন্যও চীন, জাপান আর কোরিয়ার পরামর্শ নিতে হবে। মালয়েশিয়ার দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদ তাঁর ‘আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বারবার বলেছেন, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়া মালয়েশিয়ার অর্থনীতি আর বিভিন্নরকম উন্নয়নে কীভাবে পরামর্শ দিয়ে আর প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করেছিল। মাহাথিরের শ্লোগানই ছিল পশ্চিম থেকে ‘পূবের দিকে দৃষ্টি ফেরাও’।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক