এহসান হাবীবের চারটি কবিতা
প্রকাশিত : আগস্ট ০৪, ২০২২
রেল স্টেশন
কালিকাপ্রসাদ আর তালশহর। পৃথিবীর পূবদেশের দুটি নির্জন রেল স্টেশন। স্টেশন দুটির দূরত্ব অতটা কাছাকাছি নয় যে, লাফ দিয়ে চলে যাওয়া যায়। এছাড়া স্টেশন দুটোতে ট্রেন থামেও কদাচিৎ। কালিকাপ্রসাদে তো বহুদিন থামেই না। তবু কালিকাপ্রসাদ আর তালশহর দুটো স্টেশনেই চড়চড় করে রোদ উঠলে দুপুরের নির্জনতায় একই দিনে একই সময়ে আমাকে রেললাইনের স্লিপারের ওপর বসে থাকতে দেখা যায়।
এটা পিরালি নয়। যদিও আমি পিরবংশ। এটা মিরাকলও নয়। এটা রহস্য। পৃথিবীর খুব পূর্বদেশের দুটো নির্জন স্টেশনকে ঘিরে আমার ভেতর বেড়ে ওঠা একটা বিষণ্ন রহস্য।
আবার ঘুমাতে হবে একবার
আমরা আমাদের স্বপ্নকে বেচে দিয়েছি।
উৎসব, ক্রিকেট আর সাংস্কৃতিক আফিমে বুঁদ হয়ে আছি
আমাদের চাকরানি আজ রানি হয়ে গেছে
ভয়ঙ্করি এক রাক্ষসের থাবার মধ্যে কখন চলে গেছে আমাদের স্বপ্নগুলো
কখন কীভাবে আমাদের জান কবজ হয়ে যাচ্ছে
গুমে, ঘুমে, আমাদের প্রহরী আমাদের আততায়ী।
আমরা এখন কথা বলি খেলার জন্য, সেতুর জন্য
ওই উঁচু উঁচু অট্টালিকার জন্য যেন চতুর হীরক রাজ।
চুপিসারে মগজ ধোলাই করে গেছে
আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
যে বুট আমারই টাকায় কেনা আমারই নিরাপত্তার জন্য
আজ সেই বুট পিষ্ট করে দিচ্ছে আমাদের জীবন।
আমাদের বেঁচে থাকার কোনো আকুতি নেই
শুধু প্রবাহিত হয়ে যাওয়া, যেন অন্তিমের অপেক্ষা।
আামাদের চোখ খুবলে নিয়েছে শকুন, যাতে স্বপ্ন ভরা ছিল
আমাদের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে
আমাদের স্বরযন্ত্র বোবা হয়ে গেছে
যাতে কথা ফুটে উঠতো
আমাদের সংবাদ সংগ্রহকারী তার কলম বিক্রি করে দিয়েছে
আমাদের বিবেক বন্ধক চলে গেছে উর্দির কাছে।
আমাদের কিছুই যেন আর বেঁচে নেই।
জেগে থেকে থেকে শুধু দেখে যাওয়া ছাড়া
হাতগুলো অসহায় মাটিতে রেখে দেয়া ছাড়া।
আমরা কী ঘুমাবো না?
আমাদের ঘুমানো প্রয়োজন
জেগে ওঠার জন্য
ভয়ঙ্কর কোনো একটা স্বপ্ন দেখার জন্য।
স্মৃতি
পুরোনো শহর। পুরোনো বাড়ি।
জীর্ণ দেয়াল। ঠা ঠা দুপুর।
ফাঁকা চৌরঙ্গী।
শূন্যে ভাসা একা মানুষ।