আবু তাহের সরফরাজের ৩৫টি ইসলামি সঙ্গীত
প্রকাশিত : এপ্রিল ০২, ২০২২
আল্লাহর ধ্যান
যদি, সবাই আমায় যায় ছেড়ে যায় তাতেও আমি রাজি
তবু, আল্লারই ধ্যান ভাঙতে আমি পারব না গো আজি।
স্বার্থ ছাড়া এই জগতে মানুষ যে নেই কেউ
মুখোশ পরা মুখগুলোকেই ভাবছি সুখের ঢেউ।
ঢেউয়ের ওপর ঢেউ ছড়িয়ে
মুখগুলো সব যায় হারিয়ে
এই মানুষের জন্যে মানুষ জীবন ধরে বাজি।।
আল্লাহ আমার অভিভাবক দুঃখদিনের সাথি
সবাই ছেড়ে গেলেও তিনি থাকেন দিবস-রাতি।
ভুল যদি হয় জীবনপথে
ক্ষমা করেন সাথে সাথে
প্রেমের প্রতিদান যে দেবেন বিচার দিনের কাজি।।
খাজনা
এই পৃথিবী আল্লাহ তালার আর যে কারো নয়
খাজনা দিলে তাকেই দেব বাঁচার বিনিময়।
নিশ্বাসে অক্সিজেন টানি বাতাস থেকে পেয়ে
জীবন বাঁচে এই প্রকৃতির ফল ও ফসল খেয়ে।
এসব যিনি করেন দান
কী দেব তার প্রতিদান
আল কোরআনের বিধান মেনে চললে তা শোধ হয়।।
জায়গাজমির সরকারি খাজনা দিতে হয় জমা
তা না দিলে আদালতে পায় না তো কেউ ক্ষমা।
এই যদি হয় দুনিয়া
তবে রাখো শুনিয়া
বিশ্ব অধিপতির আইন এর চেয়ে নির্দয়।।
আমার বুকের এই জমিনে
আমার বুকের এই জমিনে তুলব কাবাঘর
হৃদমাঝারে উঠবে ধ্বনি আল্লাহু আকবর।
আল্লাহরই নাম শুনে মন হবে উদ্বেলিত
অশ্রুচোখে বইবে নদী আনন্দে আপ্লুত।
নিরানব্বই নামের গুণে
পাপ ও শোকের এই ভুবনে
উচ্ছ্বসিত আবেগে মন কাঁপবে থরো থর।।
হৃদয় ধুয়ে যাবে ময়লা পবিত্র ওই নামে
বেহেস্তেরই সৌরভে ফুল ফুটবে হৃদয়ধামে।
এই জীবনের যা আছে পাপ
তার সকলই হবে যে মাফ
শান্ত হয়ে যাবে আমার বুক কাঁপানো ঝড়।।
প্রেমিক তোমার প্রেমের দরজা
প্রেমিক তোমার প্রেমের দরজা খুলে প্রেম দ্যাখাও
তোমার প্রেমে লীন হয়ে আজ ছাড়ব জীবন নাও।
ঝড়-তুফানে হারাই যদি সঠিক পথের দিশা
তোমার নূরের ঝলক যেন কাটায় অমানিশা।
পাপ তরণীর মাঝি মাল্লা
দিচ্ছে জীবনস্রোতে পাল্লা
তাদের মাঝে আমার নাওটি তোমার কোরে নাও।।
রঙ-বেরঙের পাল তুলে নাও চলবে সাগর বুকে
পাহাড় সমান ঢেউ এলেও তা চলবে যে সম্মুখে।
বৈঠা হাতে বসব আমি
কলমা মুখে জগৎস্বামী
এই জীবনের অথই সাগর পার করিয়ে দাও।।
তোমার নামে
তোমার নামে সূর্য ওঠে পূব আকাশে মুখ তুলে
তোমার নামে সূর্য ডোবে অন্ধকারের ভাঁজ খুলে।
তোমার নামের তসবিহ জপে চাঁদ-সেতারা আসমানে
তোমার বহিঃপ্রকাশ দেখি এই জগতের সবখানে।
তুমি শুরু তুমিই যে শেষ
আর সকলই স্বপ্ন আবেশ
তোমার নূরের কিস্তি ভাসে সাত আকাশের ওই কূলে।।
লক্ষকোটি গ্যালাক্সি আর নীহারিকার ওই পথে
ফেরেস্তারা যায় ও আসে কী জানি কার সাক্ষাতে!
