কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ০১, ২০২৪

কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের আজ জন্মদিন।  ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন শিরঙ্গল গ্রামে তার জন্ম। তার বাবা মৌলভী মোহাম্মদ এবাদুল্লাহ। মা আতহারুন্নিসা।

১৯৪২ সালে শরীয়তপুর জেলার উপসী বিজারী তারাপ্রসন্ন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে আবু ইসহাক মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৪ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

সময়টি ছিল পূর্ব বাংলা তথা সারা বিশ্বের জন্যই গভীরতর সংকটের। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর অন্যদিকে বাংলায় দুর্ভিক্ষ ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির রাজনীতি। পারিবারিক আর্থিক সংকট ও রাজনীতিবিদদের উৎসাহে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই আবু ইসহাক চাকরিতে যোগ দেন।

বাংলা সরকারের বেসরকারি সরবরাহ বিভাগের পরিদর্শকের চাকরি নিয়ে তিনি চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ থেকে কলকাতা এবং পরে পাবনা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় আবু ইসহাকের কর্মস্থল ছিল পাবনা।

১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। দেশভাগের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বেসরকারি সরবরাহ বিভাগ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। আবু ইসহাককে আত্মীকরণ করা হয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সরকারি চাকুরেদের অনেকের পদোন্নতি ঘটলেও আবু ইসহাকের ক্ষেত্রে ঘটে পদাবনতি। আগে ছিলেন পরিদর্শক, পুলিশ বিভাগে আত্মীকরণের পর হন সহকারী পরিদর্শক। একই পদে থেকে যেতে হয় দীর্ঘ আট বছর।

এই চাকরিতে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তার কর্মস্থল ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা। ১৯৫৬ সালে তার ভাগ্যে পদোন্নতি জোটে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিদর্শক করে তাকে করাচিতে বদলি করা হয়।

১৯৬০ সালে চাকরিরত অবস্থায় করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন তিনি। এরপর আবু ইসহাকের বেশ কয়েক দফা দ্রুত পদোন্নতি ঘটে। ১৯৬৬ সালে তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে বদলি করা হয়। ১৯৬৯ সালে সহকারী কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে তাকে করাচি থেকে বদলি করা হয় ইসলামাবাদে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত তিনি ইসলামাবাদেই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে না থাকলেও বাঙালি হওয়ার কারণে আবু ইসহাককে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়েছে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচার চেষ্টায় লড়তে হয়েছে তাকে। পাকিস্তানে আটকে পড়া অবস্থা থেকে আবু ইসহাক বহু কষ্টে পালিয়ে যান আফগানিস্তানে।

ভারত ও আফগানিস্তান সরকারের সহায়তায় ১৯৭৩ সালে কাবুল ও নয়াদিল্লি হয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন তিনি। দেশে ফেরার পর বাংলাদেশের নবগঠিত নিরাপত্তা বিভাগ তাকে যথার্থ সম্মানের সঙ্গে বরণ করে নেয়। তাকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) উপ-পরিচালক করা হয়।

এরপর ১৯৭৪ সালে তিনি মিয়ানমারের (বার্মা) আকিয়াব শহরে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে ভাইস-কনসাল হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৬ সালে আবু ইসহাক কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে তাকে আবার বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং এনএসআইর খুলনা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে খুলনার খালিশপুর এলাকায় ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ নামের একটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন আবু ইসহাক। সে বাড়িতে অবশ্য তিনি বেশিদিন থাকেননি। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্ব্বর চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। অবসর নেওয়ার পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঢাকার বড় মগবাজার এলাকার ‘তাহমিনা মঞ্জিল’ নামের একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করেন।

তিনি ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আবু ইসহাক দাম্পত্য জীবন শুরু করেন ১৯৫০ সালে। পাকিস্তানে থাকার সময় স্ত্রী সালেহা ইসহাক ছিলেন ইসলামাবাদ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের শিক্ষিকা। দেশে ফেরার পর শিক্ষকতা করেছেন মতিঝিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এই স্কুল থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। আবু ইসহাক ও সালেহা ইসহাক দম্পতির তিন সন্তান।