কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ০১, ২০২৪

বাংলা আধুনিক কথাসাহিত্যের স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর ব্যারাকপুরের ঘাটশিলায় বিভূতিভূষণ মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়া হালিশহরের কাছে অবস্থিত মুরাতিপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

তার পৈতৃক নিবাস উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁ`র নিকট বারাকপুর গ্রামে। তার পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত। পাণ্ডিত্য এবং কথকতার জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। মাতা মৃণালিনী দেবী। পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে বিভূতিভূষণ সর্বজ্যেষ্ঠ ছিলেন।

বিভূতিভূষণের বাল্য ও কৈশোরকাল কাটে অত্যন্ত দারিদ্র্রতার সাথে। তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী ছাত্র। ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯১৬ সালে আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে এবং ১৯১৮ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাস করেন। তিনি দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করেন।

বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের জীবনকে তিনি তার অসাধারণ শিল্পগুণে উপস্থাপন করেছেন সাহজিক সারল্যের ভাষায়। তিনি মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতেন গভীর ও নিবিড় ভালোবাসা দিয়ে। তা তার উপন্যাস ও গল্পের দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। বোঝা যায় তার গল্প-উপন্যাসের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর দিকে তাকালে।

তার সৃষ্ট চরিত্র অপু, দুর্গা, সর্বজয়া, দোবরু, পান্না, শঙ্কর, হাজারি ঠাকুর প্রমুখ এখনও কালজয়ী হয়ে আছে বাংলা সাহিত্যে। ১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় ‘উপেক্ষিতা’ নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণ সাহিত্যিক জীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯২৫ সালে তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ রচনা শুরু করেন। এই বইটি লেখার কাজ শেষ করতে তার সময় লাগে তিন বছর।

বিভূতিভূষণের এটিই প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর অপরাজিত রচনা করেন যা পথের পাঁচালীরই পরবর্তী অংশ। উভয় উপন্যাসেই তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে।

বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী উপন্যাসের কাহিনিকে চলচ্চিত্রে রূপদানের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রটিও দেশি-বিদেশি প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করে। এরপর `অপরাজিত` এবং `অশনি সংকেত` উপন্যাস দুটি নিয়েও সত্যজিৎ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

এর সবগুলোই বিশেষ প্রশংসা অর্জন করেছিল। `পথের পাঁচালী` উপন্যাসটি ভারতীয়, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘ইছামতী’ উপন্যাসের জন্য তিনি মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫১) লাভ করেন।