চন্দ্র সূর্য গ্রহতারা
কক্ষপথে ঘুরছে তারা
নিয়ম মেনে চলছে সবাই, মানুষ শুধু যায় ভুলে।।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদ রাসুল উল্লা
কলমা শুধু উচ্চারণে— এই কি মুসলমান আল্লা।
তাওহিদের মর্ম না বুঝে বিভক্ত আজ জাতি
করছে ইসলামেরই নামে ধর্মীয় বেসাতি।
আইয়ামে জাহেলিয়াত
চলছে এখন হে মুহাম্মদ
কেউ হতে চায় না যে খোদার প্রেমে ফানা ফিল্লা।।
এলেন নবি আরব দেশে বর্বরেরই মাঝে
তারও চেয়ে বর্বরতা এখনকার সমাজে।
কলমা যেন মুখের কথা
বিশ্বাসে নেই বাস্তবতা
নামের মুসলমান জগতে মুখেই যে দ্যায় পাল্লা।।
আল্লাহ আমায় পালন করেন
আল্লাহ আমায় পালন করেন খিদেয় যোগান অন্ন
রাসুল দেখান পথের দিশা আখিরাতের জন্য।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি আল হামদু লিল্লাহ
সব কিছুরই চাইতে মহান আরশের আল্লাহ।
প্রশংসিত তিনি অতি
তিনিই সকল কিছুর গতি
আসমানে ও জমিনে তাই ধন্য তিনি ধন্য।।
রাসুল নিয়ে এলেন আলো অন্ধকার ভুবনে
মূর্খতা যে পাপের কারণ জানালেন সেই ক্ষণে।
মানুষকে তাই শেখাতে জ্ঞান
রেখে গেলেন হাদিস-কোরান
এসব জ্ঞানের বাইরে গেলেই জীবন হবে শূন্য।।
পথ না চিনে
পথ না চিনে পথ হেঁটেছি আমি গোনাহগার
আল্লাহ আমায় দাও গো ক্ষমা নিজ গুণে তোমার।
এই পৃথিবীর গোলকধাঁধায় ঘুরছে যে মানুষ
ভাবছে না কেউ জীবনটা এক মুহূর্তের ফানুস।
এই মানুষের ভিড়ে আমি
আরেক মানুষ ওগো স্বামী
তোমার অনুভবের দরজা দাও খুলে আমার।
এক আকাশের নিচে মানুষ কেউ কারো নয় চেনা
রঙবাহারি বাজার খুলে করছে বেচাকেনা
হঠাৎ করেই রোজ কেয়ামত
আসবে যখন সব নেয়ামত
ধ্বংস হয়ে থাকবে শুধু আরশ খোদা তালার।।
খোদার নূর
আসবে কবে সেদিন আমার দেখবো চোখে খোদার নূর
আল্লাহ তোমার প্রেমপিয়াসী এই প্রেমিকের হৃদয়পুর।
সুন্দরে লীন চাই যে হতে অসুন্দরের জগতে
যদিও তা মিলবে না হায় এ সংসারে নগদে!
