
কমলাকান্তের দপ্তর
মো. খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সলপ্রকাশিত : জুলাই ২৫, ২০১৮
বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা উপন্যাসে আধুনিক ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাত। তিনি উনিশ শতকের সাংবাদিক এবং ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। তার ছদ্ম নাম হিসেবে তিনি ‘কমলাকান্ত’ নামটা বেছে নিয়ে ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্ত তিন খন্ডে রচিত। গ্রন্থের শুরুর খন্ডটি হলো ‘কমলাকান্ত দপ্তর’ যেখানে ১৪টি সংখ্যা ১৪টি শিরোনামে রচিত। যেমন-
১.একা কে গায় ওই,
২.মনুষ্যফল,
৩.উদর দর্শন,
৪.পতঙ্গ,
৫.আমার মন,
৬.চন্দ্রোলোকে,
৭.বসন্তের কোকিল,
৮.স্ত্রী লোকের রূপ,
৯.ফুলের বিবাহ,
১০.বড় বাজার,
১১.আমার দুর্গোৎসব,
১২.একটি গীত,
১৩.বিড়াল,
১৪.টেকি।
এরপর হলো ‘কমলাকান্তের পত্র’, যা পাঁচটি শিরোনামে রচিত। যেমন -
১.কি লিখিব,
২.পলিটিকস,
৩.বাঙালির মনুষ্যত্ব,
৪.বুড়ো বয়সের কথা,
৫.কমলাকান্তের বিদায়।
তিন নাম্বার টি হলো ‘কমলাকান্তের জবানবন্দী।’ কমলাকান্ত বঙ্কিমের বহুলখ্যাত গ্রন্থ, যার তিনটি অংশ। বঙ্কিমের রহস্যপ্রিয় মন, কিন্তু সবসময় সস্তা রহস্য তৈরিতে তার মন তৃপ্ত ছিলো না। তাই প্রবাহমান সংসার জীবনের গভীর রহস্যের অভ্যন্তরে তলিয়ে যেতেন। পাগল টাইপের নেশাখোর কমলাকান্তর মাধ্যমে তার অনুউচ্চারিত কথাগুলো প্রকাশ করেছেন, যা তিনি সরাসরি বলতে সংকোচ বোধ করতেন। আর এই রহস্যময় পাগলের দ্বারা তিনি মাসের পর মাস পাঠক ভুলাতেন। কমলাকান্ত ধারনা করে, মানুষ মাত্র পতঙ্গ। চাঁদকে তিনি তার সাথে বাসর করতে অনুরোধ করেন। কোকিল প্রবন্ধে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছেন, ‘মানুষ সব বসন্তের কোকিল। সুসময়ে শুধু তার কু ধ্বনি পাওয়া যায়। অসময়ে তার টিকি টাও খুজে পাওয়া যায় না।’ নারী কে শ্রেষ্ট করেছেন, রূপে নয় মহত্বের গুনে। বিড়াল গল্পেও সমাজের অসংগতি ধরা পড়েছে। তার মতে, ‘অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য কেউ পৃথিবীতে আসে নি।’ তা ছাড়া তার দপ্তর টি কিভাবে প্রকাশ পেয়েছে তাও এক মজার কাহিনী। কমলাকান্ত বুঝতে পারে ‘কুকুর হলো সব থেকে বড় পলিটিশিয়ান।’ আর বাকি রইলো জবানবন্দী, যেখানে ‘বাবা কার ক্ষেতের ধান খেয়েছি যে আমাকে এর ভিতর পুরিলে?’ এই একটা বাক্য পুরো রচনাকে সামনে এনে দেয়! নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া একদম নগণ্য। তবে, উপন্যাসে কমলাকান্তের একাধারে রম্য, ব্যঙ্গ তীব্র আকর্ষণে নব নব সৌন্দর্য বিস্তারে বীরত্বের বর্ণচ্ছটা পাঠককে বেশ মুগ্ধ করবে। চরিত্র গুলো যেমন বাস্তব তেমনি সজীব আকারে উপন্যাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায় অপূর্ব সৌন্দর্য দিয়ে ছড়াছড়ি করা আছে! কমলাকান্তের জবানবন্দী অনেক জায়গায় নাট্যরূপে মঞ্চায়িত হয়েছে। তাছাড়া, সব গুলো অংশে লেখক সমাজকে এবং তাতে বসবাস করা মানুষের চরিত্রকে কেন্দ্রবিন্দু করেছেন। হাস্যরসে তাদের কর্মকান্ডের অসংগতি তুলে ধরেছেন, তাদের কার্যবলি কে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছেন!
পাঠককে বাংলার এই উপন্যাসটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আশা করি বঙ্কিমিয় রঙ আপনাদেরও রাঙিয়ে দিবে…।