আস্তিক, নাস্তিক, প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল প্রসঙ্গে

তুষার গায়েন

প্রকাশিত : জুন ১৯, ২০১৮

অনেকের মনে এমন ধারণা বা অভিযোগ রয়েছে যে, আমাদের দেশে প্রগতিশীলরা মনে করেন ও প্রচার করেন যে ধর্মবিশ্বাসী বা আস্তিক মানুষ মাত্রই প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদী। এই ধারণা সঠিক নয়। বাস্তবতা এই যে, আমাদের দেশে যারা প্রগতিশীল বলে পরিচিত, তাদের মধ্যে আস্তিক এবং নাস্তিক, উভয় ধারার মানুষজনই আছেন। শুধুমাত্র যারা ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক ও আধুনিক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী; ধর্মের কোনো সমালোচনা শুনলে যারা সমালোচককে হত্যা করা জায়েজ মনে করে এবং মুক্তচিন্তা, শিল্প-সাহিত্য-নন্দনচর্চার যারা ঘোর বিরোধী, তাদেরকেই সাধারণভাবে প্রতিক্রিয়াশীল বলা হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রগতিশীল চিন্তা-চর্চা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যাদের অনুসরণ করা হয়, তাদের মধ্যে আস্তিক রবীন্দ্রনাথ, আস্তিক লালন, নাস্তিক মার্ক্স-এঙ্গেলস, আস্তিক-নাস্তিক নজরুল, আস্তিক মুজিব, আস্তিক ভাসানী, নাস্তিক মনি সিংহ— সবাই মিলেমিশে রয়েছেন। তারা মানুষের চেতনায় সহাবস্থান করতে পারছেন, কারণ তারা আস্তিক্য ও নাস্তিক্যবাদী দর্শন ছাড়াই সামগ্রিক অর্থে মানবতাবাদী— মানুষ এবং সমাজের পরিবর্তনে বিশ্বাসী।

যে কোনো ধর্ম অথবা মতবাদ, সূচনাকালে প্রগতির বার্তা নিয়েই আসে। পরে তা কায়েমী স্বার্থের হাতে কুক্ষিগত হলে, মৌলবাদে রূপান্তরিত হয়। সেই অর্থে ধর্মীয় মৌলবাদ যেমন হয়, মার্ক্সীয় মৌলবাদও তেমনি সম্ভব। তবে মার্ক্সবাদের দিশারী হয়েও তার যুগোপযোগী সমালোচনা করে, নতুন মত ও পথের দিশা খুঁজছেন নতুন চিন্তাবিদ ও দার্শনিকরা।

পার্থক্য এতটুকুই, নাস্তিকতার সমালোচনা করলেই, নাস্তিকরা বিশ্বাসীদের গলা কাটতে আসে না; কিন্তু পৃথিবীতে এমন ধর্ম ও আস্তিক আছেন, যাদের ধর্ম বিশ্বাসে সামান্য আঘাত লাগলেই তারা ঘনিষ্ঠজনের গলা কাটতেও দ্বিধা করে না। তাই মৌলবাদের নিন্দা তাদেরকেই বেশি বহন করতে হয়, কেননা তারা কোনো ধরণের সমালোচনা ও পরিবর্তনে বিশ্বাসী না।

লেখক: কবি