তৃষ্ণাবুকে খুঁজি সুন্দর
খুলে বুকের গোপন অন্দর
অনুভবে পাই যে তাকে, দেখি না তার রূপের নূর।।
সব মানুষই যে যার মতো বেঁচে আছে সংসারে
আমিই কেবল শূন্যবুকে পূর্ণ হতে চাই তারে।
সকল কিছুর যিনি সুন্দর
তার চরণে দেব অন্তর
আল্লাহ আমায় দাও গো দিদার, চাই না আমি বেহেস্ত হুর।।
খোদার প্রেমে
খোদার প্রেমে হও যদি মন একটুও কাতর
চোখের ধারায় গলবে বুকের জমানো পাথর।
কে আছে আর খোদার মতো এমন স্নেহময়
সকল কিছু দিয়েও যে জন চায় না বিনিময়।
একটু ভেবে দ্যাখো রে মন
তার দয়াতেই বাঁচে জীবন
সেই করুণাময় যে করেন সবাইকে আদর।।
এত স্নেহর মধ্যে থেকেও আমরা উদাসীন
দিনে দিনে বাড়ছে দয়াময়ের প্রতি ঋণ।
দানের প্রতিদান যদি দাও
দেবেন তিনি যা তুমি চাও
আখিরাতে মাখবে তুমি বেহেস্তি আতর।।
এই দুনিয়া
এই দুনিয়া চাই না আমি চাই যে আখেরাত
আল্লাহ তুমি কবুল করো আমার মোনাজাত।
জীবন এবং জীবিকার এই অনিশ্চিত সংসারে
আমরা সবাই বন্দি যে অদৃশ্য কারাগারে।
তোমার হাতেই ভাগ্য খোদা
তুমিই মেটাও জীবনক্ষুধা
গরিব কোরে রেখো তবু ক্ষুধায় দিও ভাত।।
কোরান এবং হাদিস মেনে এই জীবনের পথ
চলতে যেন পারি খোদা দাও তুমি হিকমত।
অন্তরেরই কুমন্ত্রণা
বিষাক্ত যে সাপের ফণা
ছোবল দিলেই দ্বীনদুনিয়া আখেরাত বরবাদ।।
আমার সকল দুঃখে
আমার সকল দুঃখে খোদা তুমিই সান্ত্বনা
অক্ষরে তাই তোমার সিফাত করি গ্রন্থনা।
দুঃখরাতের অন্ধকারে আল্লাহ ধ্রুবজ্যোতি
আনন্দে তাই হৃদয় নাচে গুণি না লাভক্ষতি।
তার করুণায় যা কিছু পাই
তা ছাড়া আর কিছু না চাই
নতমুখে করি যে তার গুণের বর্ণনা।।
তকদিরে যা লেখা আছে ঘটবে তা নিশ্চয়
বিপদ এলে তাই করি না আমি কোনো ভয়।
বুকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস
ছাড়ব যেদিন জীবন-নিশ্বাস
তোমার দিদার পেলেই যে শেষ হবে যন্ত্রণা।।
পাপের কলস
পূর্ণ আমার পাপের কলস করবে কে বহন?
বেখেয়ালে আল্লাহ তোমায় করিনি স্মরণ।
আজান শুনেও জায়নামাজে দাঁড়াই না যে আমি
ছয়টি রিপুর কুমন্ত্রণার হই যে অনুগামী।
নিজ খেয়ালে ইচ্ছেমতো
সময় কাটে আমার যত
এই উদাসীর মনের লাগাম করো নিয়ন্ত্রণ।।
পাহাড় চূড়ায় মেঘের দেশে গর্জে ওঠে বাজ
জাহান্নামের আগুন থেকে পায় যেন সে ঝাঁজ।
এই প্রকৃতির জীব ও জড়
তোমার ভয়ে জরোসরো
মূর্খ আমি তাই বুঝি না জগতের ধরন।।
হেদায়েতের নূর
হেদায়েতের নূর জ্বেলে দাও আমার বুকে প্রভু
তোমার স্মরণ থেকে যেন গাফিল না হই কভু।
তোমার দেয়া নিয়ম মেনে চলছে মহাবিশ্ব
