কথাসাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৬, ২০২৪

কথাসাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ জন্মদিন। ১৯৩০ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকার আড়াই হাজার থানার রাইনাদি গ্রামে তার জন্ম। ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

পিতা অভিমন্যু বন্দ্যোপাধ্যায় মুড়াগাছা জমিদারের অধীনে কাজ করতেন। মাতা লাবণ্যপ্রভা দেবী। অতীনের শৈশব-কৈশোর কাটে গ্রামের বাড়িতে যৌথ পরিবারে। স্কুলের পড়াশোনা সোনারগাঁওয়ের পানাম স্কুলে।

দেশভাগের পর ছিন্নমূল হয়ে তারা চলে আসেন ভারতে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের বানজেটিয়া গ্রামে গড়ে ওঠা মণীন্দ্র কলোনিতে পিতার বাড়িতে কিছুকাল থিতু হয়ে থাকেন। এখান থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন।

এরপর যাযাবরের মতো কাটে তার যৌবন। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিকম পাশ করেন ও পরে বিটি পাশ করেন। বিটি পড়ার সময়ই আলাপ হয় সহপাঠী মমতার সাথে। পরে তাকে বিয়ে করেন।

এরপর কাজের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়েন। কখনো নাবিক হিশেবে পৃথিবী পর্যটন, আবার কখনো ট্রাক-ক্লিনারের কাজ লেগে পড়া। পরে এক প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। অল্প কিছু দিন মুর্শিদাবাদ জেলার চৌরীগাছা স্টেশন নিকটস্থ সাটুই সিনিয়ার বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।

তিন-চার বৎসর সাটুইয়ে থাকার পর ১৯৬৩ সালে তিনি পাকাপাকিভাবে চলে আসেন কলকাতায়। কখনো হলেন কারখানার ম্যানেজার, কখনো বা প্রকাশনা সংস্থার উপদেষ্টা। পরে অমিতাভ চৌধুরীর আহ্বানে যোগ দেন কলকাতার `যুগান্তর` পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজে এবং সেখান থেকেই কর্মে অবসর নেন।

বিভিন্ন পেশার মধ্যে থেকেও লেখালেখি করে গেছেন তিনি। তবে কলেজে পড়ার সময় থেকেই তার সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মে যায়। আর পেশার তাগিদে ঘুরে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তাই স্থান পেয়েছে তার সাহিত্যকর্মে। তার প্রথম গল্প ওয়েলসের বন্দর শহর নিয়ে লেখা `কার্ডিফের রাজপথ` প্রকাশিত হয় বহরমপুরের অবসর পত্রিকায়।

এর পরের গল্প ছিল `বাদশা মিঞা`। বহরমপুরের কলেজের বন্ধুদের আগ্রহে `উল্টোরথ` পত্রিকায় উপন্যাস প্রতিযোগিতায় জাহাজের জীবন নিয়ে প্রথম উপন্যাস সমুদ্র মানুষ লিখেই ১৯৫৮ সালে `মানিক-স্মৃতি পুরস্কার` লাভ করেন তিনি। এরপর তিনি তার অর্থসঙ্কট মেটাতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লিখে গেছেন বহু উপন্যাস।

শিশু-কিশোর ও বড়দের সবার জন্যই তিনি লিখেছেন। তবে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাসটি হলো `নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে`। এটি মূলত চারটি সিরিজে বিন্যস্ত। প্রথম পর্ব `নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে`, দ্বিতীয় পর্ব `মানুষের ঘরবাড়ি`, তৃতীয় পর্ব `অলৌকিক জলযান` এবং চতুর্থ পর্ব `ঈশ্বরের বাগান`।

দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে লেখা এই উপন্যাসে ছিন্নমূল মানুষের জীবন, তাদের সংগ্রামী বিষয় এবং পটভূমিসহ জীবনের রোমাঞ্চকর অভিযানের লৌকিক অলৌকিক উপলব্ধি সুন্দরভাবে পরিস্ফুট হয়েছে। তার এই রচনা কেবল বাংলা সাহিত্যকে নয়, ভারতীয় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ভারতের ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের উদ্যোগে ক্লাসিক পর্যায়ে বারোটি মূল ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে গ্রাম বাংলার জীবনও অনেক বেশি করে ধরা দিয়েছে। তাই তার মধ্যে অনেকে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকার খুঁজে পান।

তার লেখা বইগুলো হচ্ছে, অতীন্দ্রিয় অলৌকিকের অন্তরালে, অন্তর্গত খেলা, অন্নভোগ, অপহরণ, অমৃতা, অমৃত্যু, অরণ্য, আজব দেশে বুমবাই, আবাদ, উত্তাপ, উপেক্ষা, ঋতু-সংহার, একজন দৈত্য একটি লাল গোলাপ, একটি জলের রেখা, এ কালের বাংলা গল্প, কবির স্ত্রী, কাপালি ইত্যাদি।

১৯৫৮ সালে তিনি মানিক স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯১ সালে বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে ভুয়াল্কা পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে বঙ্কিম পুরস্কার, ২০০১ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ২০০৫ সালে শরৎ পুরস্কার, ২০০৮ সালে সুরমা চৌধুরী আন্তর্জাতিক স্মৃতি পুরস্কার, মতিলাল পুরস্কার, তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার এবং নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও সুধা পুরস্কার অর্জন করেন।