ইনকা সাম্রাজ্যের এতিহ্য ঘাসের সেতু
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : জুন ১৭, ২০১৯
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর কুজকো রাজ্যের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী আপুরিমাকের ওপর তৈরি করা হয়েছে ঘাসের সেতু। এ সেতু টানা ছয়শো বছর ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১৩ সালে সেতুটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়।
এ নদীর অববাহিকায় বাস করছে হাজার বছরের পুরানো ইনকা সভ্যতার উত্তরসূরীরা। ইনকা সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের সংযোগ হিসেবে কাজ করতো এ সেতু। প্রথা অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে যুক্ত হতে পারে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা। নারীরা পাহাড়ের ওপর বসে ছোট ছোট দড়ি বোনার কাজ করে।
পুরনো সেতুটিকে কেটে নদীর পানিতে ফেলে দেয়া হয়। কেননা এটি ঘাসের তৈরি হওয়ায় পানিতে পচে মিশে যায়। প্রকৃতির কোনো ক্ষতি করে না। নতুন সেতু বসানোর আগে পুরুষরা পুরনো সেতুটি সরিয়ে নেয়। ছোট ছোট দড়িগুলোকে তারা একসঙ্গে করে বোনে। এ সেতুর প্রধান ভিত্তি ছয়টি বড় আকারের ত্রিপাল দড়ি। যেগুলোর প্রতিটি প্রায় এক ফুট মোটা। ১২০টি চিকন দড়ি পেঁচিয়ে এটি তৈরি করা হয়। প্রতিটি পরিবারকে দুই স্তরের দড়ি সরবরাহ করতে হয়। কোয়া ইচু নামের বিশেষ ধরনের শক্ত ঘাস দিয়ে তৈরি করা হয় এ সেতু।
প্রতিটি দড়ি বোনা হয় হাত দিয়ে। প্রতিটি ঘাস পাথর দিয়ে পিটিয়ে সমান করা হয়। তারপর পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। যখন সবাই সেতু বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকে তখন গ্রামের কেউ কেউ কাঠের চুলায় রান্নার আয়োজন করে। গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে এই কাঠের চুলাগুলো সংগ্রহ করা হয়। রান্না করা হয় মুরগি, গিনিপিগ, ট্রাউট মাছের মতো নানা খাবার।
সেতুর জন্য বানানো মোটা ছয়টি দড়ির মধ্যে চারটি বসানো হয় সেতুর মেঝে হিসেবে। বাকি দুটো বসানো হয় কিছুটা উঁচুতে হাত রাখার জন্য। এবং এই ছয়টি দড়ি ঝোলানোর জন্য গিরিখাদের দুই প্রান্তে বিশালাকার পাথরের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা হয়। সঠিক মাপে দড়ি ঝোলাতেই সময় ব্যয় হয় সবচেয়ে বেশি।
এরপর কয়েকজন ব্যক্তি এই দড়িগুলোর ওপর হেঁটে হঁটে ছোট আকারের দড়ি দিয়ে বাকি সেতু বোনার কাজ করে। এ কাজ তারাই করতে পারেন, যাদের কোনো উচ্চতাভীতি নেই। তারা মূলত ছোট দড়িগুলো দিয়ে মেঝের সঙ্গে হাতলকে জুড়ে দেয়। অর্থাৎ বেড়ার মতো নির্মাণ করেন, যেন সবাই নির্ভয়ে সেতু পার হতে পারে।
সেতু নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো আধুনিক সরঞ্জাম বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। এখানে ব্যবহৃত হয় শুধু ঘাস আর জনশক্তি। কিউএসওয়াচাকা নামের এই সেতুটি বছরে একবার পুনঃনির্মাণ করা হয়। সেতু বানানো শেষে আয়োজন করা হয় খাবার দাবার আর সংগীতানুষ্ঠানের।
মূলত চারদিন ধরে চলে এই সেতু বানানোর আনুষ্ঠানিকতা। চতুর্থ দিনেই উৎসব করা হয়। এবং প্রতিবছর ১২ জুন তাদের এই উৎসবের দিনটা পড়ে যায়। সূত্র: বিবিসি