পালন করে চলছে সবাই তোমারই উদ্দেশ্য।
মানুষ শুধু বেখেয়ালে
আটকে আছে ভ্রান্তিজালে
সে জাল ছিঁড়ে জ্ঞানের দরজা দাও খুলে হে প্রভু।
জীবনপথে তোমায় ভুলে যাই যদি কখনো
স্নেহের পরশ দিয়ে তোমার দ্বীনের পথে টেনো।
সৃষ্টি আমি তাই অসহায়
স্রষ্টা তুমি সৃষ্টির সহায়
পাপ সাগরে ডুবে গেলেও ক্ষমা কোরো তবু।।
হেদায়েতের পথ
হেদায়েতের পথ দেখাতে আল্লাহ মেহেরবান
বেহেস্ত হতে দিলেন ধরায় পবিত্র কোরআন।
বিশ্বজগৎ সৃষ্টি যাহার তিনিই প্রজ্ঞাবান
সৃষ্ট সকল কিছুর স্বভাব তারই গোপন জ্ঞান।
যার যে স্বভাব সেই নিয়মে
চলছে সবাই জগৎধামে
মানুষই একমাত্র পারে ভাঙতে সেই বিধান।।
ইচ্ছাশক্তি দিলেন খোদা মানুষের ভেতর
দিলেন আরও ভালো-মন্দ বোঝারও অন্তর।
প্রতিনিধি কোরে খোদা পাঠালেন মানুষ
জ্ঞান অভাবে আজকে তারাই মূর্খ ও বেহুঁশ।
এই প্রকৃতির নিয়মরীতি
সৃষ্ট জগতের সম্প্রীতি
মানুষকে জানাতেই খোদা দিলেন যে কোরআন।।
হেরার জ্যোতি
হেরা গুহায় ধ্যানের নবি ওহি পেলেন, পড়ো
সেই নবিজির উম্মত আজ মূর্খ ঘোরতর।
জ্ঞানের আলো নিভে গেছে, মূর্খতা চারদিকে
মানবীয় গুণগুলো আজ হয়ে গেছে ফিকে।
মানুষ দেখে পালায় মানুষ
জ্ঞান অভাবে নেই কারো হুঁশ
উদারতার চেয়ে এখন হানাহানিই বড়।।
ইসলামি দিক-নির্দেশনা বিকৃত আজ ভবে
জ্ঞানের মশাল ঊর্ধ্বে তুলে হাঁটবে কে আর তবে?
কোরান-হাদিস কেউ পড়ে না
জ্ঞানের খোঁজে কেউ নড়ে না
শ্রেষ্ঠ হয়েও মানুষ এখন মানুষ তো নয়, জড়।।
সরল পথের পথিক
সরল পথের পথিক ওগো মোহাম্মদ রাসুল
উল্টোপথে হেঁটে আমি করেছি যে ভুল।
ইচ্ছে যেন প্রভু আমার, আমি কৃতদাস
ভুলেই গেছি মানবজাতির সৃষ্টি-ইতিহাস।
জগৎপিতার প্রতিনিধি
হয়েও আমি ভাঙছি রীতি
আর এদিকে নিয়ম মেনে চলছে সৃষ্টিকূল।।
এই পৃথিবীর নিয়ম ভেঙে চলতে গিয়ে দেখি,
দুঃখ লেখা জীবনপাতায়, চরিত্রটাও মেকি।
সরল পথের বিধান পড়ে
থাকব এবার নিজের ঘোরে
এতদিনের বৃথা সময় করব রে উশুল।।
বিশ্বাসীদের বন্ধু
বিশ্বাসীদের বন্ধু ওগো নূরনবি হযরত
পথ হারানো পথিক আমি দেখাও সরল পথ।
নানা মতের পথের বাঁকে পথ হারিয়ে বসে
ক্লান্ত আমি দেখতেছিলাম, সব পথই যায় ধসে।
সকল মতই সত্য যে নয়
সত্য খুবই গোপনে রয়
সেই সত্য চেনাও ওগো নবি মোহাম্মদ।।
বিশ্বাসীদের সরল পথের খোঁজ দিলো কোরআন
বুঝতে পারি, সকল কিছুর মূলেই হলো জ্ঞান।
জ্ঞানের আলোয় পথ দ্যাখে চোখ
কিন্তু বলো কোথায় সে লোক
দ্বীনের নবি মোহাম্মদের প্রিয় হে উম্মত।।
তৃষ্ণাকাতর পথিক
তৃষ্ণাকাতর পথিক আমি মিলবে কি অমৃত?
