এলিজা খাতুনের তিনটে কবিতা
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
অবধারিত অন্তরঙ্গ
পৃথ্বী গ্রহে আগমন মুহূর্ত থেকে সে আমার
অবধারিত কাছের হয়ে থাকে
দুর্লভ সে— ছিঁড়বার নয়, ভাঙবার নয়, হারাবার নয়,
ভুলে যাওয়া নয়, ভুল হওয়া নয়
সুন্দর সম্পর্ক মৃত্যুর দিকে গেলে
মৃত্যু কিছুটা মানুষের দিকে আসে এমন ভাবনায়
একদিন সারারাত নির্ঘুমতার প্রহরায়
আমরণ অনিদ্রা বসত নেয় চোখের উঠোনে
রাত্রির চেয়ারে ভীষণ শান্ত বসে থাকে অন্ধকার যেমন
যাপনের সবটুকু গতি শ্লথ করে
আচমকা যেন দুরন্ত স্বর্ণলতার বাড়ন্ত লতিকার মতো
হলুদ আমার সমস্ত দুঃশ্চিন্তা—
ঘিরে ধরেছে আমুণ্ডু আমাকে
আর মৃত্যু সহোদর সারাক্ষণ বন্ধু হয়ে থাকে নিখাঁদ
ইদানীং আরো বেশি অন্তরঙ্গ
কঙ্কাল
পাতা পচে গেলে
মাটিতে তার শিরা-উপশিরা
থাকে কিছুদিন কঙ্কালের মতো
আমাদের অতীত
শীর্ণ ডাঁটার মতো জেগে আছে কেবল
পড়ে আছে বিগত দিনের স্মৃতিকথা হয়ে
মানুষের হৃদয় কি কঙ্কাল হয়!
নাকি পুরোটাই নিশ্চিহ্ন থাকে!
তবে উত্তাপ খুঁজতে খুঁজতে
হৃদয় কেন পৌঁছে যায় দীর্ণ কোনো পাঁজরাকাটিতে?
কীসের দেনা-পাওনায় গুঁড়িয়ে যায় স্বপ্নের কঙ্কাল!
ক্ষত
জীবাণুরা মানুষের মাংসের ক্ষত খোঁজে
মানুষেরা খোঁজে মানুষের হৃদয়ের ক্ষত
যে পায় খুঁজে, সে-ই পারে সারিয়ে তুলতে
কিংবা আরো গভীর ক্ষত সৃষ্টিকার্যে দক্ষ হয়ে উঠতে
স্যাভলন গন্ধময় সমস্ত দুপুর কাটে আকণ্ঠ তৃষ্ণায়
সান্ত্বনার মতো বিকেল বসে থাকে সম্মুখে
এখনও সন্ধ্যা নামেনি বলে অস্পষ্ট ছায়ার মতো
নিঃশব্দে সরিয়েছি দূরত্বকে
মোমের শিখার মতো দাপাদাপি কোরে
কে আসছে সন্ধ্যার উঠোনে!
জীবাণুর মতো নয়, মানুষের মতো এসে
যদি খুঁজে নিতে পারে হৃদয়ের ক্ষত
তো আসুক না!