আবু তাহের সরফরাজের ছয়টি প্রেমগীতি

প্রকাশিত : অক্টোবর ০২, ২০২০

মনের ভেতর মন

মনের ভেতর মন লুকানো
চিনতে তবু পারোনি
চোখের আড়াল আড়াল বলেই
আরেকটা মন ছাড়োনি।

এক নদীতে ডুব দিয়েছি
আর কেউ তা দেখেনি
সেই নদীটা গোপন ছিল
আড়াল তুমি রাখোনি।

যা ছিল সেই পাতালপুরে
কুড়িয়েছি ঘুরে ঘুরে
আমার সে ধন সহজলভ্য
এই সত্য হায়, বলোনি!

দেহনদী

তুমি আমার একটা নদী
যাও ভেসে জোয়ারে যদি
তীরে বসে থাকব একা
      অনন্তকাল নিরবধি।

ঢেউ ভাঙে ওই দেহে যখন
কাঁপতে থাকি আমি তখন
সাঁতার দিতে ইচ্ছে করে
তোমার দেহের তল অবধি।

তোমার হাতে হাত রাখিতে ইচ্ছে খুবই প্রাণে
তুমি আমার মনের মানুষ জগৎবাসী জানে।

জলের ঘ্রাণে কলমিলতা
ফুল হয়ে ফুটেছে যথা
সেই কূলে যেই ফুল হয়েছি
ভাঙল দেহে ঢেউয়ের গতি।

দেহঘর  

এক নদীতে ডুব দিল তিন সদাগর
তিরতিরিয়ে কাঁপে নারীর দেহঘর।

মোকাম ছিল আরেক ঘাটে
তিন সদাগর ফন্দি আঁটে
এই নদীতে ডুব দিয়ে রূপ
তুলব নিয়ে আরেক হাটে
ডুব দিয়ে যেই দেখল কুসুম
বৈঠা দিল তার ভেতর।

পাপড়ি খুলে ধরল নদী
ঢেউ দিতেছে নিরবধি
বৈঠা পেয়ে সঙ্গোপনে
তিরতিরিয়ে কাঁপছে মোদী
বৈঠা দিয়ে জল নামিয়ে
কাঁপছে কুসুম থরো থর।

হৃদকমল

সংসারে যে ফোটায় শত রঙের হৃদকমল
সেই জাদুকর চেনায় মানুষ আসল আর নকল
কী চমৎকার সাজাও রঙমহল দয়াল
কী চমৎকার সাজাও রঙমহল।

হাওয়ার ওপর রঙের বাড়ি
তার ভেতরে পুরুষ-নারী
কী বাহারে ঝলমল ঝলমল করে
অন্তরে এক আয়না আছে
মনের মানুষ দ্যাখায় কাছে
আসল রঙে মানুষ সে না ধরে
সুযোগ পেলে বদলে ফেলে মুখোশের আদল।

একই রূপের হাজার বরণ
রঙমহলের এমন গড়ন
সাধ্য কী আর চিনতে মানুষ পারে
আজ যে আপন কালকে সে পর
একটি বাড়ি হাজারটা ঘর
পাই কি মানুষ যখন খোঁজে যারে
আড়াল থেকে আরেক মানুষ হয় কিরে বদল।

পাখিমুগ্ধ বয়েস

হলুদিয়া পাখিরে আমার উড়াল দিল বনে
শতেক বৃক্ষে নীড় বান্ধিল নিশি সঙ্গোপনে।

পুষ্পরথি জাতক কুমার তৃষ্ণানদীর বাঁকে
ময়ূরাক্সক্ষী নাও সাজাইয়া রাধার তরে জাগে
শীত কুয়াশায় হয় রে সিনান দেহ মন্থনে।

প্রকাশিল নিঝুম চন্দ্র শঙ্খনদীর টানে
পাখিমুগ্ধ বয়েস আমার কাটিল বিজনে
প্রাণের দোসর নাই রে প্রাণে অন্তরাত্মা জানে।

তামাশা

আমরা যদি বেগুনি রঙের তামাশা হয়ে যাই
বেগুনখেতে সবুজরঙে ফুটব আবার সাঁই।

আমরা তো ভবে হেঁটে আর হেঁটে
দেখতেছি লীলা, পুথিটুথি ঘেঁটে
কেউ কেউ স্বয়ং
ছেড়ে যায় অহং
তার দ্যাখা প্রভু যেন ভবে পাই
বেগুনখেতে সবুজরঙে ফুটব আবার সাঁই।

বাঁধা আছে ভবে রীতি আর নীতি
মানুষের যা, তাই তার স্মৃতি
জগতের বাইরে
জ্ঞান কারো নাইরে
অনুমানে কত কথা লিখে যাই
বেগুনখেতে সবুজরঙে ফুটব আবার সাঁই।