নূরের নবি দেখব বলে বুকখানা তৃষিত।
মরুর দেশে জন্ম নিলে নবিজির সময়
দেখতে পেতাম মুখখানি তার কী যে জ্যোতির্ময়!
পবিত্র সেই মুখের ভাষা
শুনে পূরণ করতাম আশা
তার চরণের খেদমতে ভাই হতাম ব্যবহৃত।।
আবু বকর ওমর আলি— তাঁর যে কত সাহাবি
আমিও সেই দলের হতাম, আর কে আমায় ফেরাবি!
জিহাদের ওই ময়দানে ভাই
যেতাম ছুটে আমিও হায়
শহিদ হয়ে যেতাম তবু হতাম না গো ভীত।।
বেহেস্তি ফুল
এই ধরণীর মাটির বুকে বেহেস্তি এক ফুল
উঠল ফুটে গৌরবে তার ধন্য সৃষ্টিকূল।
মানুষ হয়েও ফুলের মতো গন্ধ নিয়ে বুকে
দেন ছড়িয়ে সবার মাঝে দুঃখে এবং সুখে।
বেহেস্তের ওই ফুলবাগানে
ফুটলো যে ফুল তারই ঘ্রাণে
এই পৃথিবীর আকাশ বাতাস হলো যে মশগুল।।
অবিশ্বাসীর দেশে তিনি হলেন আল আমিন
গরিবদুখি উৎপীড়িতের বুকে সমাসীন।
ঊষর মরু উঠল হেসে
পাপের ময়লা গেল ভেসে
মরুর রাখাল হয়ে গেলেন আল্লাহর রাসুল।।
বখতিয়ারের ঘোড়া
বখতিয়ারের ঘোড়ার ক্ষুরে উড়ছে ধুলো জমিনে
জ্ঞানের দরজা বন্ধ বলেই আমরা চোখে দেখি নে।
বুকের মাঝে কোরান নিয়ে আমরা ছিলাম জ্ঞানী
দিগ্বিদিকে ছড়িয়েছি তাওহিদেরই বাণী।
নিঃস্ব হয়ে আমরা এখন
ভাবছি এসব খোদার লিখন
আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া ইসলামি জ্ঞান খুঁজিনে।।
ইসলামই একমাত্র বিধান সব মানুষের জন্য
এই চেতনা প্রচার করেই আমরা ছিলাম ধন্য।
কোথায় সে আজ বীরেশ্বর
কাঁপবে মাটি থরো থর
আয় রে ছুটে বখতিয়ারের ঘোড়ার লাগাম তুলে নে।।
এই ধরণী
এই ধরণীর বুকে যারা এনেছিল জ্ঞান
আজকে তারাই মূর্খ জাতি, নামেই মুসলমান।
যাদের জ্ঞানে এবং কর্মে কাঁপতো সারা বিশ্ব
অজ্ঞানতার অন্ধকারে আজ যে তারা নিঃস্ব!
