আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর কবিতা ‘যে তুমি বাঙালি’

প্রকাশিত : মে ০৭, ২০২২

যে জন বঙ্গতে জন্মে, সে বাঙালি।
যার পিতা-মাতা এক ভাষায় জবান খোলে
যার শব্দ বাক্য, কাদাজল মেখে মাছ ও ভাতের সাথে
একসাথে মিলেমিশে এক হয়, সে বাঙালি।
যে শাহি বাঙ্গালা করে, যে একই রূপে গাঁথে দেশ
সে প্রকৃতি পরিয়েছে তাকে, বাঙালির বেশ।
যে আফ্রিকি হুন, শক, ভোট-চীনা, অস্ট্রালয়েড
এসেছে পলির টানে, ঘর বাঁধে সবুজ ব-দ্বীপে
যে আরব তুর্কি, আফগানি, ইরানি ফেলেছে
তার ক্লান্ত পা বদনখানি নিরিবিলি,
যে আসে তীব্র কৌমের সিপাহি, হাতি ঘোড়া
রক্ত-তরবারি, সে বাঙালি।

যে জমিন চাষ করে, গরু পালে
রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে স্বর্ণ ফসল ফলায়
সবজি সবুজে সন্তানের মুখ দেখে
শীতের সকালে ক্ষেতে খামারে আইল
ধরে হাঁটে, সে বাঙালি।
বলো তার শরীরের রঙ বাদামি, বলো সে
লম্বা খাটো মাঝারি, বাহারি তার কালো চোখ
বিভা ছড়ায় দিগন্ত থেকে দিগন্তে সুদূরপ্রসারী।
বলো সে প্রবল বাহুবীর, গাজি গাজি ডাক মারে
মাঠে ময়দানে, তার রক্তে খেলা করে শের-ই-আলি!
যে ইংরেজ ঠেকায়, যে বাঁশের কেল্লা বানায়
ফরায়জি আন্দোলন করে, যে রক্ত ঝরায়
সিপাহি বিপ্লবে, সে বাঙালি।

বলো তার তলোয়ারে খিলাফার জঙ
তার ক্বলবে দৌড়ায় শাহাদার রঙ
সে আসে জঙ্গল জংলা পার হয়ে
নদীর উত্তাল বুক দিয়ে সে নৌকা চালায়
তার উদ্দাম বাহুতে হামজার শক্তি
সে ঝড় ঝঞ্জায় ‘আল্লাহ আকবর’ ‘আল্লাহ আকবার’
ধ্বনি দেয়, সে পাড়ি দেয় মড়ক ও মহামারি।
বলো সে ভয়ডরহীন, জংগে আপোষহীন
চিৎকার করে ওঠে জুলুমের বিরুদ্ধে
তার সিনায় কারবালার স্পন্দন
সে বন্দুক ধরে একাত্তর সনে
সে ঘাতক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ে
যা অন্যায় অবিচার, তার সামনে দাঁড়ায় মুষ্টিবদ্ধ।

যে আজান দেয় মসজিদে, যে কাতারে দাঁড়ায় নামাজে
যার সিনা থেকে দোয়া দুরুদ কাঁপে অন্তর্লীন।
যে কাবাতে তাওয়াফ করে, আরাফাতে খোলা আকাশে
মাগফিরাতের হাত তোলে কেঁদে ওঠে, সে বাঙালি।
যে গঞ্জে যায়, যে মাছ বেচে, ধান বেচে, যে রাত্রি হলে
হুকো টান দেয়। যে ফকফকা উঠোনে বসে খোশ গল্পে মাতে।
যার বাটি বসত নাই, যার জমি নিয়ে গেছে অন্ধকার-রাজনীতি।
যাকে ঋণে ডুবিয়েছে দেশি-বিদেশি এনজিও কোম্পানি
যে সেই দঃখে নিজের জীবন নেয়, সে বাঙালি।
আমি তার সন্তান থাকি দূরে, আজনবি দেশে
তবুও পরান পড়ে থেকে ভাটি বাংলা, বাংলাদেশে।