সংগৃহিত

সংগৃহিত

আসিফার ধর্ষণ ও ভারতের হিন্দুত্ববাদ

আরকাডি গায়দার

প্রকাশিত : এপ্রিল ১২, ২০১৮

যারা এখন আসিফার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিবরণ পড়ে চমকে উঠছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, একে নিছক খুন না ধর্ষণ হিসেবে দেখবেন না। একের পর এক ঘটনাবলি দেখুন।

আসিফা আট বছরের শিশু। কাশ্মীরের বাখারওয়াল মুসলিম উপজাতির সদস্য। জম্মুর কাঠুয়া অঞ্চল থেকে এই উপজাতি দলটিকে বিতাড়িত করতে তাদেরকে ভয় দেখাতে হবে। তাই আসিফাকে অপহরণ এবং ধর্ষণ। এখানে ধর্ষণ হলো রাজনৈতিক রণকৌশল। বা হয়তো শুধু কৌশল নয়, ধর্ষণই রণনীতি। এক এক করে দেখি আসুন।

আসিফাকে অপহরণ করে তাকে একটি মন্দিরের পূজাগৃহে হাত-পা বেঁধে রাখা হলো প্রায় সাত দিন। তাকে ওষুধ খাইয়ে আছন্ন রাখা হলো। বারবার ধর্ষণ করা হলো। ধর্ষণের সময় অঞ্চল থেকে বাখরাওয়ালদের পলায়ন চেয়ে ধর্ষকরা পূজআচ্চাও করলো। ধর্ষকরা ডেকে আনলো স্পেশ্যাল পুলিশ অফিসারকে। সেও ধর্ষণ করলো। এরমধ্যে একজন মীরাট থেকে তার বন্ধুকে ডেকে পাঠালো। সে মীরাট থেকে ধর্ষণ করতে চলে এলো। রেপ ট্যুরিজম।

এরপর আসিফাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হলো। তারপর তার দেহ ফেলে দেয়ার আগে শেষবারের মতো আরেকজন ধর্ষণ করলো। এরপর তার মৃতদেহকে বনে ফেলে দিয়ে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়া হলো। পুলিশ প্রথমে মিসিং পার্সনস কমপ্লেন নেয়নি। নেয়ার পর একে একে যখন গ্রেপ্তার করা শুরু করলো তখন অপরাধীদের সমর্থনে মিছিল মোর্চা মিটিং শুরু হয়ে গেল। হিন্দু একতা মঞ্চ তৈরি হলো। বিজেপির এমএলএ, মন্ত্রী ধর্ষকদের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেল।

মহিলারা ধর্ষকদের সমর্থনে গায়ে আগুন দেয়ার হুমকি দিলো। হিন্দু একতা মঞ্চ জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করলো। হ্যাঁ, আমাদের তেরঙ্গা পতাকাকে ওড়ানো হলো ধর্ষণের বিজয়োৎসব পালন করতে। এই গোটা সার্কাসটার পরে যখন কোর্টে চার্জশীট ফাইল করতে গেল পুলিশ, তখন জম্মু বার অ্যাসোশিয়েশনের উকিলরা অবরোধ করে স্লোগান দিল, জয় শ্রী রাম। এরপরও কোর্টের বিচারপতিরা পুলিশকে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করালো। চার্জশিট তারা নেবে না। ছয় ঘণ্টা অপেক্ষারত পুলিশের থেকে শেষমেষ চার্জশিট গ্রহণ করা হলো।

আপনারা ভাবছেন এরকম কেন? ধর্ষকের সমর্থনে কি করে এতগুলো মানুষ মিছিল করে, জাতীয় পতাকা ওড়ায়, জয় শ্রীরাম স্লোগান দেয়? এতক্ষণে তাহলে আপনি সঠিক প্রশ্নটি করেছেন। পুলিশ, এসপিও, এমএলএ, মন্ত্রী, উকিল, জাজ- এটাই হলো ভারত রাষ্ট্র। আর ওই আট বছরের শিশু আসিফা- ওটা হলো কাশ্মীর। এই প্রত্যেকটি লোক যারা মিছিল করছে, স্লোগান করছে- তাদের মাথায়, চেতনায়, তা-ই। এ জন্যে ওদের কাছে এটা স্রেফ ধর্ষণ নয়, এখানে অপরাধীরা স্রেফ ধর্ষক নয়, আসিফা স্রেফ একটি বাচ্চা মেয়ে না। ওরাও জানে, একদম সবার চোখের সামনে ওরা প্রকাশ করে ফেলেছে ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্র আর কাশ্মীরের সম্পর্কটা ঠিক কি। সেই কাশ্মীর, যেখানে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রত্যেক তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন ধর্ষিত।

হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন। প্রত্যেক তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন। ওরা আসলে ধর্ষকদের স্বপক্ষে মিছিল করছে না। করছে নিজেদের স্বপক্ষে। কারণ ওরা জানে, ওরা প্রত্যেকে এই অপরাধে অংশ নিয়েছে। এবং ওরা চায় আপনিও অংশীদার হন। তাই আপনার ধর্মীয় বোধকে উস্কাতে জয় শ্রীরাম, আপনার জাতীয়তাবোধকে উস্কাতে তেরঙ্গা পতাকা। একটি আট বছরের ধর্ষিতা শিশুর মৃতদেহ লড়ছে। লড়ছে শুধু ধর্ষকদের বিরুদ্ধে না, কাশ্মীরে ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে। ওদের তেরঙ্গা, ওদের ধর্ম পক্ষ বেছে নিয়েছে। ধর্ষকের পক্ষ। আপনার তেরঙ্গা, আপনার ধর্ম কোন পক্ষ বাছবে?