এমরান মাহমুদ প্রত্যয়ের গুচ্ছকবিতা

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৩

বছরের শেষ মুহূর্ত

 

চোখের জল মুছে আর বিদায় জানাবো না
বরং আরও উদ্দীপ্ত আমি
প্রতিবার তুমি চলে যাও
আর বলে যাও সব কিছু পুরাতন হয়ে গেছে
যাবেই যখন যাও, কে থামাবে তোমাকে!
মনের অব্যক্ত কথামালা পুরাতন ক্যালেন্ডারে মতো তোমাকে কি থামানো যায়?
সময় বড় অদ্ভুত ঠিকানায়-অঠিকানায় ছুটে চলে।

 

দিনশেষ রাতের মধ্যপ্রহরে আমি আরও তরুণ হবো
কাল সকালে আবার জেগে উঠবো সবার আগে
সুর্যের আলোয় নতুন সম্ভাবনা নিয়ে
বিকষিত সবুজ পাতা
উদ্দীপ্ত হবো শীতল বাতাসের গানে
অনবরত মুগ্ধ হবো ফুলের গন্ধে
শিশুদের কোলাহল গায়ে মেখে
হেসে উঠবো অবারিত আনন্দে
আরও স্পন্দিত হবো হৃদয়ের গ্রন্থিতে
হবো উচ্ছ্বল শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে
প্রজাপতির বর্ণালি ডানা
আলো ঝড়ে পড়বে বৃষ্টির মতো, অবাক হবে তুমি নানা রঙে।

 

সময়ের খরস্রোতে ডুব দাও তুমি
ছায়াপথের বেলাভূমিতে বসেশুয়ে
সৌরস্নান করতে করতে
কতবার পরিভ্রমণ করো এই সূর্যলোকে?
তবে একটি জলন্ত সত্য
আসা-যাওয়ার মাঝপথে
তুমি চলে যাও, এ কথাটা কিন্তু একদম ঠিক নয়
বরং সময়ের পরিক্রমায়
ফিরে আসো নতুন নামে, নতুন সংখ্যায়
বছরের শেষ মূহুর্তে আমাকে রাখতে চাও হাজারো উত্তেজনায়।

 

পুরাতন অতীত বলে আমাকে দমাতে চাও, তবে
আমি কিন্তু দুর্দমনীয়
প্রতিবার শুকনো পাতা ঝরে পড়ার শব্দ শুনিয়ে
আমার পাশ কাটিয়ে যতদূর চলে যাও
কী বোঝাতে চাও তবে এসব শব্দে?
আমার মনকে ভেঙে ফেলতে চাও, পারবে কি?
আমায় কি ভাঙতে পারো ভেঙেপড়া মর্মরে?
আমি কিন্তু অনমনীয়
উচ্ছ্বসিত হৃদয়ে অদম্য মনোবলে অবিরাম ছুটে চলা।

 

প্রতিবার আমি বলি
অলৌকিক আলো জ্বেলে নতুন আসবেই
সমৃদ্ধ করবে শূন্যতা যত
নতুনরা হাসবে নিজ বাসনায় আপন-পিয়াসী মনে
পাপমুক্তির ব্যাখ্যা করবে, আলোকিত করবে অন্ধকারের মুখ।

 

অন্তর্দ্বন্দ্ব বা ভয়ের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করে
তুমি কি আমাকে হতাশ করতে চাও
সময়ের চিরন্তন প্রতিদ্বন্দ্বী
বিরূপ প্রকৃতির সাথে প্রাগৈতিহাসিক যুদ্ধ
অন্যদিকে বরফের কফিন নিস্প্রাণ হিমঘর।
একটির পর একটি উপমা দিয়ে আবারও
দেখাতে চাও মৃত্তিকার নিচুতা বা অভিজাততন্ত্রের উচ্চতা না সীমাহীন গন্তব্যে ওই দূর সীমানা প্রাচীর ভেঙে
জীবনের ছায়ায় প্রতিবার হতাশ কিশোরের
কবিতার জাজ্বল্যমান ছাই প্রদর্শন করো
আর হেসে ওঠো, বলো, এসবে কিছু হবে না হবে না
কিছু হতে দেবে না?
তারপরও আমি বলি, আমাকে ভাঙা এত সহজ নয়।

 

চোখের জল মুছে
আমি কখনোই তোমায় বিদায় জানাবো না
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো না তোমার চলে যাওয়া
পথ পানে বরং বৃষ্টি আর সম্ভাবনার ডানায় পেখম মেলে নতুন পাতার আগমনে
আগামী সকালে সূর্যের আলোয় অবলোকন করবো যতটুকু পারি।
কার কত রূপ আর কার কত ছায়া বিকশিত হয়
মানবিক সত্যের আলোয়, প্রাণবন্ত থাকবো পৃথিবীর শেষ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

 

নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস

 

