এলিজা খাতুনের বৃষ্টি বিষয়ক দুটি কবিতা

প্রকাশিত : জুন ১৫, ২০২২

বৃষ্টিপ্রাচুর্যে

অনাহূত ধুলোর সন্ত্রাসে
জানালায় উড়ে আসে মেঘের চিরকুট  
পড়া হয়নি বিভ্রমে

শেষরাতে আষাঢ়ের অবোধ আঁধারে
ঘুমের অতল থেকে নিজেকে ফিরে পেয়ে শুনি
আকাশ ভাঙার শব্দ

বৃষ্টি তার অনন্ত স্বভাবে
নিদ্রামগ্নের হাতে তুলে দিচ্ছে রিমঝিম মধ্যরাত
বন্ধ জানালা উপচে আসে জল পতনের ছন্দ
উদ্বেলিত স্বস্তির আওয়াজ কানে বাজে এই ভেবে যে
শুষ্ক মাঠ, ফসলের জমি শস্যের বিশ্বাসে
বোধ হয় ছাড়ছে তপ্ত নিঃশ্বাস

জলের নৃত্যতালে পাতারা হয়তো কুড়োচ্ছে
আবেগের গাঢ় সবুজ মুদ্রা
আর থর থর উচ্চারণে বৃক্ষের তৃষ্ণাকে বলছে,
জলের আমন্ত্রণ ফেরাতে নেই

মেঘবন্দি জমাট জল মুক্তির উল্লাসে খসে খসে
মুছে দিচ্ছে পৃথিবীর অনিদ্রার শোকচিহ্ন

শেষরাতে অন্ধকার জানালায় দাঁড়িয়ে
ঘড়ির কাঁটা ও বৃষ্টিফোঁটা গণনায় অপারগ হলেও
পতন শব্দে অনুভব করা যায়
বিষণ্ণ ধুলোর বুকে নেমে আসা জলের চঞ্চলতা

গাঢ় অন্ধকার আর বৃষ্টিপ্রাচুর্যে অন্তর্লীন ঘ্রাণে
আভাস থাকে, আসবে সে; ভোরভেজা মুখ!

কাদামাটি

আমার মাটিখেলা বেলায়
ভীষণ মনখারাপ হতো যে কথাটি শুনে,
ও তো কাদার মতো সরল!
যা খুশি বোঝানো যায়, যেমন ইচ্ছে গড়া যায়...

আগুনের মনখারাপে যেমন
ভেজাকাঠ থেকে নির্গত হয় বিষণ্ণ কালো ধোঁয়া

খুব খরায় জলশূন্য নদীর বুক ফাটা তলদেশ আমি
কাজে অকাজে বিষণ্ণ থাকি
সূর্যের সংকোচহীন শোষণে হয়ে উঠি
শক্ত ঢেলা, কিংবা শুকনো ধুলো

অসময় অথবা সময়ের জলস্রোতে
কিনারের ভেজামাটি বড় প্রিয়
জল ছুঁই, অগণিত ঢেউ গুণি কল্পিত জলের কাছাকাছি
অথচ মজুতদারের হাতে শস্যদানার বন্দিত্বের মতো
আমার চারপাশে নিদারুণ খরার বেষ্টনি!

কাদা নাম ভালোবেসে প্রার্থনা করি
আকাশ ভরা মেঘের
আকাশ ভাঙা জলের