আশ্রয়
পর্ব ১
সুলতানা পারভীনপ্রকাশিত : জানুয়ারি ০১, ২০১৯
আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। বিশ বছর আগের এই সুন্দর দিনটাকে ক্যামেরাবন্দী করা হয়ে উঠে নি।তখন তো আর হাতে হাতে ক্যামেরা বা স্মার্টফোন ছিল না। তবে বিশ বছর আগের এই দিনটার কথা চিন্তা করলে আজো মনের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে।
আমার আর মোহনার বিয়েটা হয়েছিল একেবারে খাপছাড়া। কোন অনুষ্ঠান নয়-কোন আত্মীয় স্বজন নেই।একদম কিচ্ছু না।পানসা পানসা টাইপের একটা বিয়ে।। কেবল কাজী অফিসে গিয়ে কোনমতে নামমাত্র বিয়ে যাকে বলে। অথচ এই দিনটার জন্য আমাদের পাঁচ-পাঁচটা বছরের কতো স্বপ্নীল জল্পনা কল্পনা ছিল।হয়ত আরো ছমাস আগে হলেও সবগুলো স্বপ্নই দুটো পরিবার সুন্দরভাবে পূরণ করতেন। তবে তাতে কোন ক্ষোভ নেই আমার। বিয়ের দুষ্টু মিষ্টি আচার অনুষ্ঠান গুলোর চেয়েও যে দামি জিনিসটা আমাদের কাছে ছিল-সেটা হল মহুয়া। আমাদের ছোট্ট মহুয়া।
কোলে মহুয়াকে নিয়ে যখন বিয়ের রেজিস্ট্রিতে আমি আর মোহনা সাইন করছিলাম-তখন কাজি সাহেব আর অন্যদের মুখ হয়েছিল দেখার মতো। ভাবলে এখনো হাসি পায়। ভাগ্যিস ছবি-টবি নেই-তাহলে আমাদের বিয়ের ছবি দেখে মহুয়ার যে কি হাল হতো কে জানে?
আজ সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখলাম মোহনা সুন্দর করে সেজেছে। আমি ওর দিকে তাকাতেই ও লজ্জায় লাল-নীল-বেগুনি হতে লাগল।
-তোমার মেয়ের কান্ড দেখেছ? এতো সকালে এভাবে সেজেগুজে থাকার মানে আছে বলো তো?
মোহনার হাত ধরে আলতো করে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম।
-তোমাকে কিন্তু ভিষণ সুন্দর লাগছে।
-বাবা? আমি কিন্তু কিছু দেখি নাই।
মহুয়ার কণ্ঠ শুনে ঘুরে ওর দিকে তাকালাম। মহুয়া চোখের সামনে একটা হাত দিয়ে চোখ ঢাকার মতো করে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা যে কখন এসেছে টের পাই নি। মিটি মিটি হাসছে এখন।
-মহুয়া। তোর জন্য কি আমি একটু প্রেমও করতে পারব না তোর মায়ের সাথে?
-ওমা! আমি কি করলাম! আমি তো তোমাকে নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি দিতে এলাম।
এবারে খেয়াল করলাম মহুয়ার হাতে সত্যি সত্যিই নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি।
-কি রে। তোর মাকে বউ সাজিয়ে বসে আছিস আর এখন আমাকে বর সাজাচ্ছিস। তোদের কাহিনীটা কি?
-বাবা, এতো দিনে এই প্রথমবার আমার কোনো আইডিয়া তোমার মহুয়ার পছন্দ হয়েছে।
-বাঁধন?
আমার হাতে পাজামা-পাঞ্জাবি দিয়ে দাঁত কটমট করতে করতে মহুয়া বাঁধনকে ধরার জন্য ছুটল।
বাঁধন আমাদের জীবনের আর এক টুকরো খুশির নাম। মহুয়ার দু বছরের ছোট। কিন্তু মহুয়াকে ডাকবে নাম ধরে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। মহুয়া ধরতে পারলে আর রক্ষে থাকে না বেচারার।
কিন্তু বাঁধনের কোন আইডিয়া মহুয়ার পছন্দ হয়েছে বুঝতে পারছি না। এই দুইটা পুরোপুরি বানরের পর্যায়ের। ফলে এরা কোন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে-তাও আবার একত্রে কাজ করছে শুনলে মনে হয়-আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবে।
পাগল দুইটার কান্ড কারখানা বোঝার চেষ্টা করছি-হঠাৎ মোহনার দিকে নজর গেল। ভ্রু কুঁচকে কি যে এতো ভেবে যাচ্ছে কে জানে!
-এই যে? ভ্রু কুঁচকে মেকাপটা নষ্ট করো না। মেয়ে অনেক কষ্ট করে সাজিয়েছে।
-মোহনা?
-হুঁম? কিছু বলছ?
এবারে আমি ভ্রু কুঁচকে একটু ভাবনা চিন্তার মুড নিয়ে মোহনার দিকে তাকালাম।
-এভাবে কি দেখো আকাশ?
-কি ভাবছ?
-ভাবছি সেদিন যদি সবাই মিলে।
-মা-বাবা? তোমরা রেডি না হয়ে কথা বলছ? বাবা তুমি রেডি হও। মা তুমি চলো--। চলো?
-রেডি হয়ে কি হবে?
-তোমাদের জন্য সারপ্রাইজ আছে।
-তোদের সারপ্রাইজের জন্য তো দেখছি কবে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।
-বাবা? কি আজে বাজে কথা বলো না! মা তুমি চলো তো। বাঁধন তুই বাবার কাছে থাক। ভুল করেও যেন টাইমের আগে রুম থেকে না বের হতে পারে। আর মুখ খুলবি তো মাথা ফাটিয়ে দিব মনে থাকে যেন।
-তুই যা তো এখন। তুই মুখ বন্ধ রাখিস। যা যা। খালি খালি জ্ঞান দেয়।
দুজন দুদিকে গজগজ করতে লাগল। মহুয়া মোহনাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। আর বাঁধন রুম লক করে আমাকে অর্ডার করল-"বাবা রেডি হও।"
আমিও আর কি করা রেডিই হচ্ছি।
আর আজকের দিনে কি কি হতে পারে সেটাই ভেবে যাচ্ছি।
চলবে।