জেদ, ক্ষোভ কিভাবে যে ব্যাধিতে রূপ নিয়ে কষ্টে জমাট বাঁধে
তা আমি এখন ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি।
যে কর্মে সাময়িক ব্যর্থ হয়ে মনে জেদ এসেছিল সে কাজটিই এখন ভালোভাবে করতে পারছি না
কষ্টে বুকের মধ্যে হু হু করছে! আমি কি সত্যি ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি?
তবে কেন জেদকে জিঁইয়ে রেখে প্রবল বেগ ধরে রাখার পরিবর্তে
অলস কষ্ট আমাকে থমকে দিচ্ছে? নাহ! আমি বোধ হয় ভুল বুঝছি
কষ্ট আমাকে থমকে দিচ্ছে না বরং সাময়িক বিশ্রাম দিয়ে যাবতীয় হিসাব মিলিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে
আসলে মানুষের জীবনটা বোধ হয় এমনি! একদম নদীর মতো!
কখনও দু`কূল ছাপিয়ে চলে আবার কখনও শুকিয়ে ছোট খালে পরিণত হয়ে যায়।
ঠিক তেমনি মানুষের জীবন কখনো প্রাপ্তির আনন্দে ভেসে যায় আবার কখনো অপ্রাপ্তির কষ্টে
শব্দহীন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়...

 

আজন্ম ভালোবাসা

 

দূর্বিষহ মধ্যরাতে
নতুন বছরের হুঁশিয়ারি।
নতুন করে নতুন উন্মাদনায়
আবারও নতুন রূপে তোমার প্রেমে পড়া।
বিষাদের অভিমান ছুড়ে ফেলে
মগ্নতা নিবিড় আলিঙ্গনে
আবেগের যাতাকলে পিষ্ট
ফের জড়ানো মহাকালের ভালোবাসায়।
সব পিছুটান ভুলে
সব বাধাকে পিছনে ফেলে শুধুই এগিয়ে চলা।
জয়ী পথিকের মতো
নতুন প্রহরে তোমায় খুঁজে পাওয়া।
তোমার মাঝে মিশে গিয়ে
ভাবনার সবটুকু রঙে
নিজেকেই হারিয়ে ফেলা।

 

শেষ প্রহরে ফিরে আসে
আমার আজন্ম ভালোবাসা।

 

উল্টো জীবন

 

উল্টো পথে হাটঁছি আমরা
উল্টো পথের যাত্রী
উল্টো করে ভাবছি সবই
উল্টো দিন ও রাত্রি।

 

উল্টো যত হিসেব খাতা
উল্টো হিসাব নিকাশ
উল্টো সবই আইন কানুন
উল্টো সকল প্রকাশ।

 

উল্টো পথের পথিক আমরা
উল্টো ঘুমেই রাত
উল্টো পাল্টা জীবন নিয়ে
উল্টো বাজিমাত।

 

উল্টো জীবন স্বপ্ন দেখে
উল্টো করে সাজা
উল্টো এখন সবকিছুতেই
উল্টো মহারাজা।

 

উল্টো এখন জীবন চাকা
উল্টো করে চাওয়া
উল্টো পথে হাঁটছি সবাই
উল্টো সকল পাওয়া।

 

উল্টো জীবন উল্টো আমি
উল্টো বসবাস
উল্টো এখন সকল কিছুই
উল্টো সর্বনাশ।

 

খুঁজি জীবনের গতিপথ

 

চৌপাশ নেমে আছে বিভাবরী
এক মুঠো শবনম ভেজা রোদ্দুর চাই
গগনে অনেক মেঘের ঘনঘটা
এক পশলা বৃষ্টিতে সব কিছু মুছে ফেলে
নীলাম্বরের নীল রঙ চাই।
মলয় দূষিত তাই বিশুদ্ধ পবনের
পরশ চাই
চাই না দূষিত সমাজ আর পাপে ভরা জীবন
সমাজের ধূম্রজাল ঠেলে গড়ি নতুন এক ভুবন।
আলোকিত মানুষের অন্বেষণে
খুঁজি নতুন পথ খুঁজি নতুন দিগন্ত
উদ্ভাসিত দিবসে।

 

পরিচয়

 

আজ কত নাম তোমার সবার মুখে সারা দেশে
আমরা ধন্য আত্মার আলোকে
এই আলোকদীপ্তি
নিজের পরিচয় আজ উজ্জ্বল কর্ম বিশুদ্ধ
ধ্রুব সত্য আপন প্রকাশ...
তৃষ্ণার্থ বিবেক, সৃষ্টি, স্বপ্ন রচনা, ভূখণ্ড সীমার বাইরে
অজানা পথে অবাস্তবের পিছনে বিশ্বাস নিয়ে ছুটে চলা।
নিজের ব্যক্তি স্বরূপে সত্য পরিচয়ে আজ তুমি প্রতিষ্ঠিত।
আপন সীমার বাধা ভাঙতে পেরেছ
জানি দুর্গম ভৌগোলিক বাধাও ভাঙবে।