মূর্খতা আজ ঘরে ঘরে
না বুঝে সব কোরান পড়ে
পুণ্যলাভের উপায় শুধুই সেই জীবনবিধান।।
মুহাম্মদের দেখানো পথ ভুলেই গেছে তারা
এই সুযোগে অন্যজাতি দিচ্ছে মাথাচাড়া।
মিথ্যে দিয়ে সত্য ঢেকে
সভ্যতা আজ বলছে হেঁকে,
ধর্মনিরপেক্ষতাতেই মানুষের কল্যাণ।।
জ্ঞান গরিমায়
জ্ঞান গরিমায় একটা সময় যারা ছিল বীর
অজ্ঞানতায় আজকে তাদের অবনত শির।
খেজুর পাতার তখতে বোসে করতো শাসন বিশ্ব
এই জগতের কেউ কখনো দ্যাখেনি যে দৃশ্য।
ব্যক্তিগত লাভ ও ক্ষতি
তাদের কাছে তুচ্ছ অতি
শাসন দণ্ড পেয়েও যারা নিঃস্ব মুসাফির।
ওমর আলি আবু বকর নেই তারা আজ কেউ
কাঁদছে মানুষ, জগৎজুড়ে রক্তনদীর ঢেউ।
মর্দে মুমিন আয় রে ছুটে
গাফলতি নিঁদ যাক রে টুটে
বিশ্ব হয়ে উঠুক মুসলমানের এক শিবির।।
সত্য-ন্যায়ের প্রতীক
সত্য-ন্যায়ের প্রতীক ওগো নবি মুহাম্মদ
পথ হারিয়ে বেপথে আজ তোমারই উম্মত।
যাদের পায়ের নিচে ঊষর মরু পেল প্রাণ
ধূলিমাটির পাপের ধরা পেল পরিত্রাণ।
আজকে তারাই ভীতবিহ্বল
নেই আজাদি নেই বুকে বল
নতুন দিনের সূর্যোদয়ের নেই কারো হিম্মত।।
অন্ধকারের পরদা তুলে আর আসে না ভোর
ঘুমন্ত তাই মর্দে মুমিন রাত্রি ঘনঘোর।
কণ্ঠ তুলে কেউ বলে না
আল্লাহ ছাড়া ভয় করি না
জীবন দিয়েও রাখবো খোদা তোমারই ইজ্জত।।
তাওহিদে বিশ্বাসী
তাওহিদে বিশ্বাসী এ মন যেন একটা দুর্গ
জীবনযুদ্ধে পর্যুদস্ত হয় না এক মুহূর্ত।
কলমা আমার ঢাল-তলোয়ার বিশ্বাসের দরজায়
নানা মতবাদের ভিড়ে নিরাপদ আশ্রয়।
এই জীবনের দুঃখব্যথা
ভুলে পেলাম নিশ্চয়তা
তকদিরে যা খোদার লিখন থাকুক না বিমূর্ত।।
মুহাম্মদের জীবনকর্ম আমার বিদ্যালয়
বিশ্বজগৎ বইয়ের পাতা বর্ণপরিচয়।
কী চমৎকার সৃষ্টিবুনন
দেখছি যতই খুলছে মনন
অদ্বিতীয় আল্লাহতালা সবকিছুতেই মূর্ত।।
আল্লাহ হলেন বিজ্ঞানময়
আল্লাহ হলেন বিজ্ঞানময় মহাপ্রজ্ঞাবান
তার কাছে পৌঁছানোর সিঁড়ি একমাত্র জ্ঞান।
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত নয় রে কোনো সিঁড়ি
জীবন নিয়ন্ত্রণে এসব শৃঙ্খলারই বেড়ি।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে
ভাবছ সওয়াব পড়বে ঝরে
আর এদিকে লোক ঠকিয়ে তুলছ যে দালান।।
আনষ্ঠানিকতাই এখন মুসলমানের ধর্ম
খোদার পথের সিঁড়ি যে জ্ঞান, বোঝে না এই মর্ম।
শুদ্ধজীবন চর্চা করে
অশুদ্ধ সে জীবনভরে
বিপর্যস্ত জাতি যে তাই আজকে মুসলমান।।
হে ওয়াজি
হে ওয়াজি, ওয়াজ থামাও আল্লাহকে ভয় করো
আজেবাজে কথা রেখে কোরান-হাদিস পড়ো।
মাইকে তুমি করছ চিৎকার পারছি না ঘুমোতে
থেকে থেকে দিচ্ছ কোঁতন তাকবিরের ধ্বনিতে।
বলছ তুমি যেসব কথা
ইসলামি জ্ঞান নেই যে সেথা
রাত্রি জেগে মানুষ তবু মাহফিলে হয় জড়ো।।
মুহাম্মদের বাণী একবার করো তুমি স্মরণ
উচ্চস্বরে কোরান পড়তেও করেছিলেন বারণ।
বিরক্ত হয় মানুষ যাতে
সে কাজ তো নেই ইসলামেতে
মুসলমান আজ মূর্খ বলেই ঈমাম তুমি বড়ো।।
ইসলামেরই নাম ভাঙিয়ে অনৈসলামিক কাজে
লিপ্ত তুমি, ভাবছ না এ কাজটা কত বাজে।
শান্তির ধর্ম ইসলাম ওরে
অশান্তি ক্যান আনিস ধরে
তওবা পড়ে এবার তুমি দ্বীনের পথটা ধরো।।
আঁধার রাতের মিনার
আঁধার রাতের মিনার চূড়ায় দিচ্ছে কে আজান
সেই সুরে ঘুম ভেঙে আমার কেঁদে ওঠে প্রাণ।
তারার ফুলের চাদর গায়ে ফেরেস্তাদের দল
ঘুরছে যেন আকাশপথে ডানায় মেঘের ঢল।
ডানার দোলায় হিম যে ঝরে
শীতকুয়াশায় আমার ঘরে
সেই শিশিরে ওজু কোরে কোরবো খোদার ধ্যান।
কী যেন এক শূন্যতাবোধ ছড়ায় আমার বুকে
অপূর্ণ এই আমার আমি জগতের সম্মুখে।
পূর্ণ যে জন তারই কাছে
যেতে আমার প্রাণটা নাচে
পূর্ণ হতে জায়নামাজে গাই যে তারই গান।।
নামাজ
মসজিদে ওই দিচ্ছে আজান পড়বি কে নামাজ
আয় ছুটে আয় নামাজ পড়ি বিছিয়ে জায়নামাজ।
পাঁচ ওয়াক্ত দাঁড়াচ্ছি রোজ সম্মুখে খোদার
নামাজ শেষেই নাফরমানি করছি গো আবার।
ওজনে কম দিচ্ছি মেপে
চোখের লজ্জা করছি না যে
আবার, নামাজ পড়ে ভাবছি পালন করছি ধর্মকাজ।।
নামাজ মানে খোদার কাছে আত্মসমর্পন
নিজের ভেতর শয়তানি ভাব সবই বিসর্জন
নামাজ তো নয় শুধুই রীতি
নামাজে হয় খোদার ভীতি
তোমার, কথা এবং আচরণের শুদ্ধতাই নামাজ।।
মৃত্যু
মৃত্যু এসে হঠাৎ করেই ধরবে তোমার ঘাড়
মৃত্যু থেকে বাঁচতে পারে সাধ্য আছে কার!
আসছে মানুষ যাচ্ছে মানুষ এই তো জীবনধারা
দ্যাখাও তো একজনকে এমন যিনি মৃত্যুছাড়া।
ক্ষণিকের এই আবাসভূমি
চিরদিনের ভাবছ তুমি
অন্তরে যে পরদা আছে সরাও তা এবার।।
এই যে জীবন তুচ্ছ তো নয়, মূল্য বুঝে নাও
নিজের ভেতর ডুব দিয়ে মন একটিবার তাকাও।
আছেন যিনি অনুভবে
তার কাছে ফিরতে যে হবে
মাঝখানে এই জীবনটুকু পরীক্ষা তোমার।।
পুলসিরাতের সাঁকো
পুলসিরাতের সাঁকো ওই যে দ্যখা যায় রে ভাই
পার হতে কি আছে তোমার আমলের সঞ্চয়?
এই দুনিয়ার চটকদারি চোখ ধাঁধানো আয়োজন
ভোগবিলাসে মত্ত মানুষ মেটায় শুধু প্রয়োজন।
দিন চলে যায় দিনের মতো
রাতের প্রহর হয় যে গত
ঘুম তবু ভাঙে না কারো বিবেকের তাড়ায়।।
এই দুনিয়া পান্থশালা আমরা সবাই মেহমান
ফিরতে হবে নিজ বাড়িতে নিশ্বাসে যেই পড়বে টান।
কোন খেয়ালে আছো রে মন
জন্মমৃত্যু এই তো জীবন
শূন্য পড়ে থাকবে তোমার দুনিয়ার কামাই।।
ইসরাফিলের শিঙ্গাধ্বনি
ইসরাফিলের শিঙ্গাধ্বনি শুনেই টলমল
চলতে শুরু করবে পাহাড় দেখছ যা নিশ্চল।
উলটে যাবে সৃষ্টিজগৎ সূর্য যাবে নিভে
আকাশ হবে বিদীর্ণ তা ধওে কে রাখিবে!
মানুষ হয়ে পড়বে ভীত
সৃষ্টিজগৎ প্রকম্পিত
উগড়ে দেবে রত্নখনি পৃথিবীর ভূতল।।
শেষবিচারে সব মানুষই হবে একত্রিত
সন্দেহ নেই সেই দিবসের, সবাই হবে ধৃত।
পড়বে তুমি আমলনামা
পাবে না কিছুতেই ক্ষমা
পূর্ণভাবেই দেয়া হবে তোমার কর্মফল।।
খোলস
এই পৃথিবীর যা কিছু সব খোলস দিয়ে ঢাকা
খোলসটাকেই জীবন ভেবে চলছে জীবন চাকা।
চলতি পথে মুখ ও মুখোশ খুলছে কতশত
ভাবনা আসে, এই কী জীবন কাটছে নিজের মতো!
খোলস ভেঙে দেখতে যে পাই
আল্লাহ ছাড়া আর কিছু নাই
শূন্য থেকে নিখিল নভে তার ছবিটাই আঁকা।।
জগৎ ঘুরে পথে পথে খোলস ভাঙার জ্ঞান
শিখতে গিয়ে পেলাম খুঁজে পবিত্র কোরআন।
খুলল জ্ঞানের দরজাগুলো
অবিশ্বাসে পড়ল ধুলো
খোদার নূরের রওশনে চোখ এবার ফিরে তাকা।।
সংবিধান
একদিন এই বিশ্ব শাসন করবে মুসলমান
কোরান হবে সেই বিশ্বের একক সংবিধান।
বিশ্বজগৎ চলছে মেনে মহান যে আইন
মানুষও চলবে তা মেনে আসবে সুখের দিন।
মানুষ যে প্রকৃতির সন্তান
কোরান হলো তার সংবিধান
এই সত্য একটা সময় হবেই যে প্রমাণ।
অনুসরণ করবে মানুষ সেই সে প্রকৃতি
যার ওপরই আল্লা দিলেন মানব আকৃতি।
সৃষ্টিআইন হয় না বদল
মানুষ পাবে মানুষ আদল
আত্মগত উপলব্ধি সরল পথের জ্ঞান।।
কারণ ছাড়া হয় না কার্য এটাই পরম জ্ঞান
কার্যকারণ সূত্র ধরেই এগোয় যে বিজ্ঞান।
মানুষ সৃষ্টি নয় অনর্থক
খোদার আনুগত্যে সার্থক
সত্যজ্ঞানে উদ্ভাসিত হবে মানব প্রাণ।।
মানুষ এখন কাঁদছে প্রভু
মানুষ এখন কাঁদছে প্রভু কারণ মানুষ মূর্খ
জ্ঞান অর্জনে আগ্রহ দাও, ঘোচাও তাদের দুঃখ।
সব মানুষই শান্তি খোঁজে অথচ নেই জ্ঞান
বুঝতে তারা পারে না কেউ প্রকৃতিবিজ্ঞান।
মানুষ ছাড়া বিশ্বে সবাই
চলছে মেনে শৃঙ্খলা ভাই
এই নিয়মের বাইরে চলার পথেই যে দুর্ভিক্ষ।।
শান্তি খুঁজেও সরল পথের পথ হাঁটে কয়জন?
জীবনবিধান পেয়েও হাতে মানছে না একজন!
সেই বিধানের বর্ণনা পাই
আল কোরানের পাতায় পাতায়
এই কোরানের সংবিধানই সুরক্ষিত দুর্গ।।
কবির অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সঙ্গীতগুলো ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে