আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর কবিতা ‘গাজার ছায়া, উপচ্ছায়া’

প্রকাশিত : অক্টোবর ২০, ২০২৪

১.
আমার মেয়েটা বলে, বাবা বিছানাটা করে দাও।
রঙ তুলি দিয়ে বিছানা সাজাই। ঘুমের ধূসর রঙ,
সেইটাও দেখি, মেঘের বালিশে।
কবে ঝিঙা ফুল ফুটছিল গ্রামে সেইটাও দেখি।
কোকিল, কালেমা, মৌনধ্বনি, এসব কোরাস করে
স্বপ্নের জানালা খুলে যায়।
ধ্বংসস্তূপ থেকে যেসব হাত-পা
হাড় পাওয়া যায়, তারাও কি চাইনি ঘুমাতে?
যখন রেডিও থেকে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত হচ্ছিল
যখন কেটলি থেকে ভেসে আসছিল কালো কফির খুশবু?

২.
আক্রান্ত গাজাকে নিয়ে কবিতা লিখতে গিয়ে
শুধু ধ্বংসস্তূপের কথা মনে আসে— এমন তো নয়।
শোক-মাতমও নয়। মাঝরাতে ঘুমাতে ঘুমাতে বিছানার
পাশে একটি নিবিড় জলপাই গাছের অতীত দেখি।
দেখি, শেকড়ের তলদেশে নাকাবার প্রথম কাহিনি
আর পায়ে হেঁটে দূর ভ্রমণের কলরব।
ভোর হলে, কৃষকেরা আপেল কুড়ায় দূরে
একলা, শীতের জনপদে। সেই দৃশ্য ভেবে,
বাহু পাশে যার চুল ছুঁয়ে শান্তি চাইলাম,
সেখানেও নিশ্চুপ জিহাদ লেখে এক শিশু।

৩.
এইসব গান আমি কিভাবে শুনবো?
খবর পেলাম ওরা একসাথে খাবার টেবিলে বসছিল,
দাদা-দাদিসহ উত্তর-পুরুষগণ।
হঠাৎ একটি বৃত্তকার খাবার টেবিলে
মিলে গেল মাকলৌবার সৌরভ।
তার সাথে পিতামহের পাজামা থেকে
ভেসে আসা আপেল বনের ঘ্রাণ।
এই দেশে আমি কান পেতে আছি রবীন্দ্রগীতিতে।
খবর এলো ছায়াগুলো গুলিতে ঝাঁঝরা,
রুটির থালায় কয়েকটা কাটা আঙুলের মালবেরি।

৪.
শহরের সবজি বাজারে টেরাকোটা কাল।
টাটকা সবজি আর ফলের শরীরে
কালো এশকালো পোড়া দাগ।
এক সময় ট্রেনের হুইসেল বিঁধে যায় হালট ও হাটুরের বুকে।
ভাইয়ের সাথে কত উপস্তিত থেকেছি সন্ধ্যায়, কাদাক্লান্ত।
দেখেছি নিহত মীন, দেখেছি সোনার মাছি জলের কিনারে।
শত বারাকাহ’র মৌসুম খুলে— এইসব রক্তকাটা,
বোমা পড়া রাত ভেসে ওঠে মরা মাছের চোখে।
যে কিশোরী কোরান পড়ছে সুর করে ভাঙা বাড়িতে,
মাছের চোখেও তার কোরানের ক্যালিগ্রাফি।

৫.
ওরা কী সব লিখছে— নারী, সঙ্গম, পিকনিকের রাত।
কবিতার জন্য আরও কিছু বুদবুদ। চাঁদে পাওয়া রঙধনু,
গাভী ও গৃহিনী ।
এসব খামখেয়ালিপনা, মনোরম ভাষা
আমাকে কি পাগল করে দেবে?
নাকি নিজেই নিজের শরীর থেকে
খুলে নেব পাথরের চোখগুলো।
যেভাবে ব্রিজের ক্যাম্পগুলি খালি হচ্ছে,
যেভাবে পুরনো বাড়ি থেকে বাড়ি হারাচ্ছে।
আমি তো ট্রেনে উঠতে উঠতে
ধুলিবালি মাখা, এক মায়ের কবর দেখছি,
যার চারদিকে উদবাস্তু গোলাপের ছড়াছড়ি।