আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর দশটি জেন কবিতা

প্রকাশিত : জুন ১২, ২০২২

জেন কবিতা বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান ইসেন্স—সেল্ফ রিয়েলাইজেশন, অ্যাওকনিং আর এনলাইটেনমেন্টের ওপর প্রতিষ্ঠিত। একজন জেন কবি জেন বৌদ্ধ ধর্মের স্প্রিচ্যুয়াল অনুশীলনের ওপর ফোকাস করে তার মনকে দেয় পৃথিবীকে পূর্ণভাবে বোঝার জ্ঞান ও শক্তি। এইসব কবিতায় মনকে কাচের মতো পরিষ্কার করে, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে, এমন সব অ্যাওকনিং মুহূর্তকে আবিষ্কার করা হয় যেখানে কবি/পাঠকের এনলাইটেন্টমেন্ট ঘটে। বৌদ্ধ বিশ্বাসে এনলাইটেনমেন্ট হলো চূড়ান্ত এমন একটি উপলদ্ধিস্তর, যেখানে বিশ্বকে তার ভেতরের সকল অভিজ্ঞতা আর জ্ঞানসমেত উপলদ্ধ করা যায়। সেই অর্থে জেন কবিতায় মেডিটেশনকে উপলদ্ধ করা হয় নিজেকে প্রকাশ হিসাবে, যেখানে একটা অভিজ্ঞতা, একটা উপলদ্ধির স্ফূরণ দেখা যায়— যা সেই অ্যাওকনিং আর এনলাইটেনমেন্ট সাথে জড়িত।

আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র তত্ত্বকথা বা গুরুদর্শনমূলক উপদেশ বা এমত বাণী দিয়ে কবিতা লেখা হয় না। এটির মধ্যে যদি একটি বিশেষ দর্শন ছাপিয়ে একক মানুষের একান্ত অভিজ্ঞতাটুকু না ধরা পড়ে, কবিতার অধরা রহস্য আর কবিতা পড়ার আনন্দটুকু না থাকে, তাহলে সেটি কবিতা হয় না। জেন কবিতায় জেন কবির আত্ম-উপলদ্ধির সাথে সাথে চারদিকের ক্রমশ প্রকাশ্যমান প্রকৃতি, তার প্রশান্তি, রিল্যাক্সড ওয়ে অব লাইফ, তার কিছু একটায় হয়ে যাওয়া যেভাবে আমাদেরকে স্পর্শ করে, তা সত্যিই অনন্য ও মিরাকুলাস।

পানি আনা কাঠ কাটা

পেঙ উন (৭৪০-৮০৮)

অলৌকিক শক্তি আর বিস্ময়কর কাজ
পানি আনা কাঠ কাটা
প্রতিদিন কিছুই বিশেষ নেই
শুধু নিজের কাছে মাথা ঝুঁকা
কিছুই পছন্দ করার নেই
বাদ দেয়ারও কিছু নেই
আসা নাই যাওয়াও নেই
কেউ নেই বেগুনি পরে
ধুলিশূন্য নীল পাহাড়—
আমি চর্চা করি গুপ্ত আর সূক্ষ্ম শক্তির
পানি আনা কাঠ কাটা

স্থিরতা

পেঙ উন (৭৪০-৮০৮)

দশটি নিদের্শনামা মিশে যাচ্ছে
প্রতিটি শিখছে কিছুই না করার
এটিই হচ্ছে বুদ্ধ-দরোজা
মন খালি, সব কিছুই শেষ।

নাম ছাড়া গঠন ছাড়া

পেঙ উন (৭৪০-৮০৮)

বুদ্ধপথে জ্ঞানী হয়ে
আমার তুচ্ছ কাজ বাদ না দিয়ে
আমি যাই না বুদ্ধপথে।
সমস্ত কিছু, যা শতের্র অধীন
সব নাম আর গঠন
সব হচ্ছে আকাশের ফুল।
নামহীন আর গঠনহীন
আমি জন্ম আর মৃত্যুকে ছাড়িয়ে যাই।

পৃথিবীর বাইরে

টেনডাই তকুশো (৮৯১-৯৭২)

টাঙ সান ফেঙ পাহাড়ের উচুঁতে
মানুষের পৃথিবী আর নেই
কিছুই মনের বাইরে নয়
আর চোখগুলি সবুজ পাহাড়ে ভরা।

বোধিধর্ম

লু ইউ (১১৩১-১১৬২)

সবাই বিদ্রোহ করেছে
আমি একটুও নড়ে উঠিনি
সবাই আশার কুহকে মজেছে
আমি একটুও নড়ে উঠিনি
জ্ঞানীদের কথা শুনে
আমি একটুও নড়ে উঠিনি
আমি শুধু আমার নিজের পথে যাই

মিশে যাই এক হয়ে

টসান রয়োকাই (৮০৭-৮৬৯)

অনেকদিন এটিকে খুঁজছি অন্যদের মধ্যে
আমি এর থেকে অনেক অনেক দূরে
এখন আমি যাই আমারই ভেতর দিয়ে
এটিকে আমি পাই সবখানে।
এটি আমি ছাড়া আর কিছু নয়
আমি কিন্তু আবার এটি নই
এভাবে যদি বুঝি
তাহলে আমি কেবল আমি হই।

একটি মৃত্যু-কবিতা

ডাইয়ো ককোশি (১২৩৫-১৩০৮)

আমি বাতাসকে তিরস্কার করি আর বৃষ্টিকে গালি দিই
আমি বুদ্ধ আর গুরুদেরকে জানি না
আমার কাজটি ঘটে যায় চোখের পলকে
এমন কি বিদ্যুতের ঝলকানির চেয়ে দ্রুত।

প্যান কাউয়ের গান

প্যান কাউ (?)

বুড় প্যান কাউ সময় সম্পর্কে কিছুই জানে না
জানে না জায়গা সম্পর্কেও কিছু
তার জীবন স্বয়ংপ্রভ আর স্বয়ংসম্পূর্ণ
তার নিজের সত্তার বাইরে আর কিছুই সে চায় না।
তার মনের জাগরণ হলো পৃথিবীর শুরু
মন যখন ভাবতে শুরু করে তখন পৃথিবীও চলে।

খালি হাতে

ফু তাশি (৪৯৭-?)

খালি হাতে একটি নিড়ানি ধরে
পায়ে হেঁটে মহিষ চড়িয়ে
সাঁকো পার হওয়ার সময়
আমি দেখি সাঁকো চলছে
                        পানি নয়।

তিন রহস্য

ফাননিও জেনশো (৯৪৭-১০২৪)

আসলে বিষয়টা খুব কঠিন ভাগ করা আর চেনা
তিন রহস্য দরোজা তিন অনিবার্য পথ।
যদি তুমি বুঝতে পারো তাহলে সব ভুলে যাও
এটি হল সহজ পথ তাও-কে বোঝা
পৃথিবীর সব প্রপঞ্চ একটি বাক্যে ধরা:
ডাবল-নাইন-এর উৎসবে
ক্রিস্যান্থমাম ফুটে আছে, তাজা।