সংগৃহিত

সংগৃহিত

আশ্রয়

২য় পর্ব

সুলতানা পারভীন

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৭, ২০১৯

 
রেডি হয়ে কতোক্ষণ রুমে বসে ছিলাম খেয়াল নেই। প্রায় দুঘণ্টা তো হবেই। এর মধ্যে মহুয়া খাবার দিয়ে গেল। খাবার খেয়ে ভেবেছিলাম রুম থেকে বের হতে পারব-তা আর হল কই! বিবাহ-বার্ষিকীর এই দিনে গৃহবন্দী করে রাখার কোন মানে আছে?
 
বসে বসে বিরক্ত লাগছিল। কি ভেবে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। অনেকগুলো ফুলের গাছ। ফুলের গন্ধে সারা বারান্দা মো-মো করছে।।ফুল দেখে খেয়াল হল-প্রতিবছর এই দিনটাতে মোহনা গাছ থেকে ফুল তুলে নিজ হাতে মালা বানায়-আর আমি ওর চুলে সুন্দর করে লাগিয়ে লাগিয়ে দেই। কিন্তু এইবার একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা কোথায় অফিস থেকে দুদিনের ছুটি নিলাম একটু দিনটা ভালো করে সেলিব্রেট করব এখন ভেবে আর কি হবে।
 
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে মোহনাকে কল দিলাম।
 
-হ্যালো? মোহো?
-হুঁম।
-কি হচ্ছে কি বলো তো?
-আমি কি জানি? মহুয়া আমাকে রুম থেকেই বের হতে দিচ্ছে না।
-আর আমাকে বাঁধনটা। আসামী আসামী লাগছে।
-হুঁম।
-মোহো,মন খারাপ তোমার?
-না, তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
-চলো। আবার পালিয়ে যাই।
-তুমি যে কি বলো না? একবার পালিয়ে পরিবার থেকে এতোগুলো বছরের জন্য আলাদা হয়ে গেলে আবারও পালানোর কথা ভাবতে পার?
-পালাই তো নি মোহো? ছেড়ে এসেছিলাম। আর হয়ত সেদিন সব ছেড়েছুড়ে না আসলে আজকের দিনটা সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো।
-তাতে কি খুব বেশি কিছু হতো?
-হতো না আবার? তোমাকে পেয়েছি, মহুয়াকে পেয়েছি, তখন তো পেতাম না। একটা জীবন অপূর্ণই থেকে যেত।
 
-মোহো? কান্নাকাটি করবে না কিন্তু একদম।
-আজকের দিনটাতে তুমি পরিবার থেকে একেবারে আলাদা হয়ে গেছো, এটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনা আকাশ।
-এতো ভেব না। মা পুরো ব্যাপারটাতে এতো বেশি গন্ডগোল করে দিয়েছিল-একটা রাস্তা বেছে নেওয়া ছাড়া তখন আমার কিছু করার ছিল না। কারণ ও বাড়িতে থাকতে হলে মহুয়াকে আমাদের ছাড়তে হতো। সেটা ভাবতে পারিনি কখনোই।
-তুমি চাইলেই কিন্তু।
-তবে চাইনি। তোমার কোলে মহুয়াকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম-সেটা আজো ভুলিনি মোহো। আর ওকে যখন প্রথমবার কোলে নিয়েছিলাম আমি- বাবা হওয়ার আনন্দটা তখনই টের পেয়েছিলাম। এর পর মহুয়াকে কোথায় কোন অনাথ আশ্রমে ছেড়ে আসার কথা আমি ভাবতেই পারিনি। 
-কিন্তু তুমি আমাদের জন্য।
-মোহো, তুমি না বেশি বেশি ভেবে ফেলো। তোমার ভাবনা চিন্তায় মাঝে মাঝে আমিও নিজেকে গুলিয়ে ফেলি। মহুয়া শুধু তোমারই মেয়ে? আমার কেউ না নাকি?
 
 
-মা, তোমরা আবার, এই বাবা! তোমার কি ব্যাপার বলো তো? একটু না দেখে থাকতে পারছ না মাকে?
-না বাবা পারছি না। তোর একটা বিয়ে দিয়ে দিই তখন বুঝবি তুই পারিস কিনা।
-আমার বুঝতে হবে না যাও।
-আহারে আমার মহুমাটা লজ্জা পয়েছে।
-বাবা!! ভালো হবে না।
-এবার তোমার ভাই থেকে রেহাই দে মা। আমি একটু বাইরে যাব।
-জ্বি না। আমাদের সারপ্রাইজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা রুমের বাইরেই আসতে পারবে না। ঘরের বাইরে তো ভুলেই যাও।
-মহুয়া!
 
 
মেয়েটা মোবাইলটা কেটে দিল। এটা কোন কথা হলো! কেমন পাজি হচ্ছে দিন দিন। আর ছেলেট! সে তখন থেকে মোবাইল গুতিয়েই যাচ্ছে। কত রকম ঘুষের লোভ দেখিয়েও কাজ হচ্ছে না। এদের প্লানটা কি আল্লাহ মালুম!
 
 
বাইরে থেকে মনে হচ্ছে অনেক লোকের গলার আওয়াজ পাচ্ছি। পরিচিত কিছু কণ্ঠস্বর। কারা হতে পারে?কেউ কি বাসায় এসেছে?
 
 
 
চলবে