এলজিবিটিকিউ: অধিকার নাকি পশ্চিমাতন্ত্রের হাতিয়ার

হাসান আজারকাত

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৭, ২০২২

শুরুতেই বলে নিচ্ছি, এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির অধিকার নিয়ে আমার সমস্যা নাই। বরং কেউ এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির বলে তার নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হলে তার অধিকার আদায়ের পক্ষে আমি আওয়াজ তুলবো।

কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির যে ব্র‍্যান্ডিং এবং প্রায় জোরকরে এই মতবাদের স্বীকৃতি আদায়ের যে প্রবণতা, আমি সেটার ঘোর বিরোধী। আরবদের ওপর এলজিবিটিকিউ চাপিয়ে দেয়ার অধিকার যেমন পশ্চিমাদের নাই, তেমনি পশ্চিমাদের ওপর আরবের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার অধিকারও আরবদের নাই। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে একে অপরের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টাই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

শুধু বিশ্বকাপের মঞ্চেই নয়, এলজিবিটিকিউবাদ চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা পশ্চিমের প্রায় সবখানেই লক্ষণীয়। প্রিলিমিনারি স্কুলগুলোতেও এর ব্র‍্যান্ডিং চলছে। বাচ্চারা বুঝে ওঠার আগেই তাদের ওপর এই মতবাদ চাপানো হচ্ছে। যেটা নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ায় অনেক বিতর্কও চলছে। জেন্ডার আইডেন্টিটির পলিটিক্স রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পেছনে মূলত পশ্চিমা বাম ও লিবারেলরা মুখ্য ভূমিকা রাখছে।

একটা মতবাদ একমাত্র তখনই সর্বজনীন হয়ে ওঠে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ সেটায় জড়িত থাকে। জোর করে চাপিয়ে দিয়ে কোনো মতবাদ সর্বজনীন হয়ে উঠতে কখনোই পারে না। জোর করে মতবাদ চাপিয়ে দেয়াটা স্পষ্টভাবেই স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ।

স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতার কারণে এলজিবিটিকিউ মতবাদ সর্বজনীন হয়ে উঠতে না পারার সম্ভাবনাই বেশি। এছাড়া এই মতবাদকে ঘিরে কিছু প্রশ্নের কোনো মীমাংসা এখন পর্যন্ত হয় নাই।

যেমন: কোনো পুরুষ যদি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নারীতে রূপান্তরিত হয়ে নারী কোটায় খেলাধূলাতে যোগ দেয় তাহলে বায়োলজিক্যালি যেসব নারীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে তারা বৈষম্যের শিকার হবে কিনা।

এর উত্তর হলো, অবশ্যই। যারা বায়োলজিক্যালি নারী তাদের তুলনায় পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হওয়া নারীরা শারীরিক শক্তির বিবেচনায় কয়েক যোজন এগিয়ে থাকবে। ফলে প্রতিযোগী বিবেচনায় সেটা একটা বৈষম্য।

ওপরের প্রশ্নটা কোনো হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্ন নয়। প্র‍্যাকটিক্যাল দুনিয়ায় এরই মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া, বায়োলজিক্যালি ছেলে হয়ে জন্মানো কোনো শিশুকে যদি শেখানো হয় যে, সে আসলে ছেলে নয়, জেন্ডারভিত্তিক পরিচয় আসলে সমাজের চাপিয়ে দেয়া বিষয় (যা সত্য নয়, এটা মানুষের বায়োলজিক্যাল আইডেন্টিটি) বলে, কিংবা নারী-পুরুষের বাইরেরও এলজিবিটিকিউবাদীদের তৈরি মনগড়া অন্যান্য জেন্ডার আইডেন্টিটি চাপিয়ে দেয়ার এখতিয়ার কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর আছে কিনা?

এর উত্তর হলো, অপ্রাপ্তবয়স্কদের এই ধরনের ভ্রান্ত শিক্ষাদান করাটা খুবই বিপদজনক। এই ধরনের মতবাদ শুধু বিপদজনকই নয়, চূড়ান্তভাবে অবৈজ্ঞানিকও বটে।

এই ধরনের বিপদজনক ও অবৈজ্ঞানিক মতবাদ চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মার্কিন-কানাডা-ইউরোপীয়ান লিবারেল সরকারগুলা রাজনৈতিকভাবে ফায়দা নিচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবেও অনেকে লাভবান হচ্ছে। লিঙ্গ রূপান্তরের ইন্ডাস্ট্রি বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হচ্ছে। সেই সাথে যাদের ভোক্তা বানানো হচ্ছে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন NCBI তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের উল্লেখ করেছে, জেন্ডার ট্রান্সফরমেশনের ফলে ফ্র‍্যাকচার, হরমোনজনিত ক্যান্সার, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ ও স্ট্রোকসহ নানা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস NHS বলছে, অস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টোরণ হরমোন থেরাপির ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও বন্ধ্যা হওয়ার ঝুঁকি অত্যাধিক। ফলে এটা পরিষ্কার, পশ্চিমাদের এলজিবিটিকিউ মতবাদ চাপিয়ে দেয়াটার প্রবণতা বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের অন্যতম হাতিয়ার। অথচ এই মতবাদকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো পরিষ্কার নয়। এরপরেও কেউ অন্যের সমস্যা না করে ব্যক্তিজীবনে এলজিবিটিকিউ চর্চা করতে চাইলে সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এই মতবাদের বৈষম্যমূলক, অবৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলোর ঠিকঠাক মীমাংসা না হওয়ার পরও এটা নিয়ে নোংরা রাজনীতি ও স্বৈরতান্ত্রিকভাবে চাপিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা, তার বিরুদ্ধে আওয়াজ ও প্রশ্ন তোলাটা অত্যন্ত জরুরি।

লেখক: কবি ও কলামিস্ট