ইজরায়েলে একশোর বেশি ক্ষেপনাস্ত্র হামলা ইরানের

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ০২, ২০২৪

ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে একশোর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার পর ইজরায়েলের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী বিবৃতিতে জানায়, ইরান প্রায় ১৮০টি মিসাইল ছোড়ে। অনেক মিসাইল ভূপতিত করা হয়েছে। তবে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে কিছু আঘাত এনেছে। ইরানকে এই হামলার পরিণাম ভোগ করতে হবে।

ইজরায়েলের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছে, হামলায় তেল আবিবে অন্তত দুজন কিছুটা আহত হয়েছে।

ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড জানায়, সম্প্রতি হামাস, হেজবুল্লাহ ও ইরানের সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যার জবাবে এই মিসাইল হামলা চালানো হয়। ইজরায়েল যদি এই হামলার জবাব দেয় তবে আরও হামলা চালানো হবে।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে তারা ইজরায়েলকে সহায়তা করেছে।

যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, যুদ্ধে ইজরায়েলকে সহায়তায় অংশ নিয়েছে ব্রিটিশ সৈন্যরা।

শনিবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা অঙ্গীকার করেছিলেন, তাদের মিত্র হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে।

ইরানের হামলার মধ্যেও লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে ওই হামলা চালানো হয় বলে দেশটি দাবি করেছে।

এই সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে আজ বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে অনুষ্ঠিত হবে।

দক্ষিণ লেবাননে ইজরায়েলি বাহিনী তাদের ভাষায় `হেজবুল্লাহ সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে` অভিযান শুরু করার পরই ইরান এই মিসাইল হামলা চালালো।

গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় বছরব্যাপী সংঘর্ষের পর ইজরায়েল এই অভিযান শুরু করে। তারা বলছে, হিজবুল্লাহর হামলায় সীমান্ত এলাকার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই তারা এই আক্রমণ শুরু করেছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর অপরিশোধিত তেলের দাম রাতারাতি বাড়তে শুরু করেছে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম একদিনে এক শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪.৪০ ডলার।

বিশ্বে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান সপ্তম। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেহরানের রাস্তায় মানুষজন নেমে এসে উৎসব করতে শুরু করে। তাদের অনেকের হাতে ইরান ও হিজবুল্লাহর পতাকা এবং হাসান নাসরাল্লাহর ছবি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ও জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি বলেন, “হামাস ও হিজবুল্লাহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। ইজরায়েলি ভবিষ্যৎ হামলার আরো জোরালো জবাব দেয়া হবে।”

ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত ডানি ডানন ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের সর্বশেষ হামলার সমুচিত জবাব দেয়া হবে। আমাদের যুদ্ধের কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু যখন আমাদের বেসামরিক লোকজনের ওপর এভাবে হামলা করা হচ্ছে, তখন আমরা অলস বসে থাকতে পারি না।”

গত সপ্তাহ জুড়েই নিরাপত্তা পরিষদের বিরুদ্ধে `নিষ্ক্রিয়` থাকার অভিযোগ করে আসছে ইরান। দেশটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে পুরোদস্তুর একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আগে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া উচিত পরিষদের।

মিসাইল হামলার আগে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলিদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা ইরানের অশুভ পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযানে রয়েছি।”

ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, “ইরান থেকে ইজরায়েলে সরাসরি কোনো সামরিক হামলা চালানো হলে তার জন্য ইরানকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।”

এর আগে এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলায় কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর ঘটনায় ইজরায়েলে ৩০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালায় ইরান।

সেসময় প্রায় সবগুলো ড্রোনই ভূপতিত করেছিল ইজরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের আরব মিত্ররা। ঐ হামলায় ইজরায়েলের একটি বিমান ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জবাবে তখন ইরানের একটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েল। সূত্র: বিবিসি