কবি জয় গোস্বামীর আজ ৭১তম জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ১০, ২০২৪

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত আধুনিক বাঙালি কবি জয় গোস্বামী। আজ তার ৭১তম জন্মদিন। জয় গোস্বামী কলকাতায় ১৯৫৪ সালের ১০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষার উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় কবি হিসাবে তিনি চিহ্নিত।

তার কবিতা চমৎকার চিত্রকল্পে, উপমা এবং উৎপ্রেক্ষায় ঋদ্ধ। তিনি দুবার আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছেন। বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন। ছোটবেলায় তার পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তার স্থায়ী নিবাস সেখানে। তার পিতা মধু গোস্বামী ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী রাজনীতি করতেন। তার যখন আট বছর পাঁচ মাস বয়স তখন তিনি পিত্রহারা হন।

তার মা শিক্ষকতা করে তাকে লালন পালন করেন। প্রথম কবিতা লিখেছিলেন ১৩-১৪ বছর বয়সে। নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করেন ১৬-১৭ বছর বয়সে। তিনি ছেলেবেলা থেকে খুব গান শুনতেন। গানের সুর থেকে বাণী তাকে খুব আকর্ষণ করতো। এ আকর্ষণেই তার অন্তর্জগতে কবিতার জন্ম হতে থাকে। ছেলেবেলায় এক অনুষ্ঠানে বনলতা সেন কবিতাটির আবৃত্তি শুনে কবিতার গঠন, রচনাশৈলী ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে তার প্রথাগত ধারণা আমূল বদলে যায়।

জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখাপড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণিতে থাকার সময়। সত্তরের দশকে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তার কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তার প্রথম কাব্য সংকলন ‘ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে তিনি ‘পাগলী তোমার সঙ্গে’ কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

জয় গোস্বামীর ভাষায়, ‘‘আমার প্রতিদিনের জীবনে মনের ভেতর যে ভাষা জন্মায়, যে অভিজ্ঞতা জন্ম নেয়, তাকে ভাষা দেওয়ার চেষ্টা করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার জীবন হচ্ছে ধারাবাহিক বিচ্ছেদের মালা গাঁথার ইতিহাস। আমার মাস্টার মশাই, আমার মা, আমার ভাই, আমার বন্ধু, নারী, সহকর্মী, যারা আমার জীবনে এসেছেন, তারা কেউ আমাকে নিয়ে সুখি নন। তারা কোনো না কোনো কারণে হতাশ বা আমাকে নিয়ে ক্লান্ত।’

তার প্রথম কবিতার বই `ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ` প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে। এটা ছিল মাত্র আটটি কবিতার একটি ক্ষীণতনু কবিতা-সংকলন। মায়ের থেকে টাকা নিয়ে তিনি এই বইটি বের করেন। প্রকাশনা বাবদ মোট ১৪৫ টাকা ব্যয় হয়েছিল। মায়ের টাকাতেই ১৯৭৮-এ তিনি প্রকাশ করেছিলেন দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রত্নজীব। এরপর কবি শঙ্খ ঘোষ তাকে প্রকাশক জুটিয়ে দেন এবং ১৯৮১-তে তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘আলেয়া হ্রদ’ প্রকাশিত হয়।