কবি কামিনী রায়ের আজ জন্মদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : অক্টোবর ১২, ২০২৪
কবি কামিনী রায়ের আজ জন্মদিন। ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসণ্ডা গ্রামে তার জন্ম। তার বাবা চণ্ডীচরণ সেন ছিলেন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক ও বিচারক।
১৮৭০ সালে চণ্ডীচরণ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা লাভ করেন। পরের বছর তার স্ত্রী-কন্যাও কলকাতায় তার কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। তিনি ব্রাহ্ম সমাজের নেতা ছিলেন। তার বোন যামিনী সেন লেডি ডাক্তার হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন।
কামিনী রায় ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী, ভাবুক ও কল্পনাপ্রবণ। তিনি ১৮৮০ সালে কলকাতার বেথুন ফিমেল স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (মাধ্যমিক) ও ১৮৮৩ সালে এফ.এ বা ফার্স্ট আর্টস (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
পরে তিনি ১৮৮৬ সালে বেথুন কলেজ থেকে ভারতের প্রথম নারী হিসাবে সংস্কৃত ভাষায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর একই বছর তিনি বেথুন কলেজের স্কুল বিভাগে শিক্ষিকার পদে নিযুক্ত হন।
পরবর্তীকালে তিনি ওই কলেজে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ওই সময়ে মেয়েদের এমন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বিরল ঘটনা। শুধু তাই নয় কবি কামিনী রায় নারীবাদে বিশ্বাসী ছিলেন, ভাবা যায়! এ নিয়ে তিনি অনেক প্রবন্ধ লেখেন।
কামিনী রায়কে ছোটবেলায় কবিতা ও স্তোত্র আবৃত্তি করতে শেখাতেন তার দাদা। ফলে শৈশবেই কবিতা লেখা ও সাহিত্য চর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাকে গোপনে বর্ণমালা শিক্ষা দিতেন তার মা। কারণ ওই যুগে হিন্দু নারীদের শিক্ষাগ্রহণ একান্তই নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো।
মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। তার রচিত কবিতাগুলোতে জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনার সহজ-সরল ও সাবলীল প্রকাশ ঘটেছে। যদিও তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সংস্কৃত সাহিত্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।
মাত্র পনেরো বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আলো ও ছায়া (১৮৮৯ সালে)। এ বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রথমে এতে কবি হিসেবে কামিনী রায়ের নাম প্রকাশিত হয় নাই। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর তার কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রকাশিত হয় একাধিক কাব্যগ্রন্থ।
তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: আলো ও ছায়া, নির্মাল্য, পৌরাণিকী, মাল্য ও নির্মাল্য, অশোক সঙ্গীত (সনেট সংগ্রহ), অম্বা (নাট্যকাব্য, , দীপ ও ধূপ, জীবন পথে, একলব্য, দ্রোণ-ধৃষ্টদ্যুম্ন ও শ্রাদ্ধিকী উল্লেখযোগ্য।
অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত মহাশ্বেতা ও পুণ্ডরীক তার দুটি প্রসিদ্ধ দীর্ঘ কবিতা। ১৯০৫ সালে তিনি শিশুদের জন্য গুঞ্জন নামের কবিতা সংগ্রহ ও প্রবন্ধগ্রন্থ বালিকা শিক্ষার আদর্শ রচনা করেন। কামিনীর কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করেন সিবিলিয়ান কেদারনাথ রায়।
১৯০৯ সালে অপঘাতে তার মৃত্যু হয়। সেই শোক ও দুঃখ তার ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, যা তার কবিতায় প্রকাশ পায়। তার কবিতায় জীবনের সাধারণ ঘটনাবলি হৃদয়ের সুকুমার অনুভূতির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
কেবল কবিতা নয়, নারীবাদী এই লেখিকা সমাজ সংস্কারমূলক অনেক গল্প, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি নারীদের শিক্ষায় উৎসাহিত করতে লিখেছিলেন Some Thoughts on the education of our women প্রবন্ধ।
বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কামিনী রায়কে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক প্রদান করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তার একটা অম্লমধুর সম্পর্ক ছিল। ১৯০০ সালে ৫ অক্টোবর প্রিয়নাথ সেনকে লেখা একটি চিঠিতে কামিনী রায়ের ‘আলো ও ছায়া’ ও ‘পৌরাণিকী’ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ আলোচনা করেন।
সাহিত্যচর্চার পাশাপশি তিনি নানা সাংস্কৃতিক ও জনহিতকর বিশেষ করে নারীকল্যাণমূলক কাজেও আত্মনিয়োগ করেন। নারীশ্রমিক তদন্ত কমিশনের অন্যতম সদস্য (১৯২২-২৩), বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে সাহিত্য শাখার সভানেত্রী (১৯৩০) এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদেরও সহ-সভাপতি ছিলেন কামিনী রায়। ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ৬৯ বছর বয়সে মারা যান কামিনী রায়।