আবু তাহের সরফরাজের সাতটি হামদ

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৯, ২০২০

তোমার নামে

তোমার নামে সূর্য ওঠে পূব আকাশে মুখ তুলে
তোমার নামে সূর্য ডোবে অন্ধকারের ভাঁজ খুলে।

তোমার নামের তসবিহ জপে চাঁদ-সেতারা আসমানে
তোমার বহিঃপ্রকাশ দেখি এই জগতের সবখানে।
তুমি শুরু তুমিই যে শেষ
আর সকলই স্বপ্ন আবেশ
তোমার নূরের কিস্তি ভাসে সাত আকাশের ওই কূলে।।

লক্ষকোটি গ্যালাক্সি আর নীহারিকার ওই পথে
ফেরেস্তারা যায় ও আসে কী জানি কার সাক্ষাতে!
চন্দ্র সূর্য গ্রহতারা
কক্ষপথে ঘুরছে তারা
নিয়ম মেনে চলছে সবাই, মানুষ শুধু যায় ভুলে।।

আঁধার রাতের মিনার

আঁধার রাতের মিনার চূড়ায় দিচ্ছে কে আজান
সেই সুরে ঘুম ভেঙে আমার কেঁদে ওঠে প্রাণ।

তারার ফুলের চাদর গায়ে ফেরেস্তাদের দল
ঘুরছে যেন আকাশপথে ডানায় মেঘের ঢল।
ডানার দোলায় হিম যে ঝরে
শীতকুয়াশায় আমার ঘরে
সেই শিশিরে ওজু কোরে করবো খোদার ধ্যান।

কী যেন এক শূন্যতাবোধ ছড়ায় আমার বুকে
অপূর্ণ এই আমার আমি জগতের সম্মুখে।
পূর্ণ যে জন তারই কাছে
যেতে আমার প্রাণটা নাচে
পূর্ণ হতে জায়নামাজে গাই যে তারই গান।।

মানুষ এখন কাঁদছে

মানুষ এখন কাঁদছে প্রভু কারণ মানুষ মূর্খ
জ্ঞান অর্জনে আগ্রহ দাও, ঘোচাও তাদের দুঃখ।

সব মানুষই শান্তি খোঁজে অথচ নেই জ্ঞান
বুঝতে তারা পারে না কেউ প্রকৃতিবিজ্ঞান।
মানুষ ছাড়া বিশ্বে সবাই
চলছে মেনে শৃঙ্খলা ভাই
এই নিয়মের বাইরে চলার পথেই যে দুর্ভিক্ষ।।

শান্তি খুঁজেও সরল পথের পথ হাঁটে কয়জন?
জীবনবিধান পেয়েও হাতে মানছে না একজন!
সেই বিধানের বর্ণনা পাই
আল কোরানের পাতায় পাতায়
এই কোরানের সংবিধানই সুরক্ষিত দুর্গ।।

হেদায়েতের নূর

হেদায়েতের নূর জ্বেলে দাও আমার বুকে প্রভু
তোমার স্মরণ থেকে যেন গাফিল না হই কভু।
 
তোমার দেয়া নিয়ম মেনে চলছে মহাবিশ্ব
পালন করে চলছে সবাই তোমারই উদ্দেশ্য।
মানুষ শুধু বেখেয়ালে
আটকে আছে ভ্রান্তিজালে
সে জাল ছিঁড়ে জ্ঞানের দরজা দাও খুলে হে প্রভু।।

জীবনপথে তোমায় ভুলে যাই যদি কখনো
স্নেহের পরশ দিয়ে তোমার দ্বীনের পথে টেনো।
সৃষ্টি আমি তাই অসহায়
স্রষ্টা তুমি সৃষ্টির সহায়
পাপ সাগরে ডুবে গেলেও ক্ষমা কোরো তবু।।

হেদায়েতের পথ

হেদায়েতের পথ দেখাতে আল্লাহ মেহেরবান
বেহেস্ত হতে দিলেন ধরায় পবিত্র কোরআন।

বিশ্বজগৎ সৃষ্টি যাহার তিনিই প্রজ্ঞাবান
সৃষ্ট সকল কিছুর স্বভাব তারই গোপন জ্ঞান।
যার যে স্বভাব সেই নিয়মে
চলছে সবাই জগৎধামে
মানুষই একমাত্র পারে ভাঙতে সেই বিধান।।

ইচ্ছাশক্তি দিলেন খোদা মানুষের ভেতর
দিলেন আরও ভালো-মন্দ বোঝারও অন্তর।

প্রতিনিধি কোরে খোদা পাঠালেন মানুষ
জ্ঞান অভাবে আজকে তারাই মূর্খ ও বেহুঁশ।
এই প্রকৃতির নিয়মরীতি
সৃষ্ট জগতের সম্প্রীতি
মানুষকে জানাতেই খোদা দিলেন যে কোরআন।।

পাপের কলস

পূর্ণ আমার পাপের কলস করবে কে বহন?
বেখেয়ালে আল্লাহ তোমায় করিনি স্মরণ।

আজান শুনেও জায়নামাজে দাঁড়াই না যে আমি
ছয়টি রিপুর কুমন্ত্রণার হই যে অনুগামী।
নিজ খেয়ালে ইচ্ছেমতো
সময় কাটে আমার যত
এই উদাসীর মনের লাগাম করো নিয়ন্ত্রণ।।

পাহাড় চূড়ায় মেঘের দেশে গর্জে ওঠে বাজ
জাহান্নামের আগুন থেকে পায় যেন সে ঝাঁজ।
এই প্রকৃতির জীব ও জড়ো
তোমার ভয়ে জরোসরো
মূর্খ আমি তাই বুঝি না জগতের ধরন।।

আমার সকল দুঃখে

আমার সকল দুঃখে খোদা তুমিই সান্ত্বনা
অক্ষরে তাই তোমার সিফাত করি গ্রন্থনা।

দুঃখরাতের অন্ধকারে আল্লাহ ধ্রুবজ্যোতি
আনন্দে তাই হৃদয় নাচে গুণি না লাভক্ষতি।
তার করুণায় যা কিছু পাই
তা ছাড়া আর কিছু না চাই
নতমুখে করি যে তার গুণের বর্ণনা।।

তকদিরে যা লেখা আছে ঘটবে তা নিশ্চয়
বিপদ এলে তাই করি না আমি কোনো ভয়।
বুকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস
ছাড়ব যেদিন জীবন-নিশ্বাস
তোমার দিদার পেলেই যে শেষ হবে যন্ত্রণা।।