আমার পরবর্তী কবিতার বই এবং কিছু বিমূর্ত কথা

আবু হাসান শাহরিয়ার

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৬, ২০১৮

তথ্যপ্রযুক্তির অবদানকে আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। ঘরে বসেই কত কী জানতে ও দেখতে পাই বিজ্ঞানের এই অবদানের কারণে। ফেসবুকের সঙ্গেও বসবাস মাধ্যটির জন্মলগ্ন থেকে। নিজেকে নবায়ন করার ক্ষেত্রে এরও জুড়ি মেলা ভার। জীবন ভারি সুন্দর। জীবনকে এখন ফ্যাকো-চোখে দেখি। ফিরে ফিরে দেখি। লিখি কবিতা; কিন্তু, চিত্রকলার প্রতিও আছে অদম্য আকর্ষণ। প্রযুক্তির কল্যাণে কত সহজেই না কালজয়ী শিল্পীদের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলো দেখতে পাই। খ্যাতির আড়ালে থাকা কীর্তিমান শিল্পীদের কাজও নজরে আসে। মুগ্ধ হই আর মুগ্ধ হই। মুগ্ধ হতে হতে কিছু চিত্রকর্ম সংগ্রহেও রাখি। হোক না দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে কিছু কিছু ছবি ফেসবুকের বন্ধুদেরও দেখাই। ইতোমধ্যেই এমন শতাধিক ছবি দেখিয়েছি তাদের। ছবি নিয়ে মূল্যবান ভাবনাবিনিময় করেছেন অনেকে। শিখেছি। তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার বন্ধুবলয়ে বেশ কজন চিত্রকর আছেন। তাদেরও কেউ কেউ নিজেদের কাজ ফেসবুকে পোস্ট করেন। ভালো লাগে। আমি তাদেরই মনোরাজ্যের বাসিন্দা। যদিও আঁকতে পারি না। তবে, ছবির ঢেউ ঢেউ নদীরাজ্যে ডুবে সম্প্রতি লিখে ফেলেছি একবই কবিতা। শব্দরঙে ছবি আঁকার ব্যর্থ প্রয়াস। নাম দিয়েছি `বিমূর্ত প্রণয়কলা`।

আগামী বছর অমর একুশে বইমেলায় আনবে নাগরী। আমার ৪০টি কবিতা ছাড়াও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ২৪ কীর্তিমানের ২৪টি কাজের রঙিন ছবি থাকবে ভেতরে। যাকে তার নিজেরও একটি চিত্রকর্ম (আমার পছন্দের) দিয়ে প্রচ্ছদ করতে দিয়েছিলাম, ব্যস্ততাজনিত কারণে তিনি যথাগরজ না দেখানোয় ভাবছি, নিজেই জগদ্বিখ্যাত কোনও চিত্রকরের চিত্রকর্ম দিয়ে সেরে ফেলব কাজটা। এজন্য কোনও রাগ নেই শিল্পীর প্রতি। সজ্জন তিনি। স্নেজভাজন। আমার একটি বইয়ের সুন্দর প্রচ্ছদও করে দিয়েছেন কবছর আগে। আমি কৃতজ্ঞ।

আগেই উল্লেখ করেছি, আমার বন্ধুবলয়ে বেশ কজন চিত্রশিল্পী আছেন, যাদের সঙ্গে আমার মাঝেমধ্যে চিত্রকলা নিয়ে ভাবনাবিনিময় হয়। তাদের কেউ কেউ আমার ফেসবুক বন্ধুও। যেমন, Franco Leopardi, Rafi Haque, Tapan Saha, Samar Majumder, Arifur Rahman, Uttam Sen, Shohag Parvez, Anindita Biswas Roy, Mamun Hossain, Mostafiz Karigar, Biplob Datta, সিলভিয়া নাজনীন, Rinku Animikh। এদেরই একজনকে দিয়েছিলাম প্রচ্ছদের কাজটি। তিনি এর আগেও আমার একটি বইয়ের সুন্দর প্রচ্ছদ করে দিয়েছেন বলে ভেবেছিলাম, যে-বইয়ের ভেতরে ২৪ জগদ্বিখ্যাতের ২৪টি চিত্রকর্ম আছে, তার প্রচ্ছদে নিজের ছবি থাকবে ভেবে তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। ফোনের পর ফোন করে তিনি আমারও রাতের ঘুম হারাম করে দেবেন। না, ভুল ভেবেছিলাম। তাই, নিজেই করব সে-প্রচ্ছদ। একটু আধটু গ্রাফিক্স বুঝি, প্রচ্ছদশিল্পের জাদুকর ধ্রুব এষকে ডটপেন চালানো শিখিয়েছিলাম, শিল্পী উত্তম সেন ও আমি কর্মজীবনে বেশ কয়েক বছর পাশাপাশি টেবিলে বসে কাজ করেছি— এইটুকু জেদ তো করতেই পারি। অতীতেও এক-আধবার করেছি। প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য দুই শিল্পীবন্ধু রফি হক ও রিঙকু অনিমিখের প্রতি ভালোবাসা।

`বিমূর্ত প্রণয়কলা`য় যাদের কাজের ছবি থাকবে—

প্রাচ্য:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১- ১৯৪১)
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)
নন্দলাল বসু (১৮৮৩ -১৯৬৬)
যামিনী রায় (১৮৮৭ - ১৯৭২)
বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় (১৯০৪ - ১৯৮০)
রামকিংকর বেইজ (১৯০৬ - ১৯৮০)
জয়নুল আবেদিন (১৯১৪ - ১৯৭৬)
কামরুল হাসান (১৯৮১ - ১৯৮৮)
সফিউদ্দিন আহমেদ (১৯২২ - ২০১২)
এস এম সুলতান (১৯২৩ - ২০১২)
মোহাম্মদ কিবরিয়া (১৯২৯ - ২০১১)
কাইয়ুম চৌধুরী (১৯৩২ - ২০১৪)

পাশ্চাত্য:
পল সেজান (১৮৩৯ - ১৯০৬)
ক্লোদ মনে (১৮৪০ - ১৯২৬)
ফ্রাঁসোয়া অগুস্ত রেনে রদ্যাঁ (১৮৪০ -১৯১৭)
পিয়েরে অগুস্ত রেনেয়াঁ (১৮৪১ - ১৯১৯)
পল গঁগ্যা (১৮৪৮ - ১৯০৩)
ভিনসেন্ট ভ্যান গঁঘ (১৮৫৩ - ১৮৯০)
গুস্তাভ ক্লিমট (১৮৬২ - ১৯১৮)
জোক্যুইন সরোলা ওয়াই ব্যাস্তিদা (১৮৬৩ -১৯২৩)
পাবলো পিকাসো (১৮৮১ -১৯২৩)
মার্ক শাগাল (১৮৮৭ - ১০৮৫)
হেনরি মুর (১৮৯৮ -১৯৮৬)
সালভাদর দালি (১৯০৪ -১৯৮৯)

একুশে বইমেলা ২০১৮