এক বিন্দু অশ্রু
এস এম শাহরুখ পিকলুপ্রকাশিত : নভেম্বর ২৩, ২০১৭
সায়েন্স ল্যাবরেটরির সিগন্যাল বাতিটা কি আছে? ছেলেটা ভাবে। ভাবার কি আছে, তাই না? চোখ তুলে দেখলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়! কিন্তু চোখ তার ঝাপসা। অশ্রু না মেঘের ছায়া, সে ভেবে দেখেনি। ধানমন্ডির এক নম্বর রোডের মুখে একটা নড়বড়ে টুল খালি পড়ে আছে। ওতে বসে পড়লো সে। পাশ দিয়ে মানুষ আর কত কিছু যাচ্ছে, হৈ-হুল্লোড়, চেঁচামেচি, গাড়ির হর্ন, না, সেগুলো সে কিছুই দেখলো বা শুনলো না। ওটা আমরা প্রাত্যহিক বিকেলের দৃশ্য বলে ধরে নিতে পারি। তাই না?
ছেলেটা কো্নো দিকে না তাকিয়েই অনামিকার কথা ভাবছে। ভাবছে একটা ভ্রূণের কথা, টিক টক টিক টক, ঘড়ির কাঁটার মত তা এগিয়ে চলেছে। একটা কোষ ভেঙে হচ্ছে সহস্র-নিযুত কোষ, ভ্রূণটা বাড়ছে, সময়ের মতো। দিনের আলো যেমন ফুরিয়ে আসছে, সামনে অন্ধকার- এই আলো আঁধারির সন্ধিক্ষণে আকাশে কমলা রঙের ছটা, ছাই রঙের মাঝে ছড়ানো ছিটানো। দিনের এই ক্ষণটা ছেলেটার কাছে খুব অদ্ভুত লাগে। যেন প্রকৃতির ঋতুস্রাবের সময়, এরপরে আবার নতুন সাইকেল শুরু- রাত, ভোর, সকাল, দুপুর, বিকেল, গোধূলি, সন্ধ্যা, আবার রাত... টিক টক টিক টক......অনামিকার ঋতুস্রাব আজ দু’মাস ধরে বন্ধ।
অনামিকার আসলে একটা নাম আছে, মোসাম্মৎ রাহেলা খাতুন। বড্ড সেকেলে লাগে বলে ছেলেটা তাকে অনামিকা ডাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বর্ষে পড়ে ওরা, ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট। কীভাবে জানি দ্যাখা ও পরিচয়, আজ ছেলেটার মনে পড়ছে না। সাধারণ বন্ধুত্ব থেকে সখ্য, একটু ঘোরাঘুরি, একদিন রফিকের বাড়িতে যাওয়া। রফিকের খালি বাড়িতে ও একাই ছিল। হাতে হাত, ঠোঁটে ঠোঁট, তারপর.. বাকিটা যৌবনের উত্তাল যৌনতার জোয়ার। ও কী অনামিকাকে সেদিন ভালোবাসতো, আজকে কী বাসে? অবশ্যই ভালোবাসে বলে আমরা চিৎকার করলেও ছেলেটা কানে শুনছে না আজ।
কলাবাগানের এক ওষুধের দোকানের কর্মচারীর পরামর্শ মতো সে মেন্সট্রুয়াল রিলিফ বড়ি কিনেছে, সঙ্গে কয়েকটা ঘুমের ওষুধ। সেগুলো পকেটে নিয়ে সে এই শেষ বিকেলে বসে আছে। কিছু আগে অনামিকাকে ফোন করে ওগুলোর কথা বলায় সেই মেয়ের সাফ উত্তর যে, ওটা তাদের ভালোবাসার ফল, সে ফলকে সে টেনে ছিঁড়তে পারবে না। তাহলে? বিয়ে?
ছেলেটা ক্ষোভে ফেটে পড়তে চায়। সে তো কখনো অনামিকাকে বলে নি ভালোবাসি। মিনিট কয়েকের দুর্বলতা কেন তাকে বাকি জীবন টানতে হবে? সে তো অনামিকাকে দুনিয়ার যে কোন মেয়ের থেকে বেশি পছন্দ করে। অনেক পছন্দ আর ভালোবাসা কি সমার্থক?
চোখ দু’টো ছলছল করে উঠলো। একটা প্রকাণ্ড অশ্রুবিন্দু ডান চোখের এক কোণে সে অনুভব করলো। সেই বিন্দুতে সমুদ্রের গর্জন, ঝড়ের ক্ষিপ্রতা কিন্তু তা সাধারণ বৃষ্টির এক বিন্দু পানির মত নপুংসক ভাবে তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। ও উঠে দাঁড়ালো, হাঁটতে থাকলো, কোন দিকে সে জানে না।