কবিতা: আত্মধ্বংসের মধ্যে দিয়ে আত্মমুখের নির্মাণসাধনা
অতনু সিংহপ্রকাশিত : জানুয়ারি ৩১, ২০১৯
র্যাঁবো মারা যাওয়ার পর তার কবিতা নিয়ে লিটারেচার ও আর্ট এন কালচারের সুশীল ভায়েরা `ওগো কী অপূর্ব, আহা কী অপূর্ব` বলে গান গাওয়া শুরু করলেন এবং ক্রমে র্যাঁবোর মূর্তি প্রতিষ্ঠা হলো। র্যাঁবোর মা এটা ভালোভাবে নেন নাই। তিনি চেয়েছিলেন, তার ছেলের মূর্তি ভেঙে দেয়া হোক। কবি র্যাঁবোকে তার মৃত্যুর পরেও গাল দিতেন মা। কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন, কবিতাই তার ছেলেকে খেয়েছে। কবিতার কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে আদরের সন্তান।
আমি র্যাঁবো হতে না পারলেও কিংবা তেমন কিছু ঘুণাক্ষরে হতে না চাইলেও র্যাঁবোর মায়ের যে বর্ণনা পড়েছিলাম, তার সঙ্গে নিজের মায়ের চেহারা মেলাই। মিলেও যায়। তাই ২০০৯ সালে প্রথম কবিতার `নেভানো অডিটোরিয়াম`-এর একটি কবিতার শেষে লিখেছিলাম, `সবই হচ্ছে, ছুটছে/অথচ মাঝেমধ্যে আমার মাকে/মনে হচ্ছে র্যাঁবোর মা/এটুকুই আমার দুঃখ ও অহঙ্কার!’
কবিতার জন্য নিজের সামাজিক, রাষ্ট্রনৈতিক আত্মাকে ধ্বংস করে কবিতায় আরেক আত্মনির্মাণ করেছিলেন র্যাঁবো। তাতেই তার রক্তমাংসের আত্মজীবনের মরণ হয়তো বা— র্যাঁবোর মা যেমনটা ভাবতেন, কিংবা আমাদের মায়েরা ভাবেন যেমন— কিন্তু কবিতা তো এক আত্মধ্বংসের মধ্যে দিয়ে আরেক আত্মমুখের নির্মাণসাধনাও বটে। যদিও মাসস্কেলের লাইফ স্টাইল কবি, অরাজনীতি তথা অপ্রজ্ঞার কবিনাম্নী প্রাণী, মঞ্চ ও হ্যালোজেন আর প্রচার-পুরস্কারের আজকের বাংলা বাজারের কবিসমাজের কাছে হয়তো ওই সমাজ-রাষ্ট্র-পার্টি-বাজার-ভোক্তা-বিনোদন-মাস্তি দ্বারা নির্মিত আত্ম বা আমিত্বই বড় কথা!
অবশ্য ওনারা ছন্দ জানেন, মাত্রা জানেন, অলংকার জানেন, গা-ঘষাঘষি আর গোষ্ঠীবাজি জানেন এবং স্থা অভিমুখে স্থা-এর ভাষাবিধি ও তার প্রমিত রাজনীতির ক্যাডার হইতে জানেন। এমনকি স্থা হইতে স্থাবর ও অস্থাবরের প্রাচুর্য নির্মাণও জানেন ভালোই। এনাদের দেখে রাগ হয় না যৌবনের শুরুয়াতের মতো। হাই ওঠে। মনকে অন্যপথে না যেতে দিয়ে এনাদের থেকে চোখ ঘোরাতে পর্নোগ্রাফি দেখি। অব্যবহৃত বীর্য জঙ্ঘায় গড়িয়ে পড়লে র্যাঁবোর মায়ের মতো আমিও কবিতাকে গাল দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ি। যত বুড়ো হই, মা-বাবার থেকে দূরে থাকলে ওদের মুখটা মিস করি। আরও প্রিয় নানা কিছু মিস করতে করতে কবিতা নিয়ে ভাবিত হই না। কারণ আমি জানি, এই রক্তমাংসের শরীর নিয়ে নিজের অজ্ঞানেই স্বয়ং ঢুকে পড়েছি কবিতায়। হা হা...
লেখক: কবি