ইসলামে সমাজবাদ বলে কিছু নেই

পুনর্মুদ্রণ

আবুল হাশিম

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৫, ২০১৯

ইসলামে ‘সমাজবাদ` বলে কিছু নেই। ইসলামি সমাজবাদ কথাটি একটি আত্মবিরোধী উক্তি। ব্যক্তিগত মালিকানা দ্বারা যেমন ব্যক্তির নিজস্ব সম্পদ যদৃচ্ছ ব্যবহারের অধিকার বোঝায়, সমাজবাদ দ্বারাও তেমনি বোঝায় সামাজিক ও জাতীয় সম্পদে সমাজের যদৃচ্ছ অধিকার। এক্ষেত্রে ব্যক্তির বদলে সমাজ একটি ব্যক্তিরূপ নেয় মাত্র। তাছাড়া বিশ্বের জাতিপুঞ্জের মাঝে প্রত্যেকটি জাতিই এক একটি ব্যক্তি বিশেষ। সে হিসেবে সমাজবাদকে বলা যায় বৃহত্তর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ; এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের যা দোষ-ত্রুটি, তার সব কিছুই এতে শোচনীয়তর রূপে প্রচ্ছন্ন রয়েছে।

ব্যক্তিস্বতন্ত্র্যবাদের শোষণ ব্যক্তি বা শ্রেণিতেই নিবদ্ধ; কিন্তু শক্তিশালী জাতিদের হাতে সমাজবাদ পৃথিবীর দুর্বলতর জাতিসমূহকে শোষণ ও নিষ্পেষণের চূড়ান্ত নির্মম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বঙ্গীয় মহাদুর্ভিক্ষে মানুষ হাজারে হাজারে মৃত্যু বরণ করে, ক্ষুধার জ্বালায় পিতা-মাতা সন্তানদের বিক্রি করে দেয়, এক মুঠো অন্নের বিনিময়ে নারী ইজ্জত বিসর্জন দেয়। অথচ সে সময়েই আমেরিকা ও রাশিয়ায় গমের একটি অতিরিক্ত ফলন হয়। কিন্তু সে অতিরিক্ত ফসল বাজারে এসে শস্য-মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বোধ করবে এবং তাতে শস্যাধিপতিদের উচ্চতর মুনাফার উপর অসুবিধাজনক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে, এই আশংকায় আমেরিকা লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য আটলান্টিকের অতল গভীরে বিসর্জন দেয়।

রাশিয়া তার জ্বালানি সম্পদ বাঁচাবার অজুহাতে এই অতিরিক্ত খাদ্যশস্য চুলায় জ্বালিয়ে খতম করে দেয়। শুধু বাংলাদেশের লাখ লাখ ক্ষুধার্তের কথা বাদ দিলেও আল্লাহ্‌র রাজ্যের পশু-পক্ষী, কীট-পতঙ্গাদি পর্যন্ত সুন্দর ধরণীর এ দান ভোগ করার প্রকৃতিদত্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

আবার জিজ্ঞাস্য, কেন এ সম্ভব হলো? এর উত্তরও অত্যন্ত সোজা, সমাজবাদের ইহা স্বাভাবিক পরিণতি। আমেরিকা ও রাশিয়া মনে করেছিল, তাদের নিজ নিজ সম্পদ স্বজাতির স্বার্থ রক্ষার্থে যে কোনোভাবে ব্যবহার করার অবাধ অধিকার তাদের রয়েছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে দু’ধারী তলোয়ারের মতো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও সমাজবাদ দুয়েরই সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেছে। ইসলামি অর্থনীতির মূল কথা হলো, বিশ্বমানবতাবাদ।

আবুল হাশিম, সমাজ পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় ইসলামী মূল্যবোধ, ইসলামি ফাউন্ডেশন পত্রিকা, দ্বিতীয় বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, ১৯৬২