
কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের আজ মৃত্যুদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : মার্চ ০৯, ২০২৫
কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের আজ মৃত্যুদিন। ১৮৫৮ সালের ৯ মার্চ তিনি মারা যান। নদিয়া জেলার বিল্বগ্রামে ১৮১৭ সালে তার জন্ম। পিতা রামধন চট্টোপাধ্যায়।
বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসিবে মদনমোহন চিহ্নিত। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপক ছিলেন এবং বাল্যশিক্ষার জন্য একাধিক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।
তিনি সংস্কৃত কলেজের শিক্ষাগ্রহণ করেন, সেখানে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহপাঠী ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষা গ্রহণ করেন।
মদনমোহন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৮৫০ সালের নভেম্বরে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার বিচারক নিযুক্ত হন।
তিনি ১৮৫৫ সালের ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদের এবং ১৮৫৬ সালে কান্দির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন `হিন্দু বিধবা বিবাহ` প্রথার অন্যতম উদ্যোক্তা।
এই সম্পর্কে বহরমপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মৃণালকান্তি চক্রবর্তী বলেন, “১৮৫৭ সালে প্রথম বিধবা বিবাহ হয়। ওই বিয়ের পাত্র শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ও পাত্রী ছিলেন কালীমতি। তাদের দুজনের সন্ধান ও যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে মদনমোহন তর্কালঙ্কার ছিলেন অন্যতম।”
নারী শিক্ষার প্রসারে তার অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৪৯ সালে বেথুন কর্তৃক হিন্দু মহিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে নিজের দুই মেয়েকে সেখানে ভর্তি করেন। নিজে বিনা বেতনে এই স্কুলে বালিকাদের শিক্ষা দিতেন।
সর্বশুভকরী পত্রিকায় স্ত্রী শিক্ষার পক্ষে একটি যুগান্তকারী প্রবন্ধ লেখেন ১৮৫০ সালে। মদনমোহন তর্কালঙ্কার বাংলা ভাষায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করেন। তার রচিত শিশুশিক্ষা গ্রন্থটি ঈশ্বরচন্দ্র কর্তৃক রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থটিরও আগে প্রকাশিত।
তিনি `শিশুশিক্ষা` পুস্তকটির `প্রথম ভাগ` ১৮৪৯ সালে এবং `দ্বিতীয় ভাগে` ১৮৫০ সালে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে পুস্তকটির `তৃতীয় ভাগ` এবং `বোধোদয়` শিরোনামে `চতুর্থ ভাগ` প্রকাশিত হয়।
`বাসব দত্তা` ও `রসতরঙ্গিনী` নামে তার দুটি গ্রন্থ ছাত্রাবস্থায় রচিত হয়। তার রচিত `আমার পণ` কবিতাটি বাংলাদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা পাঠ্যবইয়ের অন্যতম একটি পদ্য এবং শিশু মানস গঠনের জন্য চমৎকার দিক-নির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত।
তার বিখ্যাত কিছু পঙক্তির মধ্যে রয়েছে, ‘পাখী সব করে রব, রাতি পোহাইল’; ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি’; ‘লেখাপড়া করে যে/গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’।
তিনি ১৪টি সংস্কৃত বই সম্পাদনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে, রসতরঙ্গিণী (১৮৩৪), বাসবদত্তা (১৮৩৬), ও শিশুশিক্ষা (১৮৪৯ ও ১৮৫৩)। ১৮৫৮ সালের ৯ মার্চ কান্দিতে কলেরায় ভুগে তিনি